২০২৪-২৫ অর্থবছরের সর্বশেষ মাস জুনে দেশের রপ্তানি কমেছে। তবে জুনে কমলেও বার্ষিক হিসাবে পণ্য রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ৮.৫৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৮২৮ কোটি ডলার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে দেশের আয় হয়েছিল চার হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার।
রপ্তানি প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি ছিল তৈরি পোশাক খাত, যা দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খাতটি ৮.৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে মোট আয় করেছে তিন হাজার ৯৩৫ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরে ছিল তিন হাজার ৬১৫ কোটি ডলার।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূল বাজারে স্থিতিশীল চাহিদা, পণ্যের বৈচিত্র্য, কর্মপরিবেশের মানোন্নয়ন, অটোমেশন ও পরিবেশবান্ধব কারখানায় বিনিয়োগের ফলে এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। তবে রপ্তানিকারকরা সতর্ক করে বলেছেন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা, কাঁচামালের দাম ওঠানামা এবং বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরের লজিস্টিক জটিলতার কারণে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হতে পারে, যদি না সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশের বেশি এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে, যা আবারও প্রমাণ করেছে যে জাতীয় অর্থনীতিতে এই খাতের অবদান কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তৈরি পোশাক খাতের মধ্যে নিটওয়্যার থেকে আয় এসেছে দুই হাজার ১১৬ কোটি ডলার এবং ওভেন পোশাক থেকে এসেছে এক হাজার ৮১৯ কোটি ডলার।
এদিকে একক মাস হিসাবে জুন মাসে রপ্তানি আয় কমেছে ৭.৫৫ শতাংশ। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত জুনে রপ্তানি হয়েছে ৩৩৪ কোটি ডলারের পণ্য।
এই রপ্তানি গত বছরের জুনের তুলনায় সাড়ে ৭ শতাংশ কম। গত বছরের জুনে রপ্তানি হয়েছিল ৩৬১ কোটি ডলারের পণ্য।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, গত জুনের প্রথম সপ্তাহে পবিত্র ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটির কারণে পণ্য রপ্তানি হয়নি। আবার মাসের শেষ দিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে ২৬ ও ২৭ জুন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। মূলত এই দুই কারণে জুনে পণ্য রপ্তানি কমেছে।
তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘রপ্তানি প্রবৃদ্ধি উৎসাহব্যঞ্জক হলেও ইউনিটপ্রতি দাম কমে যাওয়ায় এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমরা চাপের মুখে আছি। আমাদের এখন উচ্চমূল্যের পণ্য এবং নতুন বাজার খুঁজে বের করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
এদিকে তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য খাতের রপ্তানিতেও কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং কৃষিপণ্যের মতো খাতগুলো রপ্তানিতে অবদান রাখলেও অনেক খাতই বার্ষিক লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
রপ্তানিকারকরা জ্বালানি ঘাটতি ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে, বিশেষ করে শিপিং রুটে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সরকার রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং ব্যবসা সহজীকরণে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সময়োপযোগী নীতিগত হস্তক্ষেপ, বাণিজ্য অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং রপ্তানি বাজারে কৌশলগত আলোচনা জোরদার করতে পারলে আগামী দিনে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।
ইপিবির প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে ২.৫২ শতাংশ, পোশাক খাতে ৮.৮৪ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে ১৬.২১ শতাংশ, হোম টেক্সটাইলে ২.৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে পাটজাত পণ্যে ৪.১০ শতাংশ, কাচজাত পণ্যে ৩৮ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।