যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী মোটরযানের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করল সরকার
জুমবাংলা ডেস্ক : যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী মোটরযানের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। একই সঙ্গে ‘মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালা, ২০২৩’-এর খসড়াও প্রকাশ করা হয়েছে। দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা, সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পরিবেশ দূষণ হ্রাস এবং সড়কে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মহাসড়ক বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ধারা ৩৬-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান প্রভৃতি পণ্যবাহী মোটরযানের ক্ষেত্রে ২৫ বছর ইকোনমিক লাইফ (অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল) নির্ধারণ করল। জনস্বার্থে জারীকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
এদিকে নির্ধারিত অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পর মোটরযান স্ক্র্যাপ করতে বলা হয়েছে। নীতিমালা লঙ্ঘন করলে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’-এর ধারা ১০৪ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ধারা লঙ্ঘনের অপরাধে তিন মাসের কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।
দেশের সড়ক পরিবহন খাতের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, বাস ও ট্রাকের মতো বাণিজ্যিক মোটরযানের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল সেগুলোর উৎপাদনের বছর থেকে শুরু হয়েছে বলে ধরা হবে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যেসব বাণিজ্যিক মোটরযানের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে, সেগুলোর ফিটনেস সনদ আমরা আর হালনাগাদ করব না। আপাতত সেগুলো ডাম্পিংয়ে পাঠানো হবে। এরই মধ্যে মহাসড়ক বিভাগ থেকে “মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালা”র খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের পর নীতিমালা অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযান স্ক্র্যাপ করা হবে।’
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘মোটরযানের জীবনচক্রের পরিসমাপ্তি ঘটানো বা ডিসপোজাল পদ্ধতি না থাকায় চলাচল অনুপযোগী, অচল ঘোষিত, ইকোনমিক লাইফ/মেয়াদ অতিক্রান্ত মোটরযান সড়ক/মহাসড়কে চলাচল করছে এবং সড়ক নিরাপত্তা বিঘ্নিতসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। স্ক্র্যাপ করার মাধ্যমে এসব মোটরযানের জীবনচক্রের পরিসমাপ্তি ঘটালে বা ডিসপোজাল করা হলে সড়ক পরিবহন খাতে একদিকে যেমন সড়ক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বাড়বে অন্যদিকে পরিবেশদূষণ কমবে।’
এতে আরো বলা হয়, ‘স্ক্র্যাপকৃত মোটরযানের উপাদানগুলো পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা এবং অটোমোবাইল শিল্পের ব্যাপ্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এ নীতিমালার অন্যতম উদ্দেশ্য।’
নীতিমালা অনুযায়ী, নির্ধারিত অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল অতিক্রান্ত মোটরযান, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অকেজো ঘোষিত মোটরযান, আগুন, বিস্ফোরক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মোটরযান, যা মেরামত করে চালানো আর্থিকভাবে লাভজনক নয়, আদালত বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিষ্পত্তি করা মোটরযান, স্বেচ্ছায় স্ক্র্যাপের উদ্দেশ্যে হস্তান্তর করা মোটরযান, অননুমোদিতভাবে তৈরি মোটরযান এবং সরকার নিষিদ্ধ যেকোনো মোটরযান স্ক্র্যাপ করা যাবে।
স্ক্র্যাপ প্রক্রিয়াটি বিআরটিএর তত্ত্বাবধানে বেসরকারি পর্যায়ে সম্পাদন হবে। স্ক্র্যাপযোগ্য মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান কিংবা আবেদনকারী মূল কাগজপত্রসহ সংশ্লিষ্ট মোটরযান রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবে। কর্তৃপক্ষ যাচাই করে সেটি স্ক্র্যাপ ভেন্ডরের কাছে হস্তান্তর করবে। স্ক্র্যাপ করার উদ্দেশ্যে কেবল কর্তৃপক্ষের নিয়োগ দেয়া স্ক্র্যাপ ভেন্ডর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে স্ক্র্যাপ কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। পরিত্যক্ত মোটরযানের ক্ষেত্রে আদালত, পুলিশ, কাস্টমস বা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্ক্র্যাপ করার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করলে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পুলিশ ও কর্তৃপক্ষ স্ক্র্যাপযোগ্য মোটরযান আটক করে স্ক্র্যাপ করার ব্যবস্থা নেবে। স্ক্র্যাপ ভেন্ডর মোটরযানের চেসিস ও বডি এমনভাবে নষ্ট করবে যাতে অন্য কোনো মোটরযানে ব্যবহার উপযোগী না থাকে। স্ক্র্যাপ করার পর সংশ্লিষ্ট গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার বাতিল করে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গেজেট প্রকাশ করবে সংশ্লিষ্ট মোটরযান রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ। স্ক্র্যাপ ভেন্ডর সব প্রক্রিয়া শেষে মোটরযান নষ্ট করার পর সংশ্লিষ্ট মোটরযান রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ স্ক্র্যাপ সার্টিফিকেট ইস্যু করবে।
নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, ‘বিআরটিএ এ নীতিমালার আওতায় ভেন্ডর কর্তৃক নিরাপদ ও পরিবেশসম্মত উপায়ে স্ক্র্যাপকৃত মোটরযানের যন্ত্রাংশ/মালামাল নিষ্পত্তির জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তুত করবে। স্ক্র্যাপ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য স্ক্র্যাপযোগ্য মোটরযানের শ্রেণী অনুযায়ী অবচয়ন প্রকৃতি হিসাব করে একটি কমিটির মাধ্যমে স্ক্র্যাপমূল্য নির্ধারণসহ মোটরযানের কোন কোন অংশ রিসাইকেলযোগ্য হিসেবে বাজারজাত করা যাবে তা নির্ধারণ করবে।’
অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল অতিক্রান্ত মোটরযান স্ক্র্যাপ ব্যতীত একই ব্যক্তি নতুন বা পুরনো কোনো মোটরযান রেজিস্ট্রেশন নিতে পারবেন না বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কোনো মোটরযান মালিক এ নীতিমালা লঙ্ঘন করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং তার বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ধারা ১০৪ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্ক্র্যাপ প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য বিআরটিএর একটি আলাদা উইং থাকবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।