জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) অফিসার্স এসোসিয়েশনের দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন আগামী ৯ মার্চ শনিবার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সংস্থার পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) মোঃ সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সম্প্রতি এ ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেন।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, কমিটির মেয়াদ দুই বছর হলেও এবার নির্বাচন হচ্ছে দীর্ঘ আট বছর পর। সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটি ছয় বছর দায়িত্ব পালনের পর এডহক কমিটি আরও প্রায় দুই বছর দায়িত্বে রয়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিন পর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ হওয়ায় বিআইডব্লিউটিএর বিভিন্ন পর্যায়ের ৫৯৪ জন কর্মকর্তার (এসোসিয়েশনের ভোটার) মাঝে শুরুতে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এখন তা হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। কারণ সরাসরি ভোটের পরিবর্তে সাধারণ সভায় কণ্ঠভোটে একটি বিতর্কিত বা কর্তৃত্ববাদী কমিটি গঠনের নীল নকশা চূড়ান্ত হয়েছে।
গত দুই-তিন দিন রাজধানীর মতিঝিলে সংস্থার প্রধান কার্যালয় বিআইডব্লিউটিএ ভবন ঘুরে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর অভিযোগ, নির্বাচন কিংবা মনোনয়নের মাধ্যমে সংগঠনের সভাপতি পদ দখলে নিতে গত দেড় বছর ধরে সংস্থার ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম তালুকদার এবং বন্দর ও পরিবহন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দীনের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। জনশ্রুতি আছে, এ দুজন বিআইডব্লিউটিএতে অত্যন্ত প্রভাবশালী।
তবে সম্প্রতি ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ছাইদুর রহমানের মধ্যস্থতায় দুই কর্মকর্তার দ্বন্দ্ব নিরসন এবং নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছে।
সে অনুযায়ী, রকিবুল ইসলাম তালুকদার সভাপতি ও আরিফ উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত হয়।
তবে কাহিনি এখানেই শেষ নয়। সূত্রগুলোর অভিযোগ, সাধারণ সভা শেষে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যাতে শুধু রকিব-আরিফ প্যানেল থাকে এবং এই প্যানেলের সবাই যেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয় সেই নীল নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সূত্রগুলোর অভিযোগ, রকিব-আরিফ প্যানেল ছাড়া অন্যকোনো প্যানেল এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে অন্য কেউ যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেন, সে জন্য সম্ভাব্য কয়েকজন প্রার্থীর ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে।
তবে নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এসব কর্মকর্তা শাস্তিমূলক বদলি, কমগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান, পদোন্নতি আটকে রাখা, বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে কম নম্বর দেওয়াসহ নানা রকম হয়রানির ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছেন না। একই কারণে গণমাধ্যমের কাছে নিজেদের নাম এবং নৌ-মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন না তারা।
আবার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার মোটেও আগ্রহ নেই কিংবা অতীতে কখনও প্রার্থী হননি- এমন কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, রকিবুল ইসলাম ও আরিফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস আছে, এমন কর্মকর্তা এই মুহূর্তে বিআইডব্লিউটিএতে কেউ নেই। সুতরাং তাদের মনে যখন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার খায়েশ জেগেছে, তখন তারা হয়েই ছাড়বেন। দুই বা ততধিক প্যানেল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু ভোট হলে হলে রকিবুল ইসলাম তালুকদার ও আরিফ উদ্দিনের ভরাডুবি হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, বিআইডব্লিউটিএতে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কোণঠাসা। এখানে বিএনপি ও জামায়াতপন্থিরা সবসময়ই শক্তিশালী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা ১৬ বছরের শাসনেও এখানকার দৃশ্য বদলায়নি।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ড্রেজিংয়ের প্রধান প্রকৌশলী রকিব তালুকদার রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। এখন তিনি বিএনপিপন্থি প্রকৌশলীদের সংগঠন ‘এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি। আরিফ উদ্দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা এবং বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।