নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের যুবক মাহমুদুল হাসান সবুজের বাগানে বারোমাসি আঠাবিহীন কাঁঠাল দেখতে ভিড় করছেন হাজারো মানুষ। অন্যান্য ফলগাছের ফাঁকে ফাঁকে আঠাবিহীন কাঁঠালের চারা রোপণ করেছেন সবুজ। শুরুতেই সাড়া ফেলেছেন তিনি।
মাহমুদুল হাসান সবুজ জানিয়েছেন, তিনি ইউটিউবে আঠাবিহীন কাঁঠাল দেখে তা চাষ করতে উদ্বুদ্ধ হন। কিন্তু, এ কাঁঠালের চারা সংগ্রহ করতে পাচ্ছিলেন না। পরে এক বন্ধুর সহায়তায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে চারা আমদানি করেন। রোপণের তিন মাসের ফল ধরে। এখন একের পর এক গাছ থেকে কাঁঠাল নামিয়ে স্বজন ও প্রতিবেশীদের বিলিয়ে দিচ্ছেন তিনি। সবুজের আঠাবিহীন কাঁঠাল চাষ দেখে অনেকে উৎসাহিত হচ্ছেন।
সবুজ বলেন, চারপাশে নানা ধরনের ফলজ গাছের ফাঁকে ফাঁকে আঠাবিহীন কাঁঠালের ৪৪টি চারা রোপণ করেছি। এর মধ্যে একটিও মরেনি। সবগুলো গাছ বড় হয়েছে। সেগুলোতে ফল ধরেছে। ইতোমধ্যে পাকা ফলও পেয়েছি। নিজে খেয়েছি, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের দিয়েছি। ভেতরের কোষগুলো রসালো এবং খুব মিষ্টি। তবে, কোনওনো আঠা নেই।
শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকার এক পোশাক কারখানায় স্টোর ম্যানেজার ফজলুল হক এসেছেন সবুজের বাগান দেখতে। তিনি বলেন, বারোমাসি কাঁঠালের বাগান ও তার পরিচর্যা দেখার জন্য এসেছি। চারা সংগ্রহ ও পরিচর্যার নিয়ম-কানুন সম্বন্ধে জেনেছি। আমি নিজেও রোপণ করব। এত আমিও লাভবান হবো এবং দেশে এ কাঁঠালের চাষ বাড়বে।
হাজী ছোট কলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, এক বছর যাবত সবুজ বারোমাসি কাঁঠালের পরিচর্যা করে আসছেন। গাছে প্রচুর কাঁঠাল ধরেছে। কিছু কাঁঠাল ঝরে পড়েছে। কাঁঠালগুলো খুব সুন্দর, ফলনও ভালো। পূর্বপুরুষদের রোপণ করা বড় কাঁঠাল গাছগুলো এখন প্রায় ধংসের পথে। আমরা সবুজকে সহযোগিতা করলে এবং নিজেরা রোপণ করলে লাভবান হবো। তার কাঁঠাল চাষ দেখে সকল বাগানমালিক ও চাষিরা উদ্বুদ্ধ হবে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, কাঁঠালের একটি ছোট চারার মধ্যে বারোমাসি কাঁঠাল ফলে। এটা ভিয়েতনামের জাত। খুব মিষ্টি এবং সুস্বাদু। বারোমাসি কাঁঠাল চাষে আমাদের দেশের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও একসময় রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদি সুমাইয়া সুলতানা বলেন, আমাদের দেশীয় জাতের কাঁঠালের প্রচুর আঠা থাকে। এটি বছরে একবার ফলন দেয়। কিন্তু, নতুন যে ভ্যারাইটি ডেভেলপ করা হয়েছে, সেটা বারো মাস ফলন দেয় এবং আঠাবিহীন। কৃষকরা এটি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আমরা পরামর্শ দিচ্ছি বারোমাসি এ কাঁঠাল আবাদ করার জন্য।
তিনি আরো বলেন, গাজীপুর কাঁঠালের জন্য বিখ্যাত। নির্দিষ্ট মৌসুম ছাড়া এটি পাওয়া যায় না। চাষি সবুজ বারোমাসি আঠাবিহীন ৪৪টি কাঁঠালের চারা রোপণ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। আমাদের এলাকায় দ্রুত শিল্পায়ন হওয়ায় দেশী কাঁঠালের জাত কমে যাচ্ছে। বারোমাসি আঠাবিহীন কাঁঠাল চাষ করলে সবুজের মতো সমৃদ্ধ হতে পারব।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কাঁঠাল গবেষক ড. মো. জিল্লুর রহমান দেশে কাঁঠাল চাষ সম্প্রসারণে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিভিন্ন অমৌসুমি জাতের কাঁঠালের জাত সংগ্রহ করে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
মো. জিল্লুর রহমান বলেছেন, আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। এলাকাভেদে এর স্বাদেও ভিন্নতা রয়েছে। বীজ থেকে চারা উৎপাদনে গুণাগুণ ঠিক থাকে না। গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করলে শতভাগ গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল একসময় অবহেলিত ছিল। এখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার হচ্ছে। কাঁঠালকে ঘিরে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কাঁঠালের গ্রাফটিং পদ্ধতির দিকে কৃষকদের উৎসাহ তৈরি করতে হবে। এ পদ্ধতির ফলে রোপণের কিছুদিনের মধ্যেই ফল পাওয়া যাবে।
বারি’র ফল বিভাগ ও উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের ভাষ্যমতে, দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য ও পুষ্টির ব্যবহার নিশ্চিতে বিভিন্ন ফল ও ফসলের উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনে জোর দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে স্বল্প সময়ে ভালো ফলনের প্রতিও। বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ গবেষণার ফসল হচ্ছে এ গ্রাফটিং পদ্ধতি। এর আগে আম ও লিচুর ক্ষেত্রে এ গ্রাফটিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়েছে। এখন কাঁঠালের ক্ষেত্রে গ্রাফটিং পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়েছে।
বারি’র মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার বলেছেন, বারোমাসি আঠাবিহীন কাঁঠালের জাতটি রোপণ করে মাঠ পর্যায়ে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। নতুন জাতের কাঁঠাল খেতে সুস্বাদু এবং সুঘ্রাণযুক্ত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।