গোপাল হালদার, পটুয়াখালী: বাদাম রাখবেন বাদাম। আপনারা বাদাম নিলে আমার ঘরের বাজারসহ চলবে অসুস্থ স্বামীর ওষুধের খরচ। এভাবে হাকডাক দিয়ে সড়কের পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন পঞ্চাশোর্ধ একজন নারী।
এই পঞ্চাশোর্ধ নারী পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর সদর ইউনিয়নের বিপিনপুর গ্রামের বাদশা মিয়ার স্ত্রী বুলবুলি বেগম। বাদশা মিয়া ১০ বছর আগে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এর পর থেকে কর্মক্ষমতা হারান তিনি। এরপর বুলবুলির জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।
এই দম্পতির বড় ছেলে ফয়সাল পড়াশোনা করেন বরিশাল ইসলামিয়া কলেজে আর ছোট ছেলে মোহাম্মাদুল্লাহ্ বঙ্গবন্ধু মাধমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে সেখানেই ইতি টেনেছে। অর্থাভাবে আর বেশি দূর আগাতে পারেনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হলেন বুলবুলি বেগম।
স্বামী অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর থেকে পায়ে হেঁটে বরিশাল শহর থেকে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা পর্যন্ত বাদাম বিক্রি করছেন বুলবুলি বেগম। তার বাদাম বিক্রির টাকায় চলছে চারজনের পুরো সংসার। পরিবার সামলে বাদাম বিক্রির কাজ করেন একাই।
জানা যায়, ২০ বছর আগে বরগুনার আমতলী থানার কুকুয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম হাওলাদারের মেয়ে বুলবুলি বেগমের প্রথম বিবাহ হয় পার্শবর্তী এলাকার বাসিন্দা মনিরুলের সাথে। সে সুখও তার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বিবাহের ৮ বছরের মাথায় প্রথম স্বামী মারা যায়।
এরপর ফরিদপুর এলাকার বাসিন্দা দলিল উদ্দিন সিকদারের ছেলেকে বাদশা মিয়ার সাথে পরিচয়ের পর দুজন একে অপরের প্রেমে পড়েন। বিবাহের মাধ্যমে সংসার জীবন শুরু করেন বাদশা-বুলবুলি। বিয়ের পর থেকে স্বামীর সঙ্গে দোকান চালাতেন তিনি। এতে বাদশা মিয়ার সাথে ভালোই চলছিলো সংসার জীবন। হটাৎ ১০ বছর আগে স্ট্রোক করেন বাদশা মিয়া।
বুলবুলি বেগম বলেন, আমার পুরো জীবনটাই একটা সংগ্রাম। আমি বিয়ের পর থেকেই আমার স্বামীর সঙ্গে দোকান চালাতাম। জীবনে শান্তি বলতে কি তা কখোনোই পাইনি। কারণ আমরা খুবই অসহায় এবং গরীব। নুন আনতে পান্তা ফুরায় আমাদের সংসারে। কোনো রকম টানাপড়েনের মধ্যদিয়ে চলছিলাম। এর মধ্যে হঠাৎ আমার স্বামী স্ট্রোক করে বিছানায় পরে আছে।
তিনি আরও বলেন, থাকার জন্য এক টুকরো জমিও নেই আমাদের। মানুষের বাসায় ভাড়া থাকতে থাকতে জীবন পার করতেছি। হয়তো একদিন এই ভাড়া বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবো।
স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম মিরন বলেন, বুলবুলির মত অনেক সংগ্রামী মা আমাদের সমাজে রয়েছেন, যারা নিজের জীবনের সব সুখ শান্তির কথা না ভেবে পরিবারের সুখের জন্য সারাটা জীবন উৎস্বর্গ করে দিয়েছেন। আমার দাবি, বুলবুলি বেগমের যেন নিজের একটা আপন ঠিকানা হয়।
মহিপুর সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফজলুল হক গাজী বলেন, বুলবুলি বেগম একজন পরিশ্রমী নারী। আমি তাকে গত প্রায় ১২ বছর ধরে বাদাম বিক্রি করতে দেখছি। অসুস্থ স্বামী এবং দুই ছেলে নিয়ে সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন তিনি। তবে সামনের দিকে কোনো বরাদ্ধকৃত ঘর এলে, তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবো।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কুয়াকাটায় আমাদের কোনও ঘর নেই। তিনি যদি কলাপাড়ার লতাচাপলি আবাসনে থাকতে চান তবে তাকে ঘর দেওয়া হবে। এছাড়া তার আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন হলে ইউএনও ও জেলা প্রশাসক বরাবর আর্থিক সহায়তা চেয়ে লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে। তিনি আসলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।