কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে বিক্রি হবে সোনারগাঁয়ের লিচু

কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে বিক্রি হবে সোনারগাঁয়ের লিচু

দু-এক দিনের মধ্যে বাজারে আসছে সোনারগাঁয়ের লিচু

জুমবাংলা ডেস্ক : লিচু পেকেছে সোনারগাঁয়ে। দু-এক দিনের মধ্যে বাজারে বিক্রি করার জন্য লিচু নিয়ে হাজির হবেন চাষিরা। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সোনারগাঁয়ে লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তাছাড়া শিলাবৃষ্টির কারণে লিচুর অনেকটা ক্ষতি হয়েছে।

কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে বিক্রি হবে সোনারগাঁয়ের লিচু

সোনারগাঁয়ে সাধারণত তিন প্রজাতির লিচুর ফলন হয়ে থাকে। এগুলো হলো- পাতি লিচু, কদমী লিচু ও বোম্বাই (চায়না-৩) লিচু। বাংলাদেশের অনেক জেলায় লিচুর বাম্পার ফলন হলেও আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যের কারণে সোনারগাঁয়ের লিচু আগে পেকে থাকে। যে কারণে সোনারগাঁয়ের লিচু প্রতি বছরের মে মাসের প্রথমদিকেই বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যান লিচু চাষিরা।

সোনারগাঁয়ে সর্বপ্রথম পাতি জাতের লিচু, পরে কদমী জাতের লিচু ও সর্বশেষ বোম্বাই জাতের লিচু পেকে থাকে। আকারে বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় অনেকে এ অঞ্চলের লিচুকে ‘দিল্লিকা লাড্ডু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

লিচু পাকার ১৫ দিনের মধ্যেই বাগান মালিকরা বাজারে বিক্রি করার জন্য সব লিচু বাগান থেকে সংগ্রহ করে থাকেন। এজন্য রশি, টুকরি, বাঁশের লাঠি সংগ্রহ ও অস্থায়ী টিনের ঘর নির্মাণ করে লিচু একসঙ্গে আটিবাঁধা ও প্যাকেট করতে সুবিধা হয়।

সূত্র জানায়, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভার খাসনগর, চিলারবাগ, দৈলরবাগ, পানাম, নোয়াইল, দত্তপাড়া, বাগমুছা, অর্জুন্দী, হাতকোপা, দরপত, ছাপেরবন্ধ, গোয়ালদী, টিপরদী, হরিষপুর, ভট্টপুর, লোকশিল্প জাদুঘর, গোবিন্দ্রপুর, গাবতলী, হারিয়া, বৈদ্যেরবাজার, তাজপুর, সাদীপুর, ইছাপাড়া, দুলালপুর, বারদী, সেনপাড়া, বালুয়া দিঘীরপাড়সহ ৫০টি গ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক লিচু বাগান।

এসব লিচু বাগানে প্রতি বছর পাতি লিচু, কদমী লিচু ও বোম্বাই (চায়না-৩) লিচুর ফলন হয়ে থাকে। সোনারগাঁয়ে দুই শতাধিক লিচুর বাগান থাকলেও নতুন করে বাড়ির অঙিনায় ও কৃষিজমির পাশেও লিচুর চাষ শুরু করেছেন চাষিরা।

লিচু ব্যবসায়ীরা বিগত ৪ বছর যাবত সোনারগাঁয়ের পাতি লিচু হাজারপ্রতি ৩ হাজার টাকায়, কদমী লিচু হাজারপ্রতি ৬ হাজার টাকায় ও বোম্বাই লিচু হাজারপ্রতি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে আসছেন।

মঙ্গলবার সরেজমিন সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, লিচু চাষিরা তাদের লিচু বাগানে অব্যাহতভাবে পাহারা দিচ্ছেন। কাক, বাঁদুর, চামচিকা ও চোরের হাত থেকে লিচু রক্ষা করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

এ কাজে চাষিদেরকে তাদের পরিবারের সদস্যরা ও শ্রমিকরা সহযোগিতা করছেন। অনেক চাষি লিচু গাছ থেকে লিচু ছিঁড়ে বাজারে বিক্রি করার জন্য টুকরি, বাঁশ, রসি ও বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহ করছেন।

দরপত গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী লিটন মুছা জানান, সোনারগাঁয়ে এবার লিচুর ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় লিচু অনেকটা ঝরে পড়েছে। তাছাড়া আকারে অনেকটা ছোট হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে বিক্রি করার জন্য সোনারগাঁয়ের লিচু বাজারে হাজির করা হবে। এ কারণে প্রতিটা লিচু চাষি এখন প্রতিনিয়ত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানায়, সোনারগাঁয়ে লিচু পাকার জন্য চাষিরা কোনো কীটনাশক প্রয়োগ করে না। তবে লিচু বড় হওয়ার ক্ষেত্রে হরমন জাতীয় ঔষধ, লিচুর কালার নষ্ট না হওয়ার জন্য ছত্রাকনাশক ও পোকার উপদ্রব বন্ধ করার জন্য তারা কিটনাশক ঔষধ প্রয়োগ করে থাকেন। এসব কিটনাশক ঔষধ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলার কথা নয়। তবে পরিমাণে বেশি প্রয়োগ করলে অবশ্যই তা ক্ষতিকর।

লেখক, সাহিত্যিক ও গবেষক শামসুদ্দোহা চৌধুরী জানান, সোনারগাঁয়ে পর্তুগিজদের আগমনের পর অর্থাৎ ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রথম লিচুর চাষ শুরু হয়। পর্তুগিজরাই সোনারগাঁয়ে প্রথম লিচু চাষ শুরু করেন। প্রথমে ছোট পরিসরে এর চাষ শুরু হলেও এখন তা ব্যাপকভাবে রূপ নিয়েছে। লিচু ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় প্রতিনিয়ত জমির মালিকরা নতুন নতুন লিচুর গাছ রোপণ করছেন।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজওয়ান-উল-ইসলাম জানান, সোনারগাঁয়ের লিচু আকারে বড় ও সুস্বাদু হয়ে থাকে। এবছর ফলন ভাল না হওয়ায় অনেক চাষিকে লোকসান গুনতে হতে পারে।

চর্তুদশ শতকের মসলিন খ্যাত বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ে পর্তুগিজদের আমল অর্থাৎ ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রথম লিচুর চাষ শুরু হয়। লিচু চাষের জন্য আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ও লিচু ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় সোনারগাঁয়ে এখন প্রায় দুই শতাধীক ছোট বড় লিচু বাগান সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিনিয়ত লিচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বিভিন্ন জমির মালিকরা।