জুমবাংলা ডেস্ক : ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। শুল্ক আরোপের আগে খোলা এলসির আওতায়ই এখনও পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। তারপরও বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের আমদানিকারক-আড়তদার সিন্ডিকেট। শুল্কযুক্ত পেঁয়াজ আমদানি শুরুর আগেই তারা বাড়িয়ে দিয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম। এর ফলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির বাজারে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা।
প্রতিবেশী দেশ ভারত ১৯ আগস্ট পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। তবে সেই শুল্কযুক্ত পেঁয়াজ বাংলাদেশে আমদানি শুরু হয়নি। বাজারে এখনও শুল্ক আরোপের আগে খোলা এলসির আওতায় আমদানি করা পেঁয়াজ। তারপরও দাম বাড়তে বাড়তে পেঁয়াজের কেজি একশ’ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
রাজধানী ঢাকায় দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৮ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। আর আমদানিকৃত হাইব্রিড পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ১৮ টাকা।
আবার দাম বৃদ্ধির এই চিত্রও সব বাজার বা মহল্লার দোকানে সমান নয়। এলাকাভেদে পেঁয়াজের দামের পার্থক্য কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা।
মঙ্গলবার রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, হাতিরপুল, রামপুরা, বাড্ডা, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মান ভিত্তিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৯৫ থেকে ১০৫ টাকায় কিনেছেন তারা।
মগবাজার বাসিন্দা সারমিন জাহান বলেন, ‘সোমবার বিকেলে কারওয়ান বাজার থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছি। মঙ্গলবার অন্য বাজার করতে এসে কৌতূহলী হয়ে পেঁয়াজের দাম জিজ্ঞাসা করলাম। দোকানি প্রতি কেজি চাচ্ছে ১০৫ টাকা।’
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জিনাত করিম জানালেন, তিনি এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন ১০০ টাকায়।
মঙ্গলবার কারওয়ানবাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। দুদিন আগেও তা ছিল ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা কেজি।
এদিকে পেঁয়াজের কেজি এভাবে লাফ দিয়ে একশ’ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়াটাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, ভারত থেকে ৩৮ থেকে ৪৬ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছিল। দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ৫৩ থেকে ৬৫ টাকা।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ীরা এখনও ভারত থেকে শুল্কযুক্ত পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেননি। শুল্ক আরোপের আগে খোলা এলসির আওতায়ই এখনও পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। অথচ ভারত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দেশে আমদানি পণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ১৯ আগস্ট ভারত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়ার পরপরই সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়। আবার বাজার অস্থিতিশীল করতে এখানে অনেক আড়তেই তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়।
যশোরের বেনাপোল ও দিনাজপুরের হিলি স্থল বন্দরকেন্দ্রিক সিন্ডিকেটও একইসঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠে। বাকি থাকেনি রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক আড়তদার ও মজুতদার সিন্ডিকেটও। ফলে দাম বাড়তে বাড়তে পেঁয়াজের কেজি একশ’ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার খবরে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্য দেশে আসার আগেই অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা এ দেশের ব্যবসায়ীদের স্বভাব।’
প্রসঙ্গত, ভারত ১৯ আগস্ট পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। আর সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করে। স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে হু হু করে।
ভারত এযাবৎ বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শুল্ক আরোপ করেনি। এবার শুল্ক আরোপের পেছনে যুক্তি হিসেবে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের মূল্য যাতে বৃদ্ধি না পায় সে জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রোববার থেকে কার্যকর হওয়া এই সিদ্ধান্ত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।
প্রতিবেশী দেশটির এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সোমবার বলেন, ‘পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর কর আরোপ করাটা দুঃখজনক।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।