জুমবাংলা ডেস্ক : নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দুই যুগ সময় অতিবাহিত করে আওয়ামী লীগে ফিরলেন পাবনা পৌরসভার মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু। রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নেন। এ সময় কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে দীর্ঘ সময়ে বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত পাবনা পৌরসভার মেয়র কামরুল হাসান মিন্টুর যোগদানের সময়ে পাবনা-১ আসনের সাংসদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. শামসুল হক টুকু, পাবনা-৫ সদর আসনের সাংসদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা-২ আসনের সাংসদ আহমেদ ফিরোজ কবির, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, সাবেক দুদক কমিশনার, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন, সুজানগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন, পাবনা জেলা যুবলীগের আহবায়ক আলী মর্তুজা বিশ্বাস সনি, যুগ্ম আহবায়ক শিবলী সাদিকসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যমতে, কামরুল হাসান মিন্টু ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে অতপ্রতভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে ছাত্রাবস্থায় কলেজ সংসদের ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হন। তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল বিএনপিতে যোগদান করলে তার সাথেই দল পরিবর্তন করে বিএনপির রাজনীতিতে প্রবেশ করেন কামরুল হাসান মিন্টু। গেল দুই যুগ সময়কালে বিভিন্ন পদসহ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জেলার বিএনপির রাজনীতিতে শিমুল বিশ্বাস ও কামরুল হাসান মিন্টু সমর্থিত দুইটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। গত ১১ বছর আগেই জেলা বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয় কামরুল হাসান মিন্টুকে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরেই পাবনাতে বিএনপি’র রাজনীতিতে টানাপোড়েন শুরু হয়। জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কামরুল হাসান মিন্টু পাবনা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। এর আগেও পরপর দু’বারের নির্বাচিত মেয়র মিন্টু। ১৯৯৩ সালে তৎকালের সর্বস্তরের জনপ্রিয় নেতা খ্যাত, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুলের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের অর্ধেক অংশই বিএনপির রাজনীতিতে যোগদান করেন। সে সময়ে ওই দলে কামরুল হাসান মিন্টুও ছিলেন। বিএনপির রাজনীতিতে যোগদানের পর দক্ষ সংগঠক রফিকুল ইসলাম বকুলের হাত ধরেই এ জেলায় বিএনপির রাজনীতি চাঙা হয়ে উঠে।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ১০মে সংস্কারপন্থি ধুয়া তুলে পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাবনা পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০১৯ সালের আগস্টে বহিষ্কৃত শতাধিক নেতাকে দলে ফেরাতে কেন্দ্রীয় বিএনপির নীতি নির্ধারকরা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ওই তালিকায় কামরুল হাসান মিন্টুর নামও ছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগ আলোর মুখ না দেখায় অবশেষে পাবনা পৌরসভার পরপর তিনবারের নির্বাচিত মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু আওয়ামী লীগের যোগ দিলেন।
কামরুল হাসান মিন্টু আওয়ামী লীগের যোগদান করছেন এমন খবর বেশ কিছুদিন ধরেই পাবনায় বেশ আলোচিত খবরে পরিণত হয়েছে। নানা শ্রেণি পেশার মানুষের মুখে মুখে রব পড়ে যায়। তারই ফলাফল আজ কামরুল হাসান মিন্টুর আওয়ামী লীগের যোগদানের পর ধোয়াশা কেটেছে বলে শহরের একাধিক জনের মন্তব্য।
যোগদান অনুষ্ঠানে যোগদানকারী ও উপস্থিত গণমাধ্যমে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যোগদানকারীদের দলের পক্ষ থেকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। পাশাপাশি আপনারা দল করলে অবশ্যই দলের নিয়ম কানুন মেনে চলবেন।
তিনি আরও বলেন, মাদক বিক্রেতা, ভূমিদস্যু বা দখলকারী, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এ ধরনের কোন মানুষকে আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়াতে চাই না।
কামরুল হাসান মিন্টু বলেন, আমি এখনও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হইনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সন্তানের দৃষ্টিকোণ থেকে নিজগুনে ক্ষমা করেছেন। আবারও তার সন্তানকে তার কাছেই টেনে নিলেন। এ জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ও পাবনাবাসীর তরফ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি আমাকে তার কাছে আরও ঋণী করে দিলেন এমন দাবি মিন্টুর। এদিকে কামরুল হাসান মিন্টু পাবনার সাংবাদিকদের এক প্রতিক্রিয়ায় মুঠোফোনে জানান, আওয়ামী লীগ আমার আঁতুর ঘর। ঘর থেকে বাহিরে ছিলাম। আবার নিজ ঘরেই ফিরে এসেছি।
এ বিষয়ে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, মিন্টু জন্মগত আওয়ামী লীগের ঘরের সন্তান। সে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত সৈনিক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ তার মধ্যে ছিল এবং আছে।
আর সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শামসুল হক টুকু এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ঘরনার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কামরুল হাসান মিন্টুর সম্পর্কচ্ছেদ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করার লক্ষ্যেই ঘরের ছেলে আবার ঘরে ফিরে এসেছেন।
এদিকে পাবনা জেলা বিএনপির একাধিক নেতা ও মতামতধারীদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, কামরুল হাসান মিন্টু দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত। তার আওয়ামী লীগের আসা যাওয়া নিয়ে বিএনপি বিচলিত নয়। এটা নিয়ে মাতামাতি করার মতো কোন ইস্যু নয়।
তারা বলেন, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত অবস্থানের কারণে সে দল তাকে বাদ দিয়েছিল। আর কোথাও কোন জায়গা হয়নি, তাই নতুন করে একটি জায়গা করে নিয়েছে। তাতে বিএনপি’র কোন যায় আসে না। পাবনার স্থানীয় একাধিক নানা শ্রেণির মানুষের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, আগামীতে পাবনায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হতে যাচ্ছে। কামরুল হাসান মিন্টুর আওয়ামী লীগের যোগদানে এটি ক্রমাগত স্পষ্ট হতে চলেছে বলে তারা মত প্রকাশ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।