আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে জয় পেয়েছেন দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মত দ্বিতীয় ধাপে নেয়া ভোটে এগিয়ে থাকায় রাত থেকেই উদযাপন করছেন তার সমর্থকরা।
রোববার রাতে আঙ্কারার শহরতলীতে নিজের প্রাসাদের বাইরে জড়ো হওয়া সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এরদোগান বলেন, ‘সাড়ে আট কোটি মানুষের পুরো দেশই আজ জিতেছে।’
এসময় কারাগারে থাকা কুর্দিশ এক নেতা এবং এলজিবিটি কমিউনিটিকে সমর্থন করে তৈরি করা নীতির সমালোচনাও করেছেন তিনি।
বিরোধী নেতা কামাল কিলিচদারুগ্লু অবশ্য এখনো স্পষ্টভাবে হার স্বীকার করেননি।
তিনি অভিযোগ করেছেন, এবারে ‘সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন’ হয়েছে।
তিনি আরো বলছেন যে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের রাজনৈতিক দল তার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সব রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেছে।
এরদোগানের গোছানো প্রচারণার বিপরীতে কামাল কিলিচদারুগ্লু টিকতেই পারেননি। প্রথম দফায় দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান ছিল ২৫ লাখের মত। দ্বিতীয় দফায়ও সেই ব্যবধান ছিল ২০ লাখের বেশি।
সাত বছর আগে ২০১৪ সালে তুরস্কে নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তন করা হয়। সেসময় থেকে সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে ভোট দিতে পারে মানুষ।
ভোটগ্রহণের দিন বেশ আগে থেকেই জয় উদযাপন শুরু করেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান।
বিকেলে তুরস্কের সবচেয়ে বড় শহর ইস্তাম্বুলে একটি বাসের ওপর দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন তিনি।
এরপর সন্ধ্যায় তার প্রাসাদের সামনে জড়ো হওয়া বিশাল জনসমাগমের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি দাবি করেছেন, সেসময় সেখানে তিন লাখ বিশ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিল।
এই নির্বাচনকে তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে এরদোগান বলেছেন, ‘কে জিতেছে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো তুরস্ক জিতেছে।’
তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে ব্যঙ্গ করে বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘বাই বাই বাই কামাল।’
আঙ্কারায় তার সমর্থকরাও পরে এভাবেই বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।
এর মধ্যে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়কে সমর্থন করে, এমন নীতির কঠোর সমালোচনা শোনা যায় এরদোগানের মুখে। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে তার আদর্শের বিরোধী এ ধরণের নীতি।
চূড়ান্ত ফলাফল এখনো নিশ্চিতভাবে ঘোষণা হয়নি। কিন্তু তুরস্কের সর্বোচ্চ নির্বাচন কাউন্সিল বলছে যে এরদোগানের বিজয় নিয়ে কোনো সন্দেহই আর নেই।
এই নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ২৫ বছর ধরে তুরস্কের ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলো।
বিজয় উদযাপনের লক্ষ্যে এদিন আঙ্কারায় প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের দরজা খুলে দেয়া হয় সাধারণ মানুষের জন্য। এতে যোগ দেন আঙ্কারার সব জায়গা থেকে সমর্থকরা জড়ো হন।
উপস্থিত অনেককেই দেখা যায় প্রাসাদের বাইরে ঘাসের ওপর তুরস্কের পতাকা রেখে নামাজ আদায় করতে।
এক রাতের জন্য তুরস্কের অর্থনৈতিক সঙ্কট ভুলে গিয়েছিল মানুষ।
উপস্থিতদের একজন বলছিলেন, ‘আমরা তার (এরদোগান) অর্থনৈতিক নীতিতে খুশি। পরের পাঁচ বছরে তিনি আরো ভালো করবেন।’
তবে প্রেসিডেন্ট এরদোগান নিজেও স্বীকার করেছেন যে মূল্যস্ফীতিই এখন তুরস্কের এক নম্বর ইস্যু।
প্রশ্ন উঠছে, তিনি এই সমস্যার সমাধান করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত কিনা।
তুরস্কে বছরে প্রায় ৪৪ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। দেশটিতে খাদ্য, বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য পণ্যের দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে।
এই মূল্যস্ফীতির জন্য এরদোগানের গতানুগতিক অর্থনৈতিক ধারা অনুসরণ না করা এবং সুদের হার না বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে দায়ী করে থাকেন সমালোচকরা।
ডলারের বিপরীতে তুরস্কের মুদ্রা লিরার দামেও রেকর্ড দরপতন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদেশী মুদ্রার চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
তবে এরদোগানের সমর্থকরা অর্থনৈতিক টানাপোড়েন নিয়ে খুব একটা চিন্তা করছেন না। তারা সারা বিশ্বে তাদের নেতার জনপ্রিয়তার বিষয়টি নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট।
সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে এরদোগানের কঠোর নীতিরও প্রশংসা করেন তার সমর্থকরা। তারা এক্ষেত্রে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলতে বোঝেন কুর্দিশ মিলিট্যান্টদের।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান ফেব্রুয়ারিতে তুরস্কের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের উন্নয়নেরও অঙ্গীকার করেছেন।
এরদোগানের এই বিজয়কে অনেকেই মুসলিম বিশ্বের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন।
ইস্তাম্বুলের তাসকিম স্কোয়ারে জয় উদযাপন করতে এসেছিলেন ফিলিস্তিনি নাগরিক আলা নাসার, তার গায়ে জড়ানো ছিল তুরস্কের পতাকা।
তিনি বলেন, এরদোগান নিজের দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি ‘আরব ও মুসলিম বিশ্বকেও সমর্থন করছেন।’
২০১৬ সালে বানচাল হয়ে যাওয়া এক সেনা অভ্যুত্থানের পর এরদোগান প্রধানমন্ত্রীর পদ বাতিল করেন এবং ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী হন।
এবারের নির্বাচনের আগে তার বিরোধীরা অঙ্গীকার করেছিল যে তারা এই পদ্ধতির পরিবর্তন করবে।
তুরস্কের বিরোধী দলগুলো এখন ২০২৪ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেবে।
সূত্র : বিবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।