জাতীয় ডেস্ক: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সরকারি অফিস ছাড়া আর কোথাও ৫০ ভাগ জনবল অফিসে আর ৫০ ভাগ বাসায় বসে কাজ করার আদেশ কার্যকর হয়নি৷ এদিকে গণপরিবহনে মোট সিটের অর্ধেক যাত্রী নেয়া শুরু হয়েছে বুধবার থেকে৷ ফলে যাত্রীরা পড়েছেন সংকটে৷ খবর ডয়চে ভেলের।
কাজে যেতে হবে বলে করোনা নিয়ে ভাবার সময় নেই, যে করে হোক বাস পেতে হবে৷ এ নিয়ে বুধবার (৩১ মার্চ) সকালে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গার বাসের স্টাফদের সাথে যাত্রীদের সংঘর্ষ হয়েছে৷
সকালে আজিমপুর, কুড়িল বিশ্বরোড, ভিক্টোরিয়া পার্ক, যাত্রাবাড়ি ও মাওয়াসহ আরও কয়েকটি এলাকায় যাত্রীরা বাসে উঠতে না পারায় পরিবহন শ্রমিকদের সাথে হাতাহাতি ও মারামারি হয়েছে বলে জানান পরিবহন মালিকেরা৷ এমনকি বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা তাদের না নেয়ায় বাস আটকে দেয়া হয়৷
যাত্রীরা বলছেন, অফিসে যেতে হবে৷ সিট না থাকলেও নিতে হবে৷ পুলিশ পরে ওইসব এলাকায় সব যাত্রীকে বাসে উঠতে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়৷
দুপুরে সরেজমিন কারওয়ান বাজারে গিয়ে একই পরিস্থিতি দেখা যায়৷ যাত্রী রুবেল মিয়া ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারছেন না৷
তিনি বলেন, এখন দুই সিটে একজন যাত্রী নেয়ায় বাসের সিট অর্ধেক হয়ে গেছে৷ ফলে বাস যেখান থেকে ছাড়ে সেখান থেকেই যাত্রী পূর্ণ হয়ে যায়৷ এখন সব বাসই সিটিং সার্ভিস হয়ে গেছে৷ আর সিট যদি খালিও থাকে তাহলে অল্প দূরত্বের যাত্রী তারা নিতে চায় না৷ ভাড়াও বেড়েছে শতকরা ৬০ ভাগ৷ তারও অতিরিক্ত তারা আদায় করছে৷
মোহাম্মদপুর-মতিঝিল স্টাফ কোয়ার্টার রুটে এখন জন প্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৭৫ টাকা৷ আগে ছিলো ৫০ টাকা৷ আর করোনার আগে ছিলো ৪০ টাকা৷
ওই রুটের একটি বাসের হেলপার এরশাদ মিয়া বলেন, আজ সকাল থেকে যাত্রীদের সাথে ভাড়া নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে৷ আবার সিট পূর্ণ হওয়ার পর যাত্রীরা জোর করে বাসে উঠতে চাচ্ছেন৷ আমরা গেট বন্ধ করে রাখলেও ট্রাফিক সিগন্যালে জোর করে উঠতে চায়৷ এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের তর্কাতর্কি ও ঝামেলা হচ্ছে৷
কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে দুপুরে বিভিন্ন রুটের যেসব বাস আসা যাওয়া করতে দেখা গেছে তার অধিকাংশেরই গেট ছিলো বন্ধ৷ ট্রাফিক সিগন্যাল না থাকলে তারা থামেনি৷ কারওয়ান বাজারে দুই নারী দুই ঘন্টা অপেক্ষা করেও বাসে উঠতে পারেননি৷
তারা জানান, দুই-একটি বাসে সিট থাকলেও নারীদের সিট নেই বলে তাদের উঠতে দেয়া হয়নি৷
কিন্তু বাস্তবে বাসে উঠে দেখা যায় বাসগুলো নারীদের জন্য অর্ধেক আসন খালি রাখার নিয়ম মানছে না৷ তারা সিটিং বলে আগেই পুরুষ যাত্রী দিয়ে আস পূর্ণ করে আসছে৷
রুবেল আহমেদ নামে একজন যাত্রী জানান, সিট খালি থাকলেও স্বল্প দূরত্বে যাওয়ার কথা বললে তারা যাত্রী তুলছেন না৷
তিনি বলেন, আমি ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার আসলেও আমার কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হয়েছে ১৫ টাকা৷ বাস্তবে ভাড়া পাঁচ টাকা৷
বাসের কর্মচারীরা বলেন, তাদের ভাড়া হিসাব হয় ফার্মগেট থেকে বাংলা মটর৷ আগে কারওয়ান বাজার নামলেও একই ভাড়া৷
আরেকজন যাত্রী রাসেল আহমেদ জানান, এখন বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১০টাকা৷ এক কিলোমিটার গেলেও ১০টাকা, আধা কিলোমিটারও ১০ টাকা৷
