অর্থনীতি ডেস্ক : নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় বাঙালী অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক অর্মত্য সেন ভারতীয় গণতন্ত্রের দুর্দশায় হতাশা প্রকাশ করে বাংলাদেশের ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দিক দিয়েই ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য নিউ ইয়র্ককে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এই কথা বলেন তিনি।
ওই সাক্ষাতকারে অর্মত্য সেন ভারতীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে তার প্রত্যাশা এবং ভয়ের জায়গাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
সাক্ষাতকারে তিনি ভারতীয় গণতন্ত্রের দুর্দশা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে ব্যাপক প্রশংসা করেন।
বিজেপির নেতৃত্বে ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদের উত্থানের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজ ভারতের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী চিন্তা। অথচ তাদেরকে থামানোর মতো শক্তিশালী কোনো সেক্যুলার মতাদর্শের গণতান্ত্রিক দল নেই। ভারতের সুপ্রিম কোর্টেরও সমালোচনা করে তিনি বলেন, ভারতের সর্বোচ্চ আদালতও গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদের অভিভাবক হতে পারেনি।
অর্মত্য সেন বলেন, মাত্র ১২ বছর আগে ২০০৭ সালে আমাদের একজন মুসলিম প্রেসিডেন্ট, একজন শিখ প্রধানমন্ত্রী এবং শাসক দলের একজন খ্রিস্টান নেতা ছিলেন। সেসময় সংসদের বেশিরভাগ সদস্য হিন্দু হলেও কেউ হিন্দুত্ববাদী চিন্তা চাপিয়ে দিতে চাননি। অথচ হঠাৎ করেই আজ আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে এসে পড়েছি যেখানে গরুর মাংস খাওয়ার কারণে একজন মুসলিমকে প্রকাশ্যেই নিপীড়ন এবং হত্যা করা হচ্ছে।
বহুমুখী আত্মপরিচয়ের সহাবস্থান এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রসঙ্গে অর্মত্য সেন বাংলাদেশের ব্যাপক প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ অনেক দিক থেকেই ভারতের চেয়েও বেশি সফল। আগে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ভারতের চেয়ে কম ছিলো। কিন্তু এখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৫ বছর বেশি। নারী শিক্ষার হারও বেশি বাংলাদেশে। আর ভারতের হিন্দু চিন্তায় ব্যাপকহারে যে সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার উত্থান ঘটেছে বাংলাদেশের মুসলিম চিন্তায় কিন্তু সেরকম সংকীর্ণতা নেই। বাংলাদেশে বহুমুখী আত্মপরিচয়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দেশটির এই অগ্রগতিতে ভুমিকা রেখেছে।
ভারতের সমাজও এমন বহুমুখী আত্মপরিচয়ের সহাবস্থান ছিলো। কিন্তু সেই সম্প্রীতিকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগে ১৯২০ এর দশকেও ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা বেশ শক্তিশালী ছিলো। মহাত্মা গান্ধীকে গুলি করেছিলো ফ্যাসিবাদী হিন্দু সংগঠন আরএসএস এর এক সদস্য।
কিন্তু তখন তারা ক্ষমতায় আসতে পারেনি। সেসময় আমরা তাদের ভয়ে ভীত ছিলাম না। কেননা তারা জনসমাজে অতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। কিন্তু তারাই এখন নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিশাল বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় বসেছে। এবং ভারতীয় সমাজের চারিদিকে জেঁকে বসেছে ভয়ের রাজনীতি। গণমাধ্যমগুলো থেকে শুরু করে আজ সবাই ভীত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।