জুমবাংলা ডেস্ক : ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ১৪ থেকে ১৭ নভেম্বর অর্থাৎ চার দিনের ওই সফরে তিনি ঢাকা থেকে ৩৫ মাইল দক্ষিণে একটি মডেল গ্রামে গিয়ে মুড়ি ভাজা, লেপ-তোশক সেলাই এবং মাটির বাসন প্রস্তুতির মতো হস্তশিল্পের কাজ দেখেন।
রানির ওই রাজকীয় সফরকালে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ১৮ মাইল সড়কের বিভিন্ন স্থানে ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক’ লেখা রঙিন ব্যানার এবং বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের পতাকা শোভিত ছিল। সফরকালে রানি জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অমর শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
রানি ও যুবরাজ ফিলিপ ঢাকায় ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ সেন্টার পরিদর্শন করেন। ওই সময়ের স্বাস্থ্য পরিচালক ড. সুলতানা খানম রানিকে সেখানে নিয়ে যান। রানির বাংলাদেশ সফরের পর ব্রিটিশ রাজ পরিবারের আরও সদস্য প্রিন্স ওয়েলস, প্রিন্সেস ডায়না বাংলাদেশ সফর করেন।
তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে চার দিনের সফরই স্বাধীন বাংলাদেশে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের একমাত্র সফর। এ সময় তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছিলেন। পাশাপাশি একটি স্বনির্ভর গ্রাম দেখতে ১৬ নভেম্বর তিনি ঢাকা থেকে ট্রেনে গাজীপুরের শ্রীপুর স্টেশনে যান। এ সময় তার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট এরশাদও সফরসঙ্গী ছিলেন। স্টেশন থেকে গাড়িতে চেপে শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রামে যান।
রাণীর সফর উপলক্ষে গ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছিল। কাঁচা রাস্তাগুলো রাতারাতি পাকা করা হয়। আর গ্রামে প্রথমবার বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়, যা ওই গ্রামে কলকারখানা গড়ে উঠতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে।
গ্রামের একটি কাঁঠাল বাগানে স্থানীয় নারীদের সঙ্গে গল্প করেন রানি। এ সময় এক নারী রানিকে রূপার চাবি উপহার দিয়েছিলেন। ওই চাবিটি প্রতীকি অর্থে দেওয়া হয়। এর অর্থ হচ্ছে যেকোনো সময় রানি বৈরাগীরচালা গ্রামে আসতে পারবেন। তার জন্য গ্রামের সব দরজা সর্বদা খোলা।
ওই গ্রামে রানির যাওয়ার মূল কারণ ছিল তিনি একটি স্বনির্ভর গ্রাম পরিদর্শন করতে চেয়েছিলেন। রানিকে পুকুরে মাছ ধরা, মুড়ি বানানোসহ বিভিন্ন গ্রামীণ শিল্প দেখানো হয়।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সফর করেন জন মেজর, টনি ব্লেয়ার, ডেভিড ক্যামেরন। তারা বাংলাদেশকে দারিদ্র্য ক্লিষ্ট, বন্যা ও ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ভাবমূর্তির দেশ থেকে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য মডেল হিসেবে গড়ে তোলায় অনুপ্রেরণা জোগান। পরিবর্তনের এই পথে অনুপ্রেরণা দেওয়ার সোপান তা-ই রচনা করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
সেই সফরের কথা তিনি ভুলে যাননি। বাংলাদেশের জন্য রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্তরে রয়েছে অফুরন্ত ভালোবাসা। তার সেই ভালোবাসার পথ ধরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্পর্কের সোপান রচিত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। আশির দশকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বাংলাদেশ সফর করেন। তারপর সেই সূত্র ধরে একাধিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তিনি বাংলাদেশের জনগণের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগেও ১৯৬১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে দেওয়া শুভেচ্ছা বাণীতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার। এটা আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি। ৫০ বছর আগে এটি রচিত হয়েছিল।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।