রাজধানী ঢাকার দূরত্ব মাপা হয় সময়ের বিবেচনায়, কিলোমিটারের হিসাবে নয়। বলা হয়, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে কত মিনিট বা কত ঘণ্টা লেগেছে। কখনো বলা হয়, তীব্র যানজটে পুরো সকাল বা সন্ধ্যা কেটে গেছে। এ শহরের দুই কোটির বেশি মানুষকে রাস্তায় নেমে প্রতিদিন ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়।
এই ক্রমশ জটিল সমস্যার সমাধানে দেশে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের জন্ম হবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই সমস্যা মোকাবিলায় দেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘পাঠাও’। ২০১৫ সালে এই স্টার্টআপের যাত্রা শুরুর পর তা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ‘পাঠাও’ নামটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে ঢাকার বাসিন্দাদের সেবা দেওয়ার লক্ষ্য। শহরের রাস্তা-অলিগলির গোলকধাঁধায় বিশৃঙ্খলভাবে যান চলাচলের মধ্যেও গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সহায়তা করা এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য।
‘পাঠাও’র দুই বছর আগে তথা ২০১৩ সালে ‘চালডাল’ নামে আরেকটি স্টার্টআপ গ্রাহকসেবা নিয়ে আসে। কীভাবে সহজে নিত্যপণ্য কেনা যায় এর পথ দেখানো হয়। ‘পাঠাও’র দুই বছর আগে তথা ২০১৩ সালে ‘চালডাল’ নামে আরেকটি স্টার্টআপ গ্রাহকসেবা নিয়ে আসে। কীভাবে সহজে নিত্যপণ্য কেনা যায় এর পথ দেখানো হয়।
আজ এক দশক পর ঢাকায় এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন যিনি একবারের জন্যও ফুডপান্ডা বা পাঠাও ব্যবহার করেননি। তবে এই স্টার্টআপগুলো কি সত্যই সফল?—এমন প্রশ্নের জবাব পাওয়া কঠিন। তারা কি প্রচুর টাকা আয় করতে পারছে? এক বিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারছে? দেশে এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্টার্টআপ মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে বাজারে আসে।
ই-কমার্স, খাবার সরবরাহ, লজিস্টিকস, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও ডিজিটাল কনটেন্টের মতো জনপ্রিয় খাতগুলোয় গ্রাহকের সংখ্যা এক কোটিরও কম থাকায় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার সীমিত।মোবাইলে আর্থিক সেবা দেওয়া অপর প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ এই খাতকে কলঙ্কিত করেছে। মাত্র পাঁচ বছরে নয় কোটি গ্রাহককে আকৃষ্ট করলেও প্রতিষ্ঠানটি এখন বিতর্কিত। ‘পে লেটার’ ব্যবস্থার মাধ্যমে পাঠাও দেশে প্রথম পণ্য কেনার পর টাকা দেওয়ার সুযোগ করে দেয়।
রাইড-শেয়ারিং স্টার্টআপ পাঠাও ৩ লক্ষ মোটরসাইকেল রাইডারের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করেছে। সবার জন্য বিনামূল্যে শিক্ষামূলক কনটেন্ট নিয়ে টেন মিনিট স্কুল অনলাইন এডুকেশন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মোট ৬.৭ মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছেছে, যার মধ্যে এখনো প্রতি মাসে প্রায় ৩.২ মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে শিক্ষা গ্রহণ করছে। আই ফার্মার ১.১২ মিলিয়নেরও বেশি কৃষককে প্রায় ২.৪২ বিলিয়ন টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে, যা কৃষি উৎপাদনশীলতা ব্যাপকভাবে উন্নত করেছে।
একজন উদ্যোক্তার আইডিয়া ব্যবসায় পরিণত করা বিশাল কাজ। আর প্রথম উদ্যোগ হলে তা হয় সম্পূর্ণ অচেনা ও বন্ধুর। তাদের প্রয়োজন হয় অর্থ, জায়গা, তথ্য, মানবসম্পদ ইত্যাদি। প্রয়োজন বুদ্ধি, পরামর্শ, জ্ঞান ও নেটওয়ার্ক। একজন তরুণ ও নবীন উদ্যোক্তার পক্ষে এসব জিনিস জোগাড় করা সম্ভব নয়। কিছু হৃদয়বান ব্যক্তি আইডিয়া, সিড বা প্রাথমিক পর্যায়ে বিনিয়োগ করে থাকেন, তাঁদের অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর বলে। তাঁদের বিনিয়োগ করা টাকার পরিমাণ কম থাকে। বাংলাদেশেও অনেক অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর আছেন।
বাংলাদেশ অ্যাঞ্জেল নেটওয়ার্ক নামে তাঁদের একটি প্ল্যাটফর্ম ছিল। সেটি এখন ততটা সচল নয়। স্টার্টআপে অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের বিনিয়োগ আয়করের জন্য গ্রহণযোগ্য বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হওয়া প্রয়োজন।ইনকিউবেশন সেন্টার নবীন উদ্যোক্তাকে হাতেকলমে সহায়তা করে। শিক্ষকেরা বুদ্ধি ও পরামর্শ দেন। ইনকিউবেশন সেন্টারগুলো সাধারণত কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে থাকে। এই সেবার বিনিময়ে স্টার্টআপের পক্ষে অর্থ প্রদান করা সম্ভব না হলে শেয়ার দেওয়ারই প্রচলন।
করপোরেটদের পক্ষে উদ্ভাবন দুরূহ। কারণ, উদ্ভাবনের জন্য প্রয়োজন স্বাধীনতা ও শিথিল নিয়মকানুন। স্টার্টআপরা খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাদের কোনো আইডিয়া কাজ না করলে নতুনভাবে শুরু করতে পারে। তাদের ব্যয়ও অনেক কম। করপোরেটরা তাই স্টার্টআপের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করলে উভয়ের লাভ হবে। বিদেশে করপোরেটরা ভিসি ফার্মের মাধ্যমে তাদের কৌশলগত সুবিধার স্টার্টআপে অর্থায়ন করে। বাংলাদেশেরা করপোরেটরা সেভাবে চিন্তা করতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।