বাংলাদেশে আগের সরকারের আমলে সংঘটিত গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়েরকে “জবাবদিহিতার পথে এক ঐতিহাসিক অগ্রগতি” হিসেবে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক। তিনি বলেন, “দেশে এই প্রথম জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে—এটি নিহতদের ও তাদের পরিবারের জন্য এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।”
বুধবার (১৫ অক্টোবর) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই মন্তব্য করেন হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত সপ্তাহে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল টাস্ক ফোর্স ফর ইনট্রোগেশন সেল এবং যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেলের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গুম ও নির্যাতনের সঙ্গে সম্পর্কিত দুটি মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করেছে। ট্রাইব্যুনাল এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন সাবেক, এমনকি কিছু কর্মরত সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই)-এর সাবেক মহাপরিচালক এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কয়েকজন প্রাক্তন কর্মকর্তা।
এর আগে গত শনিবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, তারা পূর্ববর্তী প্রশাসনের আমলে সংঘটিত গুরুতর অপরাধের অভিযোগে এক ডজনেরও বেশি কর্মকর্তাকে আটক করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান এ বিষয়ে বলেন, “সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ফৌজদারি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে অভিযুক্তদের দ্রুত উপযুক্ত বেসামরিক আদালতে হাজির করা জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি আহ্বান জানাচ্ছি—আন্তর্জাতিক আইনে নির্ধারিত যথাযথ প্রক্রিয়া ও সুষ্ঠু বিচারের সর্বোচ্চ মানদণ্ড কঠোরভাবে অনুসরণ করা হোক। এসব সংবেদনশীল মামলায় ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও অপরিহার্য।”
জাতিসংঘের বিবৃতিতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, গত বছরের ছাত্রনেতৃত্বাধীন ব্যাপক বিক্ষোভের পর প্রকাশিত জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্টেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ীদের আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী জবাবদিহির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছিল।
২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে ‘জোরপূর্বক গুম কনভেনশন’ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো “জোরপূর্বক গুম” আনুষ্ঠানিকভাবে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
ভলকার টুর্ক বলেন, “গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা শুধু আইনি অগ্রগতি নয়, এটি ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়ের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।” তিনি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে বিপুলসংখ্যক অনিষ্পন্ন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বানও জানান।
এর মধ্যে কিছু মামলা আগের প্রশাসনের সময় দায়ের করা। তিনি বলেছেন, প্রতিটি মামলায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও ন্যায্য নিষ্পত্তি এবং নির্বিচারে আটক থাকা ব্যক্তির মুক্তি গুরুত্বপূর্ণ।
এর মধ্যে জোরপূর্বক গুম থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি, সাংবাদিক এবং সাবেক সরকারের সমর্থক হিসাবে বিবেচিত ব্যক্তিসহ ভিত্তিহীন অভিযোগের মুখোমুখি হওয়া অন্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের গুরুত্ব যাই হোক না কেন, আদালতে কোনও মামলায় মৃত্যুদণ্ড না দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হাইকমিশনার।
তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ছাড়াও বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো পথ হলো সত্য বলা, ক্ষতিপূরণ, নিরাময় ও ন্যায়বিচারের একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া। মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও এ ধরনের নিপীড়ন যেন আর না ঘটে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আমি এখনকার উদ্বেগগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের নিরিখে মোকাবিলার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।