আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সিরিয়ায় চলা গৃহযুদ্ধের মধ্যে রবিবার (০৮ ডিসেম্বর) দামেস্কে ঢুকে পড়েন বিদ্রোহীরা। পরে বিমানে করে দামেস্ক ছাড়েন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। এর আগে ২৪ বছর ক্ষমতার মসনদে ছিলেন তিনি। দেশের অভ্যন্তরের সংঘাত নিরসনে দীর্ঘ সময় তার পাশে ছিলো রাশিয়া এবং ইরানের মতো শক্তিশালী মিত্ররা। তবে শেষ মুহূর্তে মিত্রদের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি।
বাশার আল আসাদের পালানোর পর পর নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাশিয়ার সমর্থন হারিয়ে “তার দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন”। রবিবার (০৮ ডিসেম্বর) তিনি তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বলেন, “আসাদ চলে গেছে, তার রক্ষক ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে থাকা রাশিয়া, তাকে আর রক্ষা করতে আগ্রহী ছিল না।” খবর আল জাজিরার।
এর আগে আসাদ সরকারের পতনের পর প্রতিক্রিয়া জানায় বাশার আল-আসাদের পতনের বিষয়ে এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং তার দল সিরিয়ার অসাধারণ ঘটনা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পাশাপাশি আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গেও অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখছে।”
অন্যদিকে প্রেসিডেন্টের পালিয়ে যাওয়ার পর সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-জালালি বলেছেন, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত যেকোনো নেতৃত্বকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, তার বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখতে কাজ করবেন। আর বিদ্রোহী দলের প্রধান জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকবে।
মূলত গত মাসের শেষে হঠাৎ করেই দেশটির পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে শুরু করে। ২৭ নভেম্বর দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোতে বিদ্রোহীদের আক্রমণ শুরু হয়। গত রবিবার (০১ ডিসেম্বর) আলেপ্পোর কুর্দি যোদ্ধাদের দখলে থাকা কিছু সংখ্যাগরিষ্ঠ কুর্দি জেলা ছাড়া, বাকি অংশ নিজেদের দখলে নেয় বিদ্রোহীরা। পরে বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) দেশের চতুর্থ বৃহত্তম শহর হামা দখলে নেয় তারা। শুক্রবার (০৭ ডিসেম্বর) সরকার নিয়ন্ত্রিত রাজধানী দামেস্ক ঘেরাও করার জন্য অভিযান শুরু করে তারা। এর মধ্যে রবিবার (০৮ ডিসেম্বর) সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমসের নিয়ন্ত্রণ দখল করার ঘোষণা দেয় বিদ্রোহীরা।
সিরিয়ার সশস্ত্র বিদ্রোহীরা বলছে, আসাদ শাসনের অবসান সিরিয়ার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “বাথিস্ট শাসনের অধীনে ৫০ বছরের নিপীড়ন এবং ১৩ বছরের অপরাধ, অত্যাচার এবং বাস্তুচ্যুতি এবং দীর্ঘ সংগ্রামের পরে, সব ধরণের দখলদার বাহিনীর মোকাবেলা করে, আমরা আজ ঘোষণা করছি, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ সেই অন্ধকার যুগের সমাপ্তি এবং নতুন যুগের শুরু হলো। এটি সিরিয়ার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা”।
সশস্ত্র বিদ্রোহীরা ঘোষণা দিয়েছে, “নতুন সিরিয়া” হবে “শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের” জায়গা। যেখানে ন্যায়বিচারের জয় হবে এবং সব সিরিয়ানদের মর্যাদা রক্ষা করা হবে। অপর এক বিবৃতিতে বিদ্রোহীরা বলেছে, “আমরা অন্ধকার অতীতের পাতা উল্টে, ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবো।” বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস প্রধান আল-জুলানিসহ বিরোধী নেতারা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে জোর দিয়ে বলেছিলেন, যে তারা সাম্প্রদায়িকতা এবং আল-কায়েদার সাথে পূর্ববর্তী সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ দূর করার প্রয়াসে সব সিরিয়ানদের জন্য একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্য সামনে রেখে এগোচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বলেছে, হাজার হাজার মানুষ গাড়িতে এবং পায়ে হেঁটে কেন্দ্রীয় দামেস্কে জড়ো হয়ে, স্লোগান দিচ্ছেন, “স্বাধীনতা!” অনলাইনে পোস্ট করা ভিডিওগুলো উমাইয়াদ স্কোয়ারে বেশ কিছু লোককে একটি পরিত্যক্ত সামরিক ট্যাঙ্কের উপর দাঁড়িয়ে বিজয় উদযাপনের গান গাইতে দেখা গেছে। ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেছে আল জাজিরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।