অমিতাভ ভট্টশালী, বিবিসি বাংলা (কলকাতা): ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বুধবার মন্তব্য করেছেন যে বাংলার উন্নয়নে বাঙালীদের থেকে অবাঙালীদের অবদান বেশি। তার এই মন্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিআইএম এবং কংগ্রেস যেমন রাজনৈতিকভাবে মি. ঘোষের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছে, অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যমগুলিতেও প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন মি. ঘোষ।
বিজেপি নেতারা প্রতিদিন ভোরবেলা ‘চায়ে পে চর্চা’ নামে একটা রাজনৈতিক জনসংযোগ কর্মসূচি চালান। চা খেতে খেতে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
সেরকমই একটা কর্মসূচিতে মি. ঘোষ বুধবার গিয়েছিলেন কলকাতার ক্যানিং স্ট্রীট অঞ্চলে। এলাকাটাতে মূলত হিন্দিভাষীরাই থাকেন।
সেখানেই বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে তিনি ইতিহাস উদ্ধৃত করে মন্তব্য করেন, “ব্রিটিশ আমল থেকেই বাংলায় কাজ করতে, ব্যবসা করতে এখানে মানুষ এসেছেন। চটকলগুলোতে বা গঙ্গার দু’পারে কলকারখানায় কাজ করতে মূলত অন্য প্রদেশের মানুষরাই এসেছেন। বাংলার যা উন্নয়ন হয়েছে, তাতে বাংলার বাইরের মানুষেরই অবদান বেশি।”
এরপর তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, ওইসব মানুষরা যদি বহিরাগত হয় – তাহলে কি শাহরুখ খান এখানকার?
ঘটনাচক্রে শাহরুখ খান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর খুবই ঘনিষ্ঠ, তিনি আবার রাজ্য সরকারের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরও।
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দলের রাজ্য সভাপতি — যারা আবার সামনের বছর ভোটে জয়লাভ করার জন্য কোমর বেঁধে নেমেছে – সে রকম একজনের কাছ থেকে এই মন্তব্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ব্যাপক।
তৃণমূল কংগ্রেস – সিপিআইএম এবং কংগ্রেস সব দলই সমালোচনা করছে দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের।
তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য কল্যাণ ব্যানার্জী বলছিলেন, “বিজেপির কাছে যিনি আদর্শ — সেই শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী তো বাঙালীই ছিলেন।”
তাদের কথায় এটা বাঙালী-অবাঙালীদের মধ্যে বিভাজন করার চেষ্টা করছে বিজেপি।
আবার জাতীয় বাংলা সম্মেলন নামের একটি সংগঠন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম বা সুভাষচন্দ্র বসু সহ হাজার হাজার স্বাধীনতা সংগ্রামীর ইতিহাস তুলে ধরে প্রশ্ন করছে যে এদের কি বাংলার উন্নয়নে কোনও অবদান নেই!
সংগঠনটির এক নেত্রী তন্বী দাস বলছিলেন, “বাইরে থেকে যারা এখানে এসেছেন, তাদের বেশিরভাগই রোজগার করতে এসেছেন। কেউ ব্যবসা করেছেন, কেউ কায়িক শ্রম দিয়ে আয় করেছেন। কিন্তু তাতে বাংলার উন্নয়নে কোন অবদান তারা রেখেছেন।
সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে মি. ঘোষের মন্তব্য নিয়ে।
দিলীপ ঘোষ মাঝেমধ্যেই নানা ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য করে থাকেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্যটা কিছুটা হিসাব করেই করা হয়েছে। কারণ বহিরাগত এবং স্থানীয় রাজনীতিবিদ এ নিয়ে একটা বিতর্ক চলছেই যখন থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গে ভোট সামলানোর মূল দায়িত্বে অন্য প্রদেশ থেকে নেতাদের নিয়ে এসেছেন।
তৃণমূল কংগ্রেস বারবার করেই বলছে, বিজেপি এমনই একটা দল যে গোটা রাজ্যে ভোট সামলানোর নেতা নেই… বহিরাগতদের নিয়ে আসতে হয়।
লীপ ঘোষও বুধবার তার ওই বিতর্কিত মন্তব্যে সেটারও জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস যে ভোট কুশলীকে নিয়ে এসেছে, প্রশান্ত কিশোর – তিনিও তো বিহারের লোক।”
তবে বিজেপির এক নেতা বলছিলেন, “শুনতে হয়তো খারাপ লাগবে, এটাই বাস্তব যে দু-একজন মুখ্যমন্ত্রী বাদে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য কোনও বাঙালী নেতা কিছুই করেন নি।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।