বিনোদন ডেস্ক: চিরবিদায় কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী। তার মৃত্যুতে সুরের দুনিয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পতন হয়েছে আরও এক নক্ষত্রের। বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ছেলে বাপ্পা লাহিড়ী মুম্বাইয়ে ফেরার পরই অন্তিম যাত্রার পথে রওনা হন এই কিংবদন্তি।
ছেলে বাড়ি ফেরার আগেই শেষকৃত্যের যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। বাপ্পা ফেরার পর বাবার অন্তিম দর্শন সারেন। তারপরই বাপ্পি লাহিড়ীর দেহ বাড়ি থেকে বের করে শেষকৃত্যের উদ্দেশে ভিলে পার্লের পবনহংস শ্মশানের পথে রওনা হয়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন মেয়ে রিমা লাহিড়ী। মরদেহের পিছনে চিৎকার করে ছুটতে দেখা যায় শোক বিহ্বল কন্যাকে। শেষযাত্রায় পা মিলিয়েছেন বাপ্পি লাহিড়ীর বন্ধু-অনুরাগীরা।
বাপ্পি লাহিড়ী ‘গোল্ড লাভার’ ছিলেন। তার সংগ্রহে ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সোনা। বরাবরই তার শরীরে গয়না দেখে কেউ মুগ্ধ হয়েছেন, কেউ মেতেছেন রসিকতায়। শেষ যাত্রায় তার গায়ে সোনা ওঠেনি বটে, কিন্তু কালো চশমায় চোখ ঢাকা হয়েছে এই কিংবদন্তির। জীবনের শেষ বেলা পর্যন্ত সেই কালো চশমা তার সঙ্গী ছিল।
এদিকে জানা যায় বাপ্পি লাহিড়ীর গান আর মিঠুন চক্রবর্তীর নাচ- এই ছিল আশির দশকের ব্লকবাস্টার জুটি। বলিউডের ‘ডিস্কো কিং’ বাপ্পি লাহিড়ীর মৃত্যুর মধ্যদিয়ে সেই জুটি ভাঙলো গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। এ খবর এখনো মেনে নিতে পারছেন না মিঠুন চক্রবর্তী। এমনকি প্রিয় বন্ধুর শেষকৃত্যেও যোগ দেননি তিনি। যদিও কেন তিনি শেষকৃত্যে জাননি তা অনেক পরে জানিয়েছেন।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে মিঠু জানিয়েছেন। খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল তাদের দুজনের মধ্যে। দেখা হলেই বেশ জমিয়ে আড্ডা দিতেন তারা। প্রিয় এই মানুষটির মৃত্যুর খবরে খুব কষ্ট পেয়েছিলেন তিনি। আর তাইতো বাপ্পির এই নিথর দেহ দেখার মতো অবস্থা মিঠুনের ছিলো না। মিঠুন ও বাপ্পির মধ্যে এতটাই বন্ধুত্ব ছিল এতটাই গভীরে যে বাপ্পির হাসিমুখটাই মিঠুন মনে রাখতে চেয়েছেন। আর তাই এ কারণেই বাপ্পি লাহিড়ীর শেষকৃত্যে যাননি বলে জানিয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী।
প্রসঙ্গত, ১৯৭০ থেকে ৮০-এর দশকে হিন্দি ছায়াছবির জগতে অন্যতম জনপ্রিয় নাম বাপ্পি লাহিড়ী। হিন্দিতে ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘চলতে চলতে’, ‘শরাবি’, বাংলায় অমর সঙ্গী, আশা ও ভালোবাসা, আমার তুমি, অমর প্রেম প্রভৃতি ছবিতে সুর দিয়েছেন। গেয়েছেন একাধিক গান।
কিশোর কুমার সম্পর্কে বাপ্পির মামা ছিলেন। বাবা অপরেশ লাহিড়ী ও মা বাঁশরী লাহিড়ী দু’জনেই সংগীত জগতের মানুষ। ফলে একমাত্র সন্তান বাপ্পি ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। মা-বাবার কাছেই পান প্রথম গানের তালিম।
১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বাপ্পি। তারপর দীর্ঘদিন বাংলা ও হিন্দি ছবির গান গেয়েছেন, সুর দিয়েছেন। প্রচুর সোনার গয়না পরতে ভালোবাসতেন। ছিল গায়কির নিজস্ব কায়দা, যা তাকে হিন্দি ছবির জগতে অনন্য পরিচিতি দিয়েছিল।
বিজেপিতে যোগ দিয়ে বাপ্পি লাহিড়ী রাজনীতিতেও নেমেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে ভোটেও লড়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতিতে কখনোই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি বাপ্পি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।