জুমবাংলা ডেস্ক: ভারতীয় বিএসএফ বলছে, তারা মেঘালয়ের ওয়েস্ট জৈন্তাপুর হিল ডিসট্রিক্ট এলাকা থেকে সোমবার রাতে প্রায় ২০ হাজার কেজি শুকনো মটরশুঁটি উদ্ধার করেছে। খবর বিবিসি বাংলার।
তাদের দাবি, এটি বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে সেখানে গেছে।
যদিও বর্ডার গার্ড কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরণের পাচারের ঘটনা তাদের জানা নেই এবং বাংলাদেশ থেকে এগুলো পাচারের সুযোগও নেই।
বিএসএফ-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের একটি বিশেষ অভিযানে দশটি ছোট ট্রাক ভর্তি মটরশুঁটি আটক করা হয় সোমবার রাতে।
এ নিয়ে সেখানকার গ্রামবাসীদের সাধে বিএসএফের সংঘাতে শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে বিএসএফ সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারে লোকেরা।
এসময় এক রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোঁড়া হয়েছে বলে বিএসএফ জানিয়েছে।
বিএসএফ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ওই এলাকায় প্রায়শই বাংলাদেশ থেকে মটরশুঁটি পাচারের ঘটনা ঘটছে এবং গত দু মাসে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৯২ কেজি শুকনো মটরশুঁটি তারা উদ্ধার করেছে।
এসব পাচারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আটকও করা হয়েছে আট জনকে।
এর আগে গত ডিসেম্বরের শুরুতে বিএসএফ মেঘালয়ের বাংলাদেশ-ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে ৫৮টি নৌকা ভর্তি প্রায় ৪৫ হাজার কেজি মটরশুঁটি আটক করেছিলো। প্লাস্টিক ব্যাগে মোড়ানো এসব মটরশুঁটি বাংলাদেশ থেকেই নেয়া হয়েছিল বলে তখনও বিএসএফ দাবি করেছিল।
মেঘালয়ের সাথে বাংলাদেশের ৪৪৩ কিলোমিটার সীমান্ত আছে এবং এই সীমান্ত এলাকাটি নদী, জঙ্গল ও পাহাড়ি এলাকা এবং এর সুযোগ নিয়েই পাচারের ঘটনা ঘটে বলে তখন বিএসএফের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছিলেন।
তারও আগে ২০১৯ সালের আগস্টে বিএসএফ আনুষ্ঠানিকভাবে বিজিবির কাছে অভিযোগ করেছিল যে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া চোরাচালানীরা তাদের একজন সদস্যের ওপর হামলা করেছে।
বিএসএফ হামলাকারী চোরাচালানীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেছিল তখন।
তার কয়েকদিন আগে তিনটি মটরশুঁটি ভর্তি নৌকা ভারতীয় সীমানা থেকে আটক করেছিল তারা। আরও দুটি নৌকা বাংলাদেশে পালিয়ে যায় বলে দাবি করা হয়েছিল।
তবে বাংলাদেশের বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন, চোরাচালান বন্ধে তারা কাজ করছেন এবং এগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশীদের সংশ্লিষ্টতা নেই বলেই মনে করেন তারা।
মটরশুঁটি পাচার হয় কেন
সিলেট অঞ্চলে বর্ডার গার্ডের একজন কর্মকর্তা বলছেন, মেঘালয়ের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে শুকনো মটরশুঁটি খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। এর চাহিদা সেখানে ব্যাপক। কিন্তু মানুষজনের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। ফলে কম মূল্যে পেতে তারা নিজেরাই এসব চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকতে পারে।
তিনি বলেন, ওই অঞ্চলের লোকজন এগুলো নিজেরাই সংগ্রহ করে থাকে এবং এ নিয়ে বিএসএফের সাথে তাদের সংঘাতের খবরও পাওয়া যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, মূলত মটরশুঁটি ও মসুর ডাল বেশি চোরাচালান হয়ে থাকে।
কর্মকর্তারা বলছেন, মেঘালয়ের বাজারে যে মটরশুঁটি আছে তার দাম তুলনামূলক অনেক বেশি, আবার ব্যবসায়ীরা আমদানি করে নিলেও দাম অনেক বেশি পড়ে।
এ কারণেই চোরাচালানের মাধ্যমে মটরশুঁটি যায় মেঘালয়ে- আবার সেখান থেকেও নানা ধরণের জিনিস বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
সিলেটের জৈন্তাপুরের উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ বশির উদ্দিন বলছেন, মটরশুঁটির বিষয়টি সেখানকার আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির বৈঠকেও এসেছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যায় কি-না সেটি আমাদের জানা নেই। তবে গরু, মটরশুঁটি, ইয়াবা, ফেন্সিডিল সহ নানা বিষয়ে প্রশাসন কাজ করছে- যাতে এগুলো অবৈধভাবে কেউ আনা-নেয়া না করতে পারে।
তবে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, মটরশুঁটি আমদানিতে সরকার অনেক ভর্তুকি দেয় আর কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সেগুলোই ভারতে পাচারের চেষ্টা করে কারণ মেঘালয়ে মটরশুঁটির দাম ও চাহিদা বেশি।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত আজমেরী হক বলছেন, মটরশুঁটি নিয়ে নানা সময়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটিতে আলোচনার পর তারা বিজিবিকে সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছেন।
তিনি বলেন, চোরাচালান বন্ধ করতে আমরা নিয়মিত অভিযান করি, টাষ্কফোর্স আছে তারাও অভিযান পরিচালনা করে।
জানা গেছে, জৈন্তাপুর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে রাখা প্রায় ৫০ বস্তা মটরশুঁটি উদ্ধার করেছে মোবাইল কোর্ট।
তারও আগে গত সাতই ফেব্রুয়ারি লামাপাড়া এলাকা থেকে এক হাজার বস্তা মটরশুঁটি উদ্ধার করে দশ লাখ টাকায় নিলাম করে সহকারী কমিশনার (ভূমি)র নেতৃত্বাধীন মোবাইল কোর্ট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।