জুমবাংলা ডেস্ক: নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণকে বাংলাদেশের জন্য একটি ‘গৌরবের বিষয়’ বলে অভিহিত করেছেন বিশ্বব্যাংকের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জুনাইদ কামাল আহমেদ।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবের বিষয়।’
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে বাংলাদেশে পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক জমকালো উদ্বোধনের আগে এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
জুনাইদ কামাল আহমেদ বলেন, ‘গত কয়েক বছরে দেশের যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং পদ্মা সেতু এই খাতকে আরও শক্তিশালী করেছে।’
আহমেদ আশা প্রকাশ করে বলেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জনের পাশাপাশি উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তির আওতায় বিশ্বব্যাংকের ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর কথা ছিল।
কিন্তু ঋণদানকারী সংস্থাটি হঠাৎ করে প্রতিশ্রুত তহবিল দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলে যে, বিশ্বব্যাংক এই নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত পরিকল্পিত দুর্নীতির “বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ” খুঁজে পেয়েছে।
অবশ্য কানাডার একটি ফেডারেল আদালত এবং বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন পৃথক তদন্তে পরবর্তীকালে অভিযোগের কোনো ভিত্তি খুঁজে পায়নি। তখন বাংলাদেশ এই প্রকল্পে যেকোনো ধরনের বিদেশী আর্থিক সহায়তা বাতিল করে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি এগিয়ে নেয়ার কথা বলে।
বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এঁই কর্মকর্তা অবশ্য বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ককে গভীর আখ্যায়িত করে বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।
আহমেদ বিশ্বব্যাংক গ্রুপের অধীনে থাকা পাঁচটি সংস্থার মধ্যে একটি বহুপাক্ষিক বিনিয়োগ গ্যারান্টি এজেন্সি (এমআইজিএ)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট (অপারেশনস)।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেম্বন আজ বলেছেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে বৈশ্বিক ঋণদানকারী সংস্থাটি খুশি।
মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা খুশি যে সেতুটি সম্পূর্ণ হয়েছে। এই সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ উপকৃত হতে যাচ্ছে বলে আমরা আনন্দিত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এর আগে বলেছিলেন যে, বিশ্বব্যাংককে অবশ্যই ‘ক্ষমা’ চাইতে হবে ও ‘দুঃখিত’ হতে হবে, কারণ তারা পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য অর্থায়ন বাতিল করে বাংলাদেশের সাথে ‘বড় অবিচার’ করেছে।
২০১৩ সালে, আওয়ামী লীগ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণের অনুরোধ প্রত্যাহার করে এবং ঘোষণা করে যে, তারা নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ করবে।
ওয়াশিংটনে আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অহংকার, গৌরব ও আত্মমর্যাদার প্রতীক।
রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে সেতুর কাজ সম্পন্ন করে দেশের ১৮ কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ করেছেন।
রাষ্ট্রদূত ইসলাম বলেন, দেশ-বিদেশে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত এবং নেতৃত্বের পাশাপাশি দৃঢ় সংকল্প ও মনোবলের কারণে দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেতুটি নির্মাণ করে সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন। এমন একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা ও সামর্থ্য বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের রয়েছে।
এর আগে ডেপুটি চিফ অব মিশন ফেরদৌসী শাহরিয়ার স্বাগত বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট জুনাইদ কামাল আহমেদ এবং নর্থ ক্যারোলিনা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডঃ এবিএম নাসির। এর আগে পদ্মা সেতুর উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।