বিনোদন ডেস্ক : বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ইমরান। দেশ-বিদেশে রয়েছে তার গানের অগণিত ভক্ত। তবে এ সফলতার জার্নিটা সহজ ছিল না তার। দীর্ঘ একুযগের অনেক শ্রমের ফসল তার এই সাফল্য।
একটি জনপ্রিয় গণমাধ্যমের সঙ্গে আড্ডায় ইমরান তাঁর গায়ক ও সংগীত পরিচালক হিসেবে বেড়ে ওঠার গল্প বলেন।
মধ্যবিত্ত পরিবারে ব্যাংকার বাবা মোজাম্মেল হকের ছেলে ইমরান। কথায় কথায় ওঠে আসে ইমরানের জীবনের এসব অজানা কথা। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বোনের বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি অকপটে স্বীকার করেন এ সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় গায়ক ও সংগীত পরিচালক ইমরান।
ইমরান বলেন, ‘মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার বেড়ে ওঠা। মা, দুই বোন আর আমাকে নিয়ে বাবা অনেক কষ্টে সংসার চালাতেন। তিনি ছিলেন আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর আয় দিয়ে আমার দুই বোন নীলা, সুমী আর আমার পড়াশোনার পাশাপাশি গান শেখার কাজও চলত। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাবলাম, বাবার ওপর থেকে সংসারের চাপ কীভাবে লাঘব করা যায়। টুকটাক আয় শুরু হওয়ার পর বাবার পাশাপাশি সংসারের কিছু দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিই।’
২০০৮ সালে ‘চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ’ আয়োজনে প্রথম রানারআপ হন ইমরান। এরপর টুকটাক কনসার্টে অংশ নেওয়া শুরু করেন। সেখান থেকে কিছু বাড়তি আয় হয়। ইমরান বলেন, ‘জীবনের প্রথম বড় অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সুযোগ হয় ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়। ওই অনুষ্ঠান থেকে অনেক টাকা পুরস্কার পাই। পুরাটাই বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। কয়েক বছর পর সেরা কণ্ঠ প্রতিযোগিতায় নাম লেখাই। প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর টুকটাক শো করেছি। এই শো থেকে যা আয় হয়েছে, তার পুরোটাই পরিবারের কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।
শুরু থেকে বাবাকে দেখেছি অনেক কষ্ট করেছেন। বাবা যেহেতু ব্যাংকার ছিলেন, আয় ছিল সীমিত। আমার আয় শুরুর পর পরিবারে বাবা একটি সাইড দেখেন, আমি আরেকটি। বোনের বিয়ের ব্যাপারটা তেমন। যখন বোনের বিয়ের কথা চলছে, বাবার হাতে অত টাকা ছিল না। ব্যাংকে আমার একটি ফিক্সড ডিপোজিট ছিল, সেটা দেখিয়ে ঋণ নিই। বাবা তাঁর জায়গা থেকে চেষ্টা করেছেন, আমি আমার অবস্থান থেকে। বাবার সন্তান এবং বোনদের ভাই হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব মনে করেছি। এসব আমাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয়। বাবাকে তো গত বছর হারিয়েছি, এখন পরিবারের পুরো ভার আমারই। এটা যে কী পরিমাণ আনন্দের, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’
ইমরানের বড় বোন নীলার বিয়ে হয় ২০১০ সালে আর ছোট বোন সুমীর ২০১৫ সালের নভেম্বরে। বড় বোন স্বামী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, আর ছোট বোন তাঁর স্বামী-সন্তান নিয়ে ঢাকায়।
২০১০ সালে লেজার ভিশন থেকে ইমরানের প্রথম একক অ্যালবাম ‘স্বপ্নলোকে’ প্রকাশ হয়। ২০১২ সালে ‘তুমি দূরে দূরে আর থেকো না’গানটি দিয়ে প্রথম আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এতে তার সহশিল্পী ছিলেন পূজা। গানটির মিউজিক ভিডিওতে ছিলেন আফরান নিশো ও উর্মিলা শ্রাবন্তী কর। গানটি লিখেছিলেন অনুরূপ আইচ এবং সুর সঙ্গীত করেছিলেন ইমরান নিজেই।
২০১২ সালে ইমরানের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘তুমি’প্রকাশ হয়। এ অ্যালবামের প্রত্যেকটি গান শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। পরবর্তীতে ‘বলতে বলতে চলতে চলতে’ গানটি নিয়ে আসে আরো আলোচনায়। থেমে যাননি ইমরান। এগিয়ে যান আরো সাফল্যের পথে। কারণ অল্প সময়ে এই গানটি কোটি ভিউতে পরিণত হয়। সিনেমার গানেও ইমরান এক অপরিহার্য কণ্ঠ। তার গাওয়া বিশেষত কণার সঙ্গে গাওয়া তার গানগুলো সবসময়ই শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়ে আসছে।
সঙ্গীত জীবনে চলার পথে ইমরান তিন শতাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। যার মধ্যে একক গান, দ্বৈত গান, সিনেমার গান, নাটকের গান, কাভার সং রয়েছে। রয়েছে ইসলামিক গজল। ইমরান প্রথম সিনেমায় গান করেন মোহাম্মদ হোসেন জেমী পরিচালিত ‘ভালোবাসার লাল গোলাপ’সিনেমাতে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।