রানি এবং আদিত্যের বিয়ের নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘ টানাপড়েন, মামলা, লড়াই। অনেকেই সে সবের জন্য রানিকে দোষ দিয়েছিলেন। সত্যিই কি তাই?
২০১৪ সালে আদিত্য চোপড়ার সঙ্গে বিয়ে হয় রানি মুখোপাধ্যায়ের। ইটালিতে ঘরোয়া অনুষ্ঠানে সাত পাকে বাঁধা পড়েন তাঁরা। এই বিয়ের নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘ টানাপড়েন, মামলা, বহু লড়াই। অনেকেই সে সবের জন্য রানিকে দোষ দিয়েছিলেন।
রানি আদিত্যের প্রথম স্ত্রী নন। তার আগেও বিয়ে হয়েছিল যশ চোপড়ার পুত্রের। দীর্ঘ টানাপড়েনের পর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তার পর বিয়ে করেন রানিকে।
আদিত্যের প্রথম স্ত্রীর নাম পায়েল খন্না। ২০০১ সালে পায়েলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আদিত্যের। দু’জনে ছোটবেলার বন্ধু। একই স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। বম্বে স্কটিশ স্কুলে পড়তেন তাঁরা।
পায়েল ধনী পরিবারের মেয়ে। বিরাট ব্যবসা ছিল তাঁর বাবার। ছোট থেকে খুব বন্ধু ছিলেন দু’জন। তার পর ক্রমে প্রেম।
পায়েলকে আদিত্যের মা পামেলা চোপড়া খুব পছন্দ করতেন। পায়েলের মা এবং তিনি ছিলেন বন্ধু। নিন্দকেরা বলেন, সে কারণে রানিকে প্রথমে মানতে চাননি তিনি। পরে ছেলের জেদের কারণে মেনে নেন।
পায়েল পেশায় ছিলেন ইন্টেরিয়র ডিজ়াইনার। কাজ শুরু করেন ১৯৯৭ সালে। আদিত্য তখন যশরাজ স্টুডিয়ো তৈরি করছিলেন। স্টুডিয়োর নকশা করার জন্য তাঁর এক জন ডিজ়াইনার দরকার ছিল। তখনই পায়েল সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন।
আধুনিক নকশায় তৈরি যশরাজ স্টুডিয়োতে রয়েছে জিম, ক্যাফেটেরিয়া। এই স্টুডিয়োর নকশা করার সময় দু’জনে ঘনিষ্ঠ হন। এর পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
২০০১ সালে আদিত্য এবং পায়েলের বিয়ে হয়। দুই পরিবারই এই বিয়েতে দারুণ খুশি ছিল। ধুমধাম করে দু’জনের বিয়ে হয়। এর পর আদিত্য ছবি প্রযোজনার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর পায়েল ইন্টেরিয়র ডিজ়াইনিংয়ের কাজে।
ওই সময়েই আদিত্যের সংস্থা রানির সঙ্গে চুক্তি করে। যশরাজ ব্যানারে একের পর এক ছবিতে অভিনয় করেন রানি। ‘লাগা চুনরি মে দাগ’, ‘বান্টি অওর বাবলি’, ‘হাম তুম’, ‘সাথিয়া’র মতো হিট ছবির নায়িকা ছিলেন রানি।
কানাঘুষো শোনা যায়, এই সব ছবির দৌলতে রানির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে আদিত্যের। ২০০৬ সালে শোনা যায়, আদিত্য বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছেন। যদিও তাঁর বাবা-মা এতে রাজি ছিলেন না। তাঁরা চাননি, এই বিচ্ছেদ হোক। পায়েলকে খুব ভালবাসতেন যশ এবং পামেলা।
বিচ্ছেদ নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বিবাদ চরমে ওঠে আদিত্যের। তিনি চোপড়া বাংলো ছেড়ে চলে যান পাশের এক বিলাসবহুল হোটেলে। সেখানেই থাকতে শুরু করেন আদিত্য। সেখান থেকেই কাজ করতেন তিনি। ছবি সংক্রান্ত বৈঠকও করতেন।
