জুমবাংলা ডেস্ক : ১৯৯৯ সালের শেষদিক। তখন ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তখন বাংলাদেশ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছে। বিশ্বকাপে গিয়েও হইচই ফেলে দিয়েছে। শক্তিশালী পাকিস্তান আর তুলনামূলক দুর্বল দল স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে। টেস্ট স্ট্যাটাসের দাবি জোরালো হয়েছে। এমন এক মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের ‘ডিরেক্টর অব কোচিং’ হয়ে আসলেন এডি বার্লো। যার মাথাভর্তি ছিল পরিকল্পনা।
আইসিসি ট্রফিতে দারুণ পারফর্মেন্স দেখিয়ে একটি দেশ যখন টেস্ট মুকুট পরার দ্বারপ্রান্তে তখন বাংলাদেশ আগমন তার। ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে এসে সেই অবিস্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী হন কোচ এডি বার্লো। টেস্ট মর্যাদা পেতে চলা একটা দলের কোচিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাকে। বাংলাদেশকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছিলেন তিনি। সস্ত্রীক আসেন বাংলাদেশে। অবশেষে ২০০০ সালের ২৬ জুন টেস্ট মর্যাদা পেল বাংলাদেশ। গতকাল ২৬ জুন সেই টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির ২০তম বর্ষপূর্তি হলো।
কিন্তু দূর্ভাগ্য বার্লোর। জীবন তার সঙ্গে কঠিন উপহাস করেছে। আমিনুল ইসলাম বুলবুলরা যখন ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন, তখন হুইল চেয়ারে বসে শিষ্যদের কীর্তি দেখতে হয়েছে বার্লোকে। দেখেছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুলের দুর্দান্ত ১৪৫ রানের অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরি। কিন্তু হঠাৎ হুইল চেয়ার কেন? এই প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানেন না, বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের আগে তিনি মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের শিকার হয়েছিলেন। আইসিইউতে রাখা হয়েছিল তাকে। এই কারণে তিনি চলাফেরার ক্ষমতা হারান।
তাই বলে শিষ্যদের এমন ঐতিহাসিক মুহূর্ত মিস করবেন তিনি? তাই হুইল চেয়ারে করে সৌরভ গাঙ্গুলীর শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে শিষ্যদের পরাক্রম দেখতে মাঠে এসেছিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৪০০ করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১। ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে গেলেও তার চোখেমুখে ছিল তৃপ্তির হাসি। অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশ যা করে দেখিয়েছে সেটাই তো অনেক! এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে যতটা এগিয়ে গেছে, তার অনেক পরিকল্পনা এই বার্লো দিয়ে গেছেন।
২০০১ সালে বাংলাদেশকে বিদায় জানান তিনি। তিনি তখনও সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। চিকিৎসার জন্য অর্থ সংকটও ছিল। তার ইনসিওরেন্স কম্পানি চিকিৎসা বীমা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ওই পরিস্থিতিতে তিনি তার ওয়াইন তৈরির ফার্মটি বিক্রয় করে দিতে বাধ্য হন। বাংলাদেশ ছাড়ার সময় বিসিবি ভবনে হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়ে তার স্ত্রী ক্যালি বার্লো চোখ মুছছিলেন।
এ দেশকে খুব ভালোবাসতেন তিনি। ভালোবাসতেন বাংলাদেশের মানুষকে। তাই ছেড়ে যেতে কষ্ট হয়েছিল তার। অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে আরও ৫ বছর বেঁচে ছিলেন তিনি। সব সময় তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের খোঁজ-খবর রাখতেন। গণমাধ্যমে ইতিবাচক কথা বলতেন। সবাইকে কাঁদিয়ে অবশেষে ২০০৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অনন্তলোকে যাত্রা করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই অকৃত্রিম বন্ধু। পেছনে পড়ে থাকে বাংলাদেশের প্রতি তার ভালোবাসার ইতিহাস আর, বিদায়কালে সেই কান্না…।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।