ঢাকার শাহবাগে বিক্ষোভরত সরকারি চাকরিজীবীদের কণ্ঠে অসহায়ত্ব আর ক্ষোভের চিত্র ফুটে উঠেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে চললেও বেতন কাঠামোয় সমন্বয় না হওয়ায় তারা পরিবার নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক্কালে মহার্ঘ ভাতা বাড়ানোর দাবি ফের আলোচনায় এসেছে। সরকারি কর্মচারীদের এই দাবি শুধু আর্থিক নয়, এটি এখন বেঁচে থাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মহার্ঘ ভাতা: বর্তমান প্রেক্ষাপট ও দাবি
মহার্ঘ ভাতা মূলত জীবিকার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়ে থাকে। ২০২৫ সালের প্রারম্ভে এই ভাতা নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও তা এক পর্যায়ে থেমে যায়। তবে, সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আবারও আলোচনায় এসেছে বিষয়টি। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ২০ মে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
Table of Contents
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অন্তত ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বরাদ্দ না করা হলে তারা আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হবেন। এই হুমকি নিছক আবেগ নয়; বরং এটি দেশের সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরে।
দাবির পেছনের কারণ ও বাস্তবতা
বর্তমানে যেসব সরকারি কর্মচারী রাজধানী বা বিভাগীয় শহরে বসবাস করেন, তাদের জন্য ঘরভাড়া, খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সব খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে বহুগুণ। অথচ তাদের আয় প্রায় অপরিবর্তিত। ফলে অনেকেই ধারদেনায় জর্জরিত অবস্থায় রয়েছেন।
ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমরা আর সরকারের কাছে দাবি জানাতে আসব না। সরকারের কাছে বলবো না আমাদের ভাত দেন। যেহেতু সরকার আমাদের ভাতে মারবে, কাপড়ে মারবে, আমাদের সন্তানকে অশিক্ষিত করে রাখবে।” তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।
এই পরিস্থিতি শুধু মানবিক নয়, অর্থনৈতিকভাবেও একটি জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। সরকারি কর্মচারীদের মনোবল নষ্ট হলে প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে, যার প্রভাব পড়ে সেবাপ্রাপ্ত জনগণের উপরেও।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
সামাজিকভাবে একটি রাষ্ট্র তার কর্মচারীদের ন্যূনতম জীবনমান নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে তা দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। একটি বিশ্লেষণাত্মক গবেষণা অনুযায়ী, কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে রাষ্ট্রীয় উৎপাদনশীলতা ও সেবা প্রদানের মানও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায় (ADB Data)।
অন্যদিকে, অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে পড়া কর্মচারীরা দুর্নীতির আশ্রয় নিতে পারে যা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরও দুর্বল করে। অতএব, মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি শুধুমাত্র বেতন বাড়ানো নয়, এটি রাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মহার্ঘ ভাতা কেবল একটি আর্থিক দাবির নাম নয়, এটি একটি জাতির কর্মচারীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রশ্ন। যে সরকার তার কর্মচারীদের জীবনের মূল প্রয়োজন পূরণে ব্যর্থ, তার উপর আস্থা রাখা কঠিন। তাই অবিলম্বে ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বরাদ্দের দাবি বিবেচনায় নেওয়া উচিত, তা না হলে এটি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ সামাজিক সংকটে রূপ নিতে পারে।
FAQs
- মহার্ঘ ভাতা কী? মহার্ঘ ভাতা হল সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাতা যা মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মচারীদের ব্যয়ভার সামাল দিতে সহায়তা করে।
- বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা কত শতাংশ মহার্ঘ ভাতা পাচ্ছেন? এখনো নির্দিষ্ট কোনো হার নির্ধারিত হয়নি, তবে আলোচনায় সর্বোচ্চ ২০% পর্যন্ত অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
- কেন ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতার দাবি? বর্তমান জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় সরকারি কর্মচারীরা মনে করছেন ৫০% ভাতা ছাড়া তাদের জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব।
- মহার্ঘ ভাতা না বাড়ালে কী হতে পারে? চাকরিজীবীদের মনোবল ভেঙে পড়তে পারে এবং তারা চরম পদক্ষেপ যেমন আত্মহত্যা বেছে নিতে পারেন বলে হুঁশিয়ারি এসেছে।
- সরকার কবে এই সিদ্ধান্ত নেবে? আগামী ২০ মে বৈঠকের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা রয়েছে।
- এই পরিস্থিতি কীভাবে রাষ্ট্রের উপর প্রভাব ফেলতে পারে? কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা না থাকলে প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে এবং দুর্নীতি বাড়ার ঝুঁকি থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।