যে হোটেলে থাকতেন আদিত্য, সেখানে ঘনিষ্ঠদের জন্য এক বার পার্টি দিয়েছিলেন। সেই পার্টিতে ছিলেন রানিও। গুঞ্জন শুরু হয়, সেটা নাকি আদিত্য আর রানির বাগ্দানের পার্টি ছিল! তার পরেই আদিত্যের বিচ্ছেদ এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে যায়।
আদিত্যের প্রযোজনা সংস্থার প্রায় সব ছবিতে এক সময় দেখা যেত রানিকে। শুধু তাই নয়, রানি কোন ছবি করবেন, কোন ছবি করবেন না, সেই নিয়েও নাকি সিদ্ধান্ত নিতেন আদিত্য। অন্য প্রযোজকদের সঙ্গে রানির হয়ে মিটিং করতেন তিনি, সিদ্ধান্তও নিতেন।
আদিত্য আর পায়েলের বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে ছিল আদালতে। কারণ পায়েল নাকি খোরপোশ হিসাবে ৫০ কোটি টাকা চেয়েছিলেন। আদিত্য দিতে রাজি ছিলেন না। একাংশের দাবি, পায়েল ভুল করেননি। কারণ যশরাজ প্রযোজনা সংস্থা যথেষ্ট ধনী। সে সময় তাদের সব ছবির বাজেটই ছিল ৫০ কোটি টাকা।
অনেক লড়াইয়ের পর ২০০৯ সালে বিচ্ছেদ হয় আদিত্য এবং পায়েলের। তখন সবাই রানিকেই দোষ দিয়েছিলেন। অভিযোগ করেছিলেন, রানির জন্যই ঘর ভাঙে আদিত্যের।
রানি এই নিয়ে দীর্ঘ দিন চুপ ছিলেন। অনেক বছর পর মুখ খোলেন। তিনি জানান, আদিত্যের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যখন শুরু হয়, তখন আদিত্য স্ত্রীর সঙ্গে থাকতেন না। আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন।
রানি এ-ও দাবি করেন, সে সময় যশরাজ ব্যানারেও কাজ করছিলেন না তিনি। ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’, ‘আইয়া’, ‘তালাশ’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করছিলেন।
রানি স্পষ্টই জানান, তিনি সেই ধরনের অভিনেত্রী নন, যাঁরা কেরিয়ারের জন্য ছবির প্রযোজকের সঙ্গে ডেট করেন। আদিত্য সে সময় কোনও ছবি করছিলেন না বলেও তিনি দাবি করেন।
২০১৪ সালে বিয়ে হয় রানি এবং আদিত্যের। বিচ্ছেদের পর এক বারের জন্যও পায়েল এই বিষয়ে মুখ খোলেননি। তিনি নিজের কাজে ডুবে যান। এখন তিনি এতটাই সফল যে, দেশে-বিদেশে একের পর এক প্রকল্পে কাজ করছেন। লাউঞ্জ থেকে ক্যাফে, রেস্তরাঁ, বাড়ি, নকশা করেন তিনি। তাঁর ইনস্টাগ্রাম দেখলেই এই বিষয়টি বোঝা যায়। যদিও সেখানে আদিত্যের সঙ্গে সম্পর্কের কোনও উল্লেখ নেই।
ঘনিষ্ঠেরা বলেন, আদিত্যের মা পামেলা নাকি এখনও রানিকে পুত্রবধূ হিসাবে মানতে পারেননি। পায়েলের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। এই নিয়ে রানির সঙ্গে নাকি দূরত্ব বেড়েছে তাঁর। রানি এই নিয়ে নীরব। আর আদিত্য স্বভাববশতই সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেন না। ব্যক্তিগত জীবন আড়ালে রাখতেই পছন্দ করেন তিনি। তাই পায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক হোক বা রানি, কোন বিষয়েই মুখ খোলেননি তিনি। তা হলে কি চোপড়া পরিবার আজও আদিত্যের বিচ্ছেদের কারণ হিসাবে রানিকেই দেখেন? সে জবাব অবশ্য মেলেনি।
সব ছবি সংগৃহীত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।