বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের ভ্যাট প্রত্যাহারে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
শুক্রবার বাংলাদেশ সেকেন্ড ইন্টারনেট গভার্নেন্স ফোরাম-২০২২ এর এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা জানান।
ইন্টারনেট ডাটা নিয়ে কেউ কেউ অভিযোগ করে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, নিয়ম হচ্ছে যদি ডাটা থাকে এবং এই ডাটার মেয়াদকালে নতুন প্যাকেজ নিলে অব্যবহৃত ডাটা সেখানে যুক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু তারা সেটা করে না, এটা আমরা বুঝি। আর বুঝি বলেই বিটিআরসিকে বলছি ব্যবস্থা নিতে। কারণ আমার আইন অমান্য করে জনগণের বিপক্ষে কাজ করবে তা হতে পারে না।
তিনি বলেন, বিটিআরসির দায়িত্ব সেই আইন প্রয়োগ করা। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার অধিকার আমরা কাউকে দেইনি। আরেকটা বিষয়— এখানে হয়ত এমন কেউ নেই, যার কথা বলতে বলতে ফোনকল কেটে যায়নি (কল ড্রপ), অথবা কল যায় না বা আসে না কিংবা কলে সাউন্ড হয় না। আমার তো নিয়মিত এমন হয়। এটা নিয়মিত ফেইস করতে হয়। এজন্যই কিন্তু আমরা একটি অপারেটরের সিম বিক্রি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।
‘এই তালা খুলতে কোয়ালিটি ঠিক কর। যখন মানুষ কথা বলতে পারবে তখন তুমি নরমাল ব্যবসায় ফিরতে পারবে। তার আগে গ্রাহক বাড়াতেই থাকবা, সার্ভিস দিবা না, এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে আপনারা কল ড্রপের টাকা ফেরত পাবেন, এটা আমরা বাধ্যতামূলক করে দিব।’
এ সময় বাটন মোবাইল ফোন নিয়ে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে কারো বাটন ফোন কাজে লাগবে না। এটা আর ২-৪ বছর হয়ত থাকবে। এরপর এই প্রযুক্তিই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যাদের থ্রিজি ফোন আছে অর্থাৎ একটু ইন্টারনেট আছে, সেগুলো বিলুপ্ত হবে। আগামী জানুয়ারি থেকেই আমরা মার্কেটে থ্রিজি ফোন দিব না। এটা উৎপাদনও করব না, সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। এখন যেই জামানা সেখানে কমপক্ষে একটা ফোরজি ফোনসেট দরকার। এখানে আমাদের পলিসি হলো, টুজি কিছুদিন চলবে, থ্রিজি বন্ধ, ফোরজি একটা কমন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। ফোরজির ওপর ভিত্তি করেই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে। মোবাইল ইন্টারনেটের পরের স্টেপও আমরা শুরু করেছি। সামনের দিনের টেকনোলজি ফাইভজি।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, বর্তমানে দেশের ৯৬ শতাংশ মোবাইল ফোন দেশেই উৎপাদিত বা সংযোজিত হয়। এখানে আমরা আমদানিকে নিরুৎসাহিত করছি। এটা না করলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা দক্ষ হয়ে উঠবে কীভাবে? এই সুযোগ তো তৈরি করে দিতে হবে। পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তির জন্য আধুনিক ল্যাব তৈরি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, এবার আমরা টের পেয়েছি ইন্টারনেট কীভাবে মৌলিক অধিকার। কারণ আমার বাড়ি হাওরে। এবার অনেক পানি ওঠে সেখানে। ওই জায়গা থেকে এক চাচি কল করে বলেন, ইন্টারনেটে স্পিড পায় না। সে তার বিদেশে থাকা ছেলের সঙ্গে কথা বলতে পারছে না। এজন্য মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে ইন্টারনেটকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ব এখন সেদিকেই যাচ্ছে।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়াতনে বাংলাদেশ সেকেন্ড ইন্টারনেট গভার্নেন্স ফোরাম ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভার্নেন্স ফোরামের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।
এতে আরও বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)-এর সভাপতি মো. ইমদাদুল হক, সাইবার পিস একাডেমির গ্লোবাল এডভাইজরি কাউন্সিলের সদস্য টিআইএম নুরুল কবির, কার্নিভাল ইন্টারনেটের সিইও নজরুল ইসলাম, অড্রা ডটলাইনসের ডিরেক্টর সেলস মো. তারেক মঈন উদ্দিন, উইমেন ইন্টারনেট গভার্নেন্স ফোরামের সমন্বয়ক ফারহা মাহমুদ তৃণা প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু বলেন, বিশ্বের উন্নয়নের মহাসড়কে চলতে হলে তৃতীয় ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তির সঙ্গে চলতে হবে। তা না হলে উন্নয়নের সড়ক থেকে ছিটকে পড়তে হবে। দেশের অর্থনীতি টিকে আছে গ্রামের চাষী, প্রবাসী শ্রমিক ও গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঘামের ওপর। এখন তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। ১০ বছর পর আমাদের তিন কোটি মানুষ দেশের বাইরে কাজ করবেন। সেখানে এক কোটি মানুষ যদি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে, তাহলে আমরা তো পৃথিবীকে নাচাব। যেভাবে সিলিকন ভ্যালিতে ভারতীয়রা কাজ করছেন।
ইনু আরও বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি আর ইন্টারনেটের দাম বাড়ানো হচ্ছে, তা তো হতে পারে না। ইন্টারনেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট হতে পারে না। এটা মওকুফ করতে হবে। স্মার্টফোন বিক্রির ওপর থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স মওকুফ করতে হবে। ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম কমাতে হবে। এর সঠিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই প্রকৃত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। ডিজিটাল দেশের সুফল পেতে ই-নাগরিক গড়ে তুলতে হবে। সাইবার স্বাক্ষরতা নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় তিনি ই-বাণিজ্য আইন, তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।