একজন কন্ডাকটর এটা স্বীকার করে বলেন, বাসে উঠলেই ১০ টাকা৷
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে আগেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হত৷ আর এখন তার ওপরে আরও ৬০ ভাগ বাড়তি ভাড়া তাদের জন্য চাপ হয়ে গেছে৷
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঢাকার মধ্যে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৬০ পয়সা৷ এখন করোনার কারণে যাত্রী সিটের অর্ধেক নেয়ার কারণে ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ালে প্রতি কিলোমিটার হয় ২ টাকা ৪৬ পয়সা৷ উত্তর বাড্ডা থেকে গোলাপশাহ মাজারের দূরত্ব আট কিলোমিটারের চেয়ে কিছু কম৷ ৬০ ভাগ বাড়িয়ে ভাড়া হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ২০ টাকা৷ কিন্তু নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা৷ কারণ তারা আগেই ভাড়া বাড়িয়েছে৷ এখন সেই বাড়তি ভাড়ার ওপর আবার বাড়িয়ে নিচ্ছে৷ ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা বলে জানান তিনি৷
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিরি সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, নিয়মের বাইরে ভাড়া না নেয়ার জন্য আমাদের কড়া নির্দেশনা আছে৷
তবে একজন পরিবহন মালিক বলেন, ভাড়া একটু বেশি না নিলে আমরা গাড়ি চালাতে পারব না৷ এই নতুন নিয়মে আমরা তিন ভাগের দুইভাগ যাত্রী হারাচ্ছি৷ কারণ সরকার তো সিটের হিসাব করে ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়িয়েছে৷ কিন্তু সিটের বাইরে আরও অনেক যাত্রী দাঁড়িয়ে যাতায়াত করেন৷ সেটাও তো আমাদের লস হচ্ছে৷ সেই হিসাব তো করা হচ্ছে না৷
খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি অফিস কোথাও ৫০ ভাগ জনবল অফিসে এবং ৫০ ভাগ জনবল বাসায় রেখে কাজ করার নিয়ম কার্যকর হয়নি৷ শুধু আমরা যাত্রী পরিবহন অর্ধেকে নামিয়ে আনায় নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি৷ যাত্রীদের তোপের মুখে পড়ছেন আমাদের পরিবহন কর্মচারীরা৷ কারণ যাত্রী কমে নাই, কিন্তু সিট অর্ধেক হয়ে গেছে৷ যাত্রীরা কথা শুনতে চাচ্ছেন না৷ তারা যেকোনোভাবে বাসে উঠে অফিসে বা কাজে যেতে চাচ্ছেন৷ কয়েকটি জায়গায় মারামরিও হয়েছে৷ পুলিশও সামাল দিতে পারছে না৷
তার মতে, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে প্রতিনিদিনই নানা অঘটন ঘটেবে৷ তাই নিয়ম সবখানে কার্যকর করতে হবে৷ তাহলে যাত্রীর চাপ কমবে৷
সরেজমিন দেখা গেছে প্রায় সব বাসেই যাত্রী অর্ধেক ছিল৷ তবে বিআরটিসির বাসে যাত্রী দেখা গেছে বেশি৷ আর মাস্ক ব্যবহারেও যাত্রীরা সচেতন ছিলেন৷ কিন্তু গাড়ির ড্রাইভার ও হেলপারদের মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম মানায় তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি৷
গত বছর করোনায় দুই মাস গণপরিবহন বন্ধ ছিলো৷ সাধারণ ছুটি শেষে গত বছরের জুলাই মাস থেকে অর্ধেক সিট খালি রেখে যাত্রী নেয়ার শর্তে গণপরিবহণ চালু হয়৷ তখনও ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ানো হয়৷
তবে এই ব্যবস্থা বেশি দিন চলেনি৷ পরিবহন মালিকদের চাপের মুখে কিছু দিন পরোই স্বাভাবিকভাবে যাত্রী নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়৷ তখন মালিকরা বাড়তি ৬০ ভাগ ভাড়া প্রত্যাহারের কথা বলেন৷ কিন্তু বাস্তবে পুরো ৬০ ভাগ প্রত্যাহার হয়নি বলে অভিযোগ আছে৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।