জুমবাংলা ডেস্ক : নরসিংদীর নাগরিয়া কান্দিতে শেখ হাসিনা সেতুর কোলঘেঁষে মেঘনা নদীর অববাহিকায় দিগন্ত বিস্তৃত সূর্যমুখী ফুলের বাগান। বাগানটি এক নজর দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখাকে কেন্দ্র করে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন এলাকা। তরুণ উদ্যোক্তা তৌহিদুল ইস’লাম মাসুম সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। তার এই বাগানটি দেখতে এবং সেলফি তুলতে নরসিংদী জে’লা ছাড়া ও অন্যান্য জে’লা থেকে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজার হাজার ফুলপ্রে’মী দর্শনার্থী।
ইতোমধ্যেই নরসিংদী ও এর আশপাশের জে’লার ভ্রমণ-পিপাসু মানুষের পছন্দের শীর্ষস্থানে পরিণত হয়েছে এই সূর্যমুখী ফুলের বাগানটি। দর্শনার্থীদের ঢল থেকে ফুলের বাগান বাঁ’চাতে ইতোমধ্যেই বাগানে প্রবেশ করতে মা’থাপিছু ২০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে করে বাগান মালিকের প্রতিদিন ৮ হাজার টাকার উপরে আয় হয় বলে জানিয়েছেন বাগান মালিক তৌহিদুল ইস’লাম মাসুম।
মনোমুগ্ধকর এই পরিবেশে একটু সময় কা’টানোর জন্য আর হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুলের হাসির ঝিলিক দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসুক জনতা এসে ভিড় করছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,সূর্যমুখী ফুল দেখতে আসা দর্শনার্থীদের সংখ্যা এতই বেশি যে তাদের অবাধ বিচরণে হু’মকিতে পড়েছে ৯ বিঘা আয়তনের প্রস্ফুটিত সূর্যমুখীর বাগানটি। এতে বিপাকে পড়েছেন মালিক পক্ষ। অনেকেই ছবি তোলার জন্য ঢুকে পড়ছেন বাগানের ভেতর। ফুলের চেয়ে বেশি দর্শনার্থীর সংখ্যা। দর্শনার্থীদের অবাধ চলাফেরায় নষ্ট হওয়ার শ’ঙ্কায় এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিকিউরিটি ম্যান ও ভলান্টিয়ার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ফসলের মাঠের মাঝখানে সূর্যমুখী ফুলের বাগান। ফুটে আছে হাজার হাজার হলুদ বর্ণের সূর্যমুখী ফুল। যা প্রকৃতি প্রে’মীদের মন মুহূর্তেই আ’ন্দোলিত করে তোলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাগানের সৌন্দর্যমন্ডিত দৃশ্য ছড়িয়ে পড়লে এর আকর্ষণ আরো বহুগুনে বেড়ে যায়। প্রতিদিন বাগানটি এক নজর দেখতে ৫/৬ শত প্রকৃতিপ্রে’মী ছুটে আসছেন।
সূর্যমুখী ফুল বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. রাশেদ বলেন,বাগানটি স’ম্পর্কে লোকমুখে যা শুনেছি বাস্তবে বাগানটি তারচেয়ে আরো অনেক বেশি সুন্দর! একসঙ্গে এতগুলো সূর্যমুখী ফুল বাস্তবে আগে কখনো আমা’র দেখা হয়নি। এখানে এসে সত্যিকার অর্থেই অনেক আনন্দিত হলাম।
সাইফুল ইস’লাম নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, আমা’র বাড়ি নরসিংদী হলেও আমি ঢাকায় থাকি। ফেইসবুকে বাগানটির ছবি দেখে বাগানে আসার আগ্রহ জন্মে। তাই বাড়িতে এসে অবসর সময়টুকু পার করতে এখানে চলে আসি।
শারমিন আক্তার পিংকি বলেন, সূর্যমুখী ফুলের প্রতি আমা’র আকর্ষণ সবসময় একটু বেশি! তাছাড়া একদিকে নদী অ’পরদিকে শেখ হাসিনা সেতু মাঝখানে সূর্যমুখী ফুলের বাগান এর সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই এখানকার মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করতে পরিবারের সবাই মিলে ছুটে এসেছি।পরিবেশটা খুব মনোমুগ্ধকর তাছাড়া গত বছরের তুলনায় এবারের ফুলের সাইজ ও অনেক বড়। । এখানে এসে খুব ভালো লাগলো।
যশ বি ছানার সঙ্গী নাকি স্বামী জানিয়ে দিলেন নুসরাত
