রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : বালুচরে বানানো হয়েছে মঞ্চ। সেখান থেকে ভেসে আসছে ‘কমেন্ট্রি’। মঞ্চের ওপরে পতপত করে উড়ছে পতাকা। আর সামনের বালুকাবেলার মাঠে চলছে বল দখলের লড়াই।
ফুটবলের এই লড়াইয়ে কখনো লক্ষ্যভেদী শটে ধরাশয়ী হচ্ছে প্রতিপক্ষ। কখনোবা দুরন্ত গতিতে পরাস্ত হচ্ছে অন্য পক্ষ। আছে ডজ, ড্রিবলিং থেকে শুরু করে ফুটবলের অনেক কারুকাজই। সঙ্গে দর্শকের তুমুল হর্ষধ্বনি, করতালি। পছন্দের দলের বিপদসীমায় বল ঢুকলে বুক ধুকপুক অনুভূতি।
অবশ্য ‘বিচ ফুটবলের’ এই পসরা কোনো সাগরতীরে বসেনি। বসেছে যমুনা নদীর তীরে, গাইবান্ধার বালাসীঘাটে। আয়োজন করেছে জেলা নৌমালিক সমিতি।
আজ শনিবার ছিল এর উদ্বোধনী আসর। এতে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি লিটন মিয়া, উপদেষ্টা তফাজ্জল হোসেন প্রমুখ।
লিটন বলেন, প্রতিবছর শীতকালে যখন নদী শুকিয়ে চর জাগে, তারা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন। এবারও এই জুনিয়র ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে। বালাসীর আশপাশের সব অঞ্চল এতে অংশ নেয়। নদীর দুই পারের দলই খেলায় আসে। চরবাসী একটা আনন্দের উপলক্ষ খুঁজে পায়।
নৌমালিক সমিতির এই সভাপতির বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া গেল দর্শকদের সঙ্গে কথা বলেও। দেখা গেল, খেলা দেখতে আশপাশে ভিড় জমিয়েছেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে যেমন নদীর দু ধারের চরবাসী পাওয়া গেল, তেমনি পাওয়া গেল ঘাট ঘুরতে আসা দর্শনার্থীও।
ফুলছড়ির কালিরবাজার এলাকা থেকে ঘাটে ঘুরতে এসেছিলেন স্কুলশিক্ষক ফারুক হোসেন। তিনিও খেলা দেখায় মজে গেছেন। তিনি বললেন, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সৈকতে যখন এ ধরনের ফুটবল খেলা হয়, তখন তাকে বিচ ফুটবল বলা হয়। এই চর সৈকত না হলেও তীর তো বটে। তাই এই ফুটবলকেও আমরা ‘বিচ ফুটবল’ বলতেই পারি।
বেলা সোয়া চারটার দিকে শুরু হওয়া খেলায় মুখোমুখি হয় হঠাৎপাড়া জুনিয়র ও এলিভেন স্পোর্টিং ক্লাব। খেলার প্রথমার্ধ পর্যন্ত দুই দলই তুমুল লড়াই করে। এক দল অন্য দলকে গতিতে হারিয়ে দেয় তো, অন্য দল হারায় ডজে। যেন ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে’। প্রথমার্ধ গোলশূন্য ড্র হয়। বিরতির পর আবারও পাল্টাপাল্টি আক্রমণ শুরু হয়। আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে জমে ওঠে খেলা। তবে একপর্যায়ে হাল ছেড়ে দেয় এলিভেন স্পোর্টিং ক্লাব। হঠাৎপাড়া জুনিয়র স্পোর্টিং ক্লাবের সোহাগ ও হাসিব একবার করে বল জড়ান প্রতিপক্ষের জালে। এরই মধ্যে বেজে ওঠে রেফারির শেষ বাঁশি। ফলে দুই শূন্য গোলে জয়ী হয় হঠাৎপাড়া।
খেলা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর কর্তৃপক্ষের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, তিনি এখানে ৭ বছর ধরে চাকরি করছেন। তিনি নিজেও ফুটবল পছন্দ করেন। একসময় খেলতেন। এখন অবসর সময়ে ফুটবলের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করেন। নিজে আনন্দ পান, খেলোয়াড়-দর্শকেরাও মজা পান।
খেলা পরিচালনা কমিটির ব্যবস্থাপক জাহিদ হাসানও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, খেলা লিগভিত্তিক পরিচালিত হবে। চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলের জন্য আকর্ষণীয় পুরস্কারের ব্যবস্থা আছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।