জুমবাংলা ডেস্ক : রংপুর থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসান শুভর এক বান্ধবী। গভীর রাতে আত্মীয়ের বাসার গেট বন্ধ পেয়ে ভোরে ঢাবির হলের গেস্ট রুমে ওই বান্ধবীকে নিয়ে অবস্থান করেন শুভ। তার দু’জন সেখানে অবস্থান নেন এবং ক্যান্টিন থেকে নাস্তা এনে খাওয়া-দাওয়া করে বেরিয়ে যান।
‘‘বান্ধবীসহ রাতে হলের গেস্টরুমে ছাত্রলীগ নেতার রাত্রিযাপনের’’ ঘটনা তদন্তে এমনটাই উঠে এসেছে। আলোচিত কামরুল হাসান শুভ হল শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক। তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহরিয়ার মুন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
এ ঘটনা তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। হলের আবাসিক শিক্ষক মো. তৌহিদুল ইসলাম ও অধ্যাপক আজম স্বাক্ষরিত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে হল প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। অনানুষ্ঠানিকভাবে জানতে পেরে আমরা ঘটনা সম্পর্কে অবগত হওয়ার চেষ্টা করেছি। সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, ওরা হলে প্রবেশ করেছে ভোর ৫:৩৪ মিনিটের পরে (অর্থাৎ, সূর্যোদয়ের পরে)।
ছাত্রলীগ নেতা তার বান্ধবীকে গেস্ট রুমে আশ্রয় দিয়ে মানবতার পরিচয় দিয়েছেন; উত্তম কাজ করেছেন। এ বিষয়ে একটি তদন্ত হয়েছে। সেখানে কমিটি ওই নেতার কোন ধরনের অপরাধ খুঁজে পায়নি।। -হল কর্তৃপক্ষ
‘‘তার ভাষ্য অনুযায়ী বান্ধবী রংপুর থেকে রাতের কোচে ঢাকায় আসে। মোহাম্মদপুরে খালার বাসায় যাওয়ার কথা থাকলেও ওই বাসার গেট বন্ধ থাকায় তারা হলের গেস্টরুমে অবস্থান নেয়।’’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দিবাগত রাতে হলের অতিথি কক্ষে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেছেন, হলের অতিথি কক্ষে এত সকালে মেয়ে নিয়ে আসা নিষেধ। তবুও তিনি কেন মেয়ে নিয়ে এসেছিলেন আর কেনই বা এতক্ষণ অপেক্ষা করে চলে গেলেন সেটা আমরা জানি না। ঘটনা যাচাই করে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
তবে ওইদিন থেকে ঘটনা স্বীকার করলেও তিনি দাবি করেছিলেন, ওই বান্ধবীর সঙ্গে রাত্রিযাপনের বিষয়টি সত্য নয়। তিনি বলেছেন, সে রাতে আমার এক বান্ধবী রংপুর থেকে ঢাকায় তার আত্মীয়ের বাসায় আসেন। তার আসতে আসতে গভীর রাত হয়ে যাওয়ায় তার আত্মীয়ের বাসার গেট বন্ধ হয়ে যায়। তখন তাকে রিসিভ করে ভোর রাতে আমাদের গেস্টরুমে নিয়ে আসি।
‘রংপুর থেকে আসা’ বান্ধবীর সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা শুভ
হল প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনের আরও বলা হয়েছে, ‘‘হলের গেস্টরুমে অবস্থানকালীন হলের সিকিউরিটি গার্ড, ঝাড়ুদার, ছাত্র ও অন্য কর্মচারীরা কাছাকাছি এলাকায় ছিল। হলের ছাত্ররা এসময় গেস্টরুমের ওয়াশরুমও ব্যবহার করেছে। তারা হলের কেন্টিন থেকে নাস্তা এনে খেয়েছে। পরে বেরিয়ে গেছে।’
এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শনিবার রাতে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম খান ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও পরেরদিন সুর পরিবর্তন করে তিনি বলেছেন, ‘‘ওই ছাত্রলীগ নেতা তার বান্ধবীকে গেস্ট রুমে আশ্রয় দিয়ে মানবতার পরিচয় দিয়েছেন; উত্তম কাজ করেছেন। এ বিষয়ে একটি তদন্ত হয়েছে। সেখানে কমিটি ওই নেতার কোন ধরনের অপরাধ খুঁজে পায়নি।’’
তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে দুইটি সুপারিশ করেছেন। প্রথমটি হলো তারা প্রাথমিক তদন্তে প্রত্যক্ষ অপরাধের কোনো প্রমাণ পায়নি। অপরটি হলো ছাত্রলীগ নেতা সামাজিক ন্যুইসেন্স তৈরির মতো একটা ঘটনা ঘটিয়েছে। ছেলেদের হলে এত ভোরে বান্ধবীকে নিয়ে আসা দৃষ্টিকটু হয়েছে। এমতাবস্থায় কমিটি মনে করে, কামরুল হাসান শুভকে হলে সাময়িকভাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হোক। তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হোক।
তবে ক্যাম্পাসের ও হলের একাধিক সূত্র অভিযোগ করেন, ওই দিন সন্ধ্যায় সেই বান্ধবীসহ ক্যাম্পাসে ঘুরতে দেখা যায় তাকে। এছাড়া বাসে ওই বান্ধবীর সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা শুভর ঘোরাঘুরির সময়ের একটি সেলফিও দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে হাতে এসেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।