রিয়াজুল হক : খুব সাধারণভাবে বাণিজ্য যুদ্ধ বলতে বোঝায়, একটি দেশ যখন অন্য দেশের পণ্যের উপর শুল্ক বা কোটাসীমাবদ্ধতা আরোপ করার মাধ্যমে ব্যবসায়িক ক্ষতি করার চেষ্টা করে । এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, বাণিজ্য যুদ্ধ করে মূলত জয় হয় কার? এক কথায় যদি উত্তর দিতে হয়, তবে বলা যেতে পারে, এই যুদ্ধে কেউ জেতে না। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ ক্রেতা। পূর্বে ঘটে যাওয়া বাণিজ্যিক যুদ্ধের মাধ্যমে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। তবে যারা বাণিজ্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে না, তারা এই যুদ্ধের মাধ্যমে লাভবান হয়। ধরুন, দুইটি দেশ ‘ক’ এবং ‘খ’ এর মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ সংঘটিত হল। ‘ক’ দেশ ‘খ’ এর পণ্যের উপর এবং ‘খ’ দেশ ‘ক’ দেশের পণ্যের উপর শুল্ক বাড়িয়ে দিল। এর ফলে, ‘খ’ এবং ‘ক’ দেশের রফতানি আয় কমে গেল। ’খ’ তার পণ্য নতুন বাজার ‘গ’ দেশে কিছুটা কম মূল্যে রফতানি করা শুরু করল। নতুন বাজারে প্রবেশের জন্য পণ্যের মূল্য কম রাখাটাই বাঞ্চনীয়। অর্থাৎ বাণিজ্য যুদ্ধে না থেকেই বরং দেশ ‘গ’ লাভবান হল।অস্ত্রের মাধ্যমে যুদ্ধ করে যেমন নিজের শক্তির জানান দেওয়া হয়, তেমনি একটি দেশকে আর্থিক সংকটে ফেলার জন্য বাণিজ্য যুদ্ধ করা হয়ে থাকে। তবে এই যুদ্ধ সবসময় একচেটিয়া হবে, বিষয়টি তা কিন্তু নয়। বৃহৎ বাজারের দুই বা ততোধিক শক্তিশালী দেশের মধ্যেও বাণিজ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়ে থাকে।
অনেকেই যুক্তি দেখিয়ে থাকেন, দেশীয় কোনও কোনও শিল্পের সহায়তার জন্য আমদানীকৃত পণ্যের উপর ট্যারিফ আরোপ করা হয়ে থাকে। এই ট্যারিফ আরোপ যদি দেশের স্বার্থে করা হয়ে থাকে, তবে সেটাকে সাধুবাদ জানানো যায়। তবে কাউকে শায়েস্তা করার চিন্তা করে যদি কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন বিষয়টা দেশীয় শিল্পের সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। আরো একটি বিষয় হচ্ছে, আমদানীকৃত পণ্যের উপর উচ্চ ট্যারিফ বসালেই যে দেশীয় শিল্প বেঁচে যাবে, বিষয়টি কিন্তু এত সহজ নয়। পণ্যের মান, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা, মূল্য, ভোক্তার চাহিদা পূরণে সক্ষমতা ইত্যাদি অনেক কিছুই জড়িত থাকে।
বর্তমান সময়ে শুল্ক নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রেষারেষি দুই দেশের অর্থনীতির জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ অনেক পণ্যের ডিজাইন হয় যুক্তরাষ্ট্রে, আবার অ্যাসেম্বল হয় চীনে। যেমন, অ্যাপলের মত বৃহৎ কোম্পানী দুই দেশেই বিনিয়োগ করে থাকে।এটি যে শুধু মার্কিন ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে তাই নয়, চীনের ভোক্তাদেরও ভোগাবে এ বাণিজ্য যুদ্ধ। এছাড়া যেসেব দেশে অ্যাপলের পণ্য রফতানি হয়, সেসব দেমের ভোক্তাদেরও বেশি মূল্য দিয়ে পণ্য কিনতে হবে। ওয়ালমার্টের মতো অনেক খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি চীন থেকে তাদেরপণ্য আমদানি করে থাকে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও ওয়ালমার্টের পণ্যের দাম বেড়ে যাবে।
বৈশ্বিকভাবে প্রায় সবাই একমত যে, বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ ‘জেতে’ না। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে পণ্যের মূল্য বেড়ে যায় এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ জয়ী না হলেও সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় সাধারণ ক্রেতা, যারা সংখ্যায় অনেকগুণ এবং বাণিজ্য যুদ্ধের বিষয়ে সামান্যতম আগ্রহ যাদের নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের এই বানিজ্য যুদ্ধের পরিণতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। তবে খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যার সমাধান হোক, এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। কারণ মূল ভুক্তভোগী তো তারাই।
লেখক: রিয়াজুল হক, উপ পরিচালক বাংলাদেশ ব্যাংক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।