জুমবাংলা ডেস্ক : কৃষিভিত্তিক পণ্য হিসেবে ফুলের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সারা পৃথিবীতে ফুলের বাজার প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে সার্বিকভাবে ফুলের বাজার মূল্য প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। একসময় শুধু যশোরে ফুলের চাষ হতো।
জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ২০টি জেলায় কমবেশি ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। গত চার দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল উৎপাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ফুল চাষ হয় যশোর ও ঝিনাইদহ জেলায়।
বিগত শতকে আশির দশকে বাণিজ্যিক ভাবে ফুল চাষ শুরু করেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসরা গ্রামে চাষি শের আলি। তখন উত্পাদিত ফুল বিক্রিতে সমস্যা ছিল। বাসের ছাদে করে ঢাকাতে নিয়ে বিক্রি করতে হতো। তখন শুধু রজনীগন্ধা ফুল চাষ হতো। এরপর ফুলের বাজার প্রসারিত হয়। চাষও লাভজনক হওয়ায় অন্য চাষিরা ফুল চাষে এগিয়ে আসে। রজনীগন্ধার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস ও গাঁদা ফুলের চাষ শুরু হয়। ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলাতেও ফুল চাষ ছড়িয়ে পড়ে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর যশোর জেলায় ৬০৫ হেক্টরে, ঝিনাইদহ জেলায় ১০৯ হেক্টরে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৫৬ হেক্টরে ও মাহুরা জেলায় এক হেক্টরে ফুলের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফুলের উত্পাদনও ভালো হচ্ছে।
ফুলচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিজয় দিবসের আগে থেকে ফুলের বাজার চড়তে শুরু করে। পরিবেশ ভালো থাকলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহিদ দিবস পর্যন্ত ফুলের ভালো দাম থাকবে বলে চাষিদের আশা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় দেশের বৃহত্তম ফুলের পাইকারি বাজার যশোরের গদখালীতে বৃহস্পতিবার গোলাপ প্রতি শ ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। আগে প্রতি শ ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। জারবেরা প্রতি শ বিক্রি হচ্ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা দরে। চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি হচ্ছিল প্রতি শ ৫০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা দরে। রজনীগন্ধা বিক্রি হচ্ছিল প্রতি শ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। এখন বেড়ে তা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা দরে। গ্লাডিওলাসের দাম ছিল প্রতি শ ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। এখন তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা দরে।
ঝিনাইদহ জেলা ফুলচাষি সমিতির সভাপতি মো. জমির উদ্দিন জানান, সব ধরনের ফুলের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, ঝিনাইদহ জেলায় গাঁদা ফুলের চাষ বেশি হয়। বৃহস্পতিবার গান্না ও বালিয়াডাঙ্গা ফুলবাজারে প্রতি ঝোপা (এক হাজার পিস ) গাঁদা ফুল ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ১৫ দিন আগে যার দাম ছিল ১০০ টাকা। গোলাপ প্রতি শ ৬০০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হয়। আগে দাম ছিল ৪০০ টাকা। জারবেরা প্রতি পিসের দাম ছিল চার টাকা এখন বিক্রি হচ্ছে সাত টাকা। রজনীগন্ধার প্রতি স্টিক বিক্রি হচ্ছিল এক টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকা দরে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের ফুলচাষি নজরুল ইসলাম বলেন, এবার পাঁচ বিঘা জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ করেছেন। প্রতি ঝোপার বিক্রি হচ্ছিল মাত্র ৫০-৬০ টাকা দরে। এখন তা ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে ফুল বিক্রি তলানিতে ঠেকেছিল। ফুল বিক্রি না হওয়ায় খেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিতে হয়েছিল। এখন দাম বাড়ায় তাড়া স্বস্তিতে আছে। তবে তিনি জানান, সার, ডিজেলের দাম ও কামলা মজুরি বাড়ায় ফুল উত্পাদন খরচ বেড়েছে। অনেক চাষি লোকসান এড়াতে চাষ ছেড়ে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি মো. আব্দুর রহিম ফুলচাষিদের সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, বড় সমস্যা হচ্ছে সংরক্ষণের। পানিসরা গ্রামে একটি ইউএসএআইডর সহায়তায় একটি ফুল কুলিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু চালু হয়নি। তিনি কৃত্রিম ফুল আমদানি বন্ধের দাবি করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহের উপ-পরিচালক মো. আজগর আলি বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফুলের উত্পাদন ভালো হচ্ছে। নেদারল্যান্ডস থেকে এসে একজন ঝিনাইদহের ফুল উত্পাদন এলাকা ঘুরে গেছেন। ফুল রপ্তানির ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।