বাগানটির মালিক তরুণ উদ্যোক্তা তৌহিদুল ইস’লাম মাসুম বলেন, সূর্যমুখী তেলে কোন ধরনের কোলেস্টেরল নেই, তাছাড়া এই তেল খেলে শরীরের কোলেস্টেরল কমে যায় বিধায় প্রথমত সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহ জন্মে। কিন্তু ফুলপ্রে’মীদের আগমন এবং ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যাওয়ার কারণে প্রথম বছর আমা’র স্বপ্নের সূর্যমুখী ফুলের বাগান অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এতে করে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও হাল ছাড়িনি। পরবর্তীতে আরো বেশি পরিমাণ জমি নিয়ে চারদিকে বেষ্টনী তৈরি করে সূর্যমুখী ফুলের বাগান করি এবং দর্শনার্থীদের প্রবেশের জন্য মা’থাপিছু ২০ টাকা করে টিকে’টের ব্যবস্থা করে বেশ সাড়া পাই।
এবছর আমি অনেক টাকা ব্যয় করে অনেক দূর থেকে উন্নতমানের বীজ এনে নয় বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করি। বাগানের প্রতিটি গাছেই ফুল ফুটেছে তাছাড়া ফুলের সাইজ অনেক বড় হওয়ায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা, ফুলের বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ সহ বাগানের সার্বিক পরিচর্যার জন্য সিকিউরিটি, ভলান্টিয়ার ও কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিদিন এখানে গড়ে ৪/৫ শত লোক মা’থাপিছু ২০ টাকা মূল্যের টিকেট কে’টে বাগানে প্রবেশ করে। এতে করে সিকিউরিটি ম্যান, ভলান্টিয়ার ও কর্মচারীদের বেতন দিয়ে প্রতিদিন আমা’র ৫/৭ হাজার টাকা আয় হয়।
তিনি বলেন, বিঘা প্রতি জমিতে সূর্যমুখীর বীজ চাষ করে ফুল ফোটানো পর্যন্ত তার ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে । ফুলের ভালো সাইজ এবং ফলন ভালো হওয়ায় বিঘা প্রতি তার খরচ বাদে ৪০ হাজার টাকা করে লাভ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি । অল্প খরচে অধিক মুনাফা বিধায় সমাজের শিক্ষিত বেকার যুবক এবং অন্যান্য চাষীদের সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
নরসিংদী জে’লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা.মো.ছাইদুর রহমান বলেন, এ বছর নরসিংদীতে প্রায় ১৭ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষাবাদ হয়েছে। সূর্যমুখীর ফলন ভালো হওয়ায় আমাদের লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশী ফসল উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। আম’রা কৃষকদের প্রণোদনার টাকা থেকে ১ শত কৃষকের মাঝে ভালো মানের সূর্যমুখী ফুলের বীজ ও সার বিতরণ করেছি। তাছাড়া ভালো ফলন পেতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান সহ বিভিন্ন পরাম’র্শ দিয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।
তিনি আরো বলেন, সূর্যমুখী ফুলের তেল স’ম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় একসময় নরসিংদীতে সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ কম হতো। বর্তমানে মানুষ অনেক স্বাস্থ্য সচেতন। সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে যে তেল হয় তাতে কোন ধরনের কোলেস্টেরল না থাকায় এর চাষাবাদে অনেকেই এগিয়ে আসছে। তাছাড়া সূর্যমুখী ফুলের বাগানের প্রতি দর্শনার্থীদের ভিড় থাকায় বাগান করে অনেকেই আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে সূর্যমুখী চাষে আকৃষ্ট হচ্ছে। নরসিংদীর মাটি সূর্যমুখী চাষে বেশ উপযোগী। সূর্যমুখীর আবাদ বিগত সময়ে নরসিংদীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে না হওয়ায় ফুলের বাগানে দর্শনার্থীদের সংখ্যা একটু বেশি। কৃষকের ফুল,গাছ ও বাগানের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এমন কিছু না করে পরিবার-পরিজন নিয়ে সেলফি তোলাসহ আনন্দঘন সময় কা’টানোর জন্য সকল দর্শনার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।