জুমবাংলা ডেস্ক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বেশিরভাগ ভিডিও ভুয়া ও গুজব। এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসির ফ্যাক্ট চেকাররা। তারা জানান, ভারত থেকে বেশিরভাগ ভিডিও ছড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশের এই পরিস্থিতির মধ্যে দিল্লির গাজিয়াবাদের একটি বস্তির বাসিন্দাদের ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে হামলা চালিয়েছে, স্থানীয় উগ্র-হিন্দুরা। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তাদের তাবু, ছাউনিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। দিল্লির ঘটনা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে হিন্দুদের অত্যাচারের অভিযোগ তুলে, মারধর করা হচ্ছে স্থানীয়দের।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বলছে, হাসিনা সরকার পতনের পর বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের যে সব ছবি ছড়িয়েছে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে, তার বেশিরভাগই ভুয়া ও গুজব।
সংবাদমাধ্যমটির ফ্যাক্ট চেকাররা জানান, হিন্দুদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার হচ্ছে বলে যে সব ভুয়া পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল, তার বেশিরভাগই ভারতীয় বিভিন্ন অ্যাকাউন্ড থেকে পোস্ট করা হয়েছে। কিছু গুজব ছড়ানো হয়ে, বাংলাদেশের ভেতর থেকেও। তথ্য যাচাই করতে গিয়ে বিবিসি দেখেছে, শুধু হিন্দু নয়, ভাঙচুর আর জালাও পোড়াও হয়েছে মুসলমানদের ঘরবাড়িতেও। এসব ঘটনা ধর্ম নয়, বরং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছে। যাকে ভারত থেকে সাম্প্রদায়িক রঙ দেয়া হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের সহিংসতা নিয়ে ছড়িয়ে পড়া বেশকিছু ভিডিও ও ছবি যাচাই করেছে এএফপি’র ফ্যাক্ট চেকার কদরুদ্দিন শিশির। তিনি অন্তত ২০টি ভূয়া তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। এসব তথ্যের আসল ঘটনা উম্মোচন করে তিনি লিখেছেন, প্রকৃত ঘটনার পাশাপাশি ব্যাপক সংখ্যক ভুয়া খবর, ছবি, ভিডিও ফেসবুক, এক্স, ইউটিউব ও টিকটকে ছড়িয়েছে।
এ সময় সংখ্যালঘু নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি দাবিতে ছড়ানো ভুয়া কন্টেন্টের একটা তালিকা পোস্ট করেছেন তিনি। পরবর্তীতে এগুলো আপডেট হতে থাকবেও জানিয়েছেন তিনি।
ভুয়া দাবি ১: বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা হিন্দু ব্যক্তিকে ধরে গুলি করছে বলে একটি দাবি করা হয়েছে। সেটি আসলে ভুয়া।
ভুয়া দাবি ২: হিন্দু পরিবারের শিশুসহ হত্যা করার দাবি করা হলেও মূলত তা ভুয়া।
ভুয়া দাবি ৩: হিন্দু মেয়েকে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা ধর্ষণ করেছেন দাবি করে একটি তথ্য ছড়ানো হয়েছে। তবে এটিও ভুয়া।
ভুয়া দাবি ৪: হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণের পর অন্তর্বাস নিয়ে উল্লাস করার দাবিতে একটি ফেসবুক পোস্টে। তবে দাবিটি ভুয়া।
ভুয়া দাবি ৫: নোয়াখালীর সেনবাগে হিন্দু মেয়েকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে বলেও তিনটি দাবি করা হয় ফেসবুক ও এক্সে করা পোস্টে। তবে দাবিটি ভুয়া।
ভুয়া দাবি ৬: হিন্দু ব্যক্তিকে পানিতে চুবিয়ে হত্যার দাবি করেছেন একজন এক্স ব্যবহারকারী। তবে দাবিটি ভুয়া।
ভুয়া দাবি ৭: বাংলাদেশি হিন্দু নারীর হাতুড়ি হাতে প্রতিরোধের একটি ভুয়া দাবি করা হয়েছে।
ভুয়া দাবি ৮: ইনানী সমুদ্র সৈকতে হিন্দুদের লাশ বলেও একটি ভুয়া দাবি করা হয়েছে।
ভুয়া দাবি ৯: হিন্দু নারীকে কান ধরে উঠবস করানো হয়েছে দাবিতে এক্সে পোস্ট করা হয়েছে, তবে দাবিটি ভুয়া।
ভুয়া দাবি ১০: হিন্দু দোকানে আগুনের একটি দাবি ভুয়া বলে ফ্যাক্ট চেকে ধরা পড়েছে।
ভুয়া দাবি ১১: ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি হিন্দুরা জড়ো হয়েছে বলে দাবি করা হয়, তবে এই দাবিও ভুয়া।
ভুয়া দাবি ১২: বাংলাদেশে হিন্দু মেয়েকে পিলারে বেঁধে নির্যাতনের দাবিতে এক্সে দাবি করা হয়। তবে এটিও ভুয়া দাবি।
ভুয়া দাবি ১৩: হিন্দু মেয়েকে পুকুরে ফেলা দেয়ার দাবিতে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। তবে এই দাবিও ভুয়া।
ভুয়া দাবি ১৪: জ্বলন্ত মন্দিরের ছবি প্রচার করে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের বলে দাবি করা হয়। তবে এই দাবিটি ভুয়া। তথ্য যাচাইয়ে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে নির্মিত ছবি।
ভুয়া দাবি ১৫: হিন্দু মেয়েকে বেঁধে রাখার দৃশ্যকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের বলে দাবি করা হয়েছে।
ভুয়া দাবি ১৬: ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়। তবে আসল ঘটনা ভিন্ন।
ভুয়া দাবি ১৭: হিন্দু ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার দাবি করা হলেও তা ভুয়া।
ভুয়া দাবি ১৮: বাংলাদেশে মন্দিরে আগুনের ভিডিও দাবিতে ছড়ানো ঘটনাটিও ভুয়া বলে দেখে গেছে।
ভুয়া দাবি ১৯: ৫০০ হিন্দু হত্যা, শত শত নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে, তবে এমন কোন তথ্য মূলধারার মিডিয়া বা হিন্দু অধিকার সংগঠনগুলোও দাবি করেনি।
ভুয়া দাবি ২০: বাংলাদেশে হাসিনার পলায়ন পরবর্তী ঘটনায় মন্দির ভাঙচুরের ছবি বলে দাবিটিও ভুয়া।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।