আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভোররাতে ট্যাক্সি আটকে দুই বাংলাদেশি নাগরিকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠল কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে। চিকিৎসার জন্য পশ্চিমবঙ্গে যাওয়া বাংলাদেশের নাগরিক গোলাম সাকলাইন এবং মহম্মদ মোশারফের এমনই অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলালির মোড়ে।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, ট্রেন ধরার জন্য শিয়ালদহ স্টেশনে যাচ্ছিলেন তারা। সেই সময় এক পুলিশকর্মী ট্যাক্সি আটকে ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ওই টাকা কেড়ে নেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
পুলিশ সূত্রে পত্রিকাটির খবর, নভেম্বর মাসের ২১ তারিখে ঘটলেও ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসেছে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে। এদিন গোলাম সাকলাইন এবং মহম্মদ মোশারফ গোটা বিষয়টি কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা এবং যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) মুরলিধর শর্মাকে ইমেল করে অভিযোগ জানান। তার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়।
দুই পুলিশ কর্তার কাছে জানানো অভিযোগে সাকলাইন এবং মোশারফ জানিয়েছেন, চিকিৎসার জন্য তারা ভারতে এসেছিলেন। ক্লোন ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে মোশারফ গিয়েছিলেন মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তিনি কলকাতায় আসেন গত ২০ নভেম্বর। পরের দিন অর্থাৎ ২১ তারিখ ভোর ৪টা ২০ মিনিটে শিয়ালদহ থেকে গেদে যাওয়ার ট্রেন ধরার কথা ছিল মোশারফের। তাই তিনি ওই দিন ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ হোটেলের ঠিক করে দেওয়া একটি ট্যাক্সিতে আত্মীয় গোলাম সাকলাইনকে সঙ্গে নিয়ে শিয়ালদহের উদ্দেশে রওনা হন।

বাংলাদেশের গাইবান্দার বাসিন্দা মোশারফের অভিযোগ, ওই দিন ভোরে ট্যাক্সি মৌলালির মোড় থেকে শিয়ালদহের দিকে বাঁ দিকে ঘোরামাত্র এক পুলিশকর্মী ট্যাক্সি দাঁড় করানোর নির্দেশ দেন। ওই ব্যক্তির পিছনেই ছিল ‘পুলিশ’ লেখা ভ্যান। ওই পুলিশকর্মী ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে মোশারফ এবং সাকলাইনের কাছে তাদের পরিচয় জানতে চান। মোশারফ বলেন, পরিচয় দিতেই ওই পুলিশকর্মী আমাদের কাছে পাসপোর্ট দেখতে চান। পাসপোর্ট দেখিয়ে তাকে জানাই যে, আমি ক্যান্সার রোগী। চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলাম মুম্বাই। রাজশাহীর বাসিন্দা সাকলাইনের অভিযোগ, এর পরেই আমাদের ভয় দেখাতে শুরু করেন ওই পুলিশকর্মী যে, আমরা কলকাতায় ছিলাম তা পুলিশকে জানাইনি কেন? মির্জা গালিব স্ট্রিটের যে হোটেলে আমরা উঠেছিলাম, সে কথাও বলি ওই পুলিশকর্মীকে।
ওই দুই বাংলাদেশি নাগরিকের অভিযোগ, এর পর ওই পুলিশকর্মী জিজ্ঞাসা করেন তাদের সঙ্গে কত টাকা আছে? গোলাম সাকলাইন বলেন, ২৭ হাজার বাংলাদেশি টাকা ছিল আমাদের সঙ্গে। ওই পুলিশকর্মী আমাদের কাছ থেকে ওই টাকা নিয়ে নেন। মোশারফের অভিযোগ, টাকা এবং পাসপোর্ট ফেরত চাইলে খাকি পোশাক পরা ওই পুলিশকর্মী আমাদের ভয় দেখান থানায় নিয়ে লক আপে আটকে রাখার। সাকলাইন বলেন, ওই পুলিশ কর্মী মোশারফের পেটের নীচে অপারেশনের জায়গায় ব্যান্ডেজ টিপে টিপে দেখছিলেন। আমি প্রতিবাদ করায় পাল্টা আমাদের থানায় নিয়ে গিয়ে মাদকের মামলা দিয়ে গ্রেফতার করার ভয় দেখান।
এ দিন মোশারফ বলেন, আমি হাত জোড় করে ওই পুলিশকর্মীকে টাকা ফেরত দিতে বলি। তাকে বলি, টাকা বেশি না থাকায় অস্ত্রোপচারের পরে কেমোথেরাপি করতে পারিনি। দেশে ফিরে টাকার জোগাড় করে ফের আসব। অভিযোগ, অনেক কাকুতিমিনতি করার পর ২৭ হাজার টাকার মধ্যে ৭ হাজার টাকা আর পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে ফের ওই পুলিশকর্মী দুই বাংলাদেশিকে শাসান, কাউকে কিছু জানালে ফল ভাল হবে না। বাকি ২০ হাজার টাকা ওই পুলিশকর্মী রেখে দেন বলে অভিযোগ। সাকলাইন বলেন, আমরা সে দিন খুব ভয় পেয়েছিলাম। তাই সে দিনই গেদে সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরে যাই। রোববার ফের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসি। এক বন্ধুকে গোটা ঘটনার কথা জানাই। তার পরামর্শেই ইমেইল করে জানিয়েছি কলকাতা পুলিশকে।
মোশারফ মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকালেই কেমোথেরাপির জন্য মুম্বইতে চলে যাবেন। তিনি বলেন, আমরা অসংখ্য বাংলাদেশি মানুষ চিকিৎসা এবং ব্যবসার প্রয়োজনে কলকাতায় আসি। কলকাতা পুলিশের ভরসাতেই রাস্তাঘাটে নির্ভয়ে ঘোরাফেরা করি। আমার একটাই আবেদন, তারা যেন ওই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে শাস্তি দেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।