জুমবাংলা ডেস্ক : সম্প্রতি একচেটিয়া ব্যবসা এবং ব্যবসায়িক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সমালোচিত হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। এককভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে বিকাশ যে ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে তা অনেকের মতে প্রতারণার শামিল, যা দেশের সাধারণ মানুষকে ক্ষতির সম্মুখীন করছে।
বিকাশ দীর্ঘদিন ধরে এমএফএস সেবার বাজারে তাদের একক আধিপত্য বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন রকমের কৌশল গ্রহণ করেছে। দেশের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল খাতে বিকাশের প্রায় ৮০% বাজার অংশীদারিত্ব রয়েছে। তারা তাদের বড় গ্রাহক ভিত্তি এবং শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে।
বিকাশের প্রভাবশালী অবস্থান এবং মোবাইল অপারেটরগুলোর সাথে বিশেষ চুক্তি থাকার কারণে অন্যান্য এমএফএস সেবাগুলো তারে প্রচার ও প্রসারে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
বিকাশ অনেক সময় তাদের গ্রাহকদের অন্যান্য কম্পিটিটরদের সেবা ব্যবহার থেকে নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন অফার দিয়ে থাকে, যা একচেটিয়া ব্যবসায়িক আচরণের প্রমাণ। তাছাড়া, তারা বিভিন্ন ধরনের ফি ও চার্জের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করছে। এর ফলে বিকাশ তাদের গ্রাহকদের জন্য অন্য সেবা প্রদানকারীদের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।
বিকাশের ব্যবসায়িক ষড়যন্ত্রের অভিযোগের মধ্যে অন্যতম হলো তাদের অত্যধিক চার্জ এবং ফি নীতি। যেখানে ব্যাংকিং লেনদেনের খরচ কম, বিকাশে প্রতি ১ লাখ টাকা পাঠাতে খরচ হয় ১৮৫০ টাকা, যা অন্যান্য এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। এই ধরনের উচ্চ চার্জের মাধ্যমে বিকাশ অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিকাশ তাদের সেবার খরচ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন অজুহাত তুলে ধরে, যেমন প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং নিরাপত্তার মান বৃদ্ধির জন্য খরচ বৃদ্ধির দাবি। কিন্তু বাস্তবে, তাদের অপারেশনাল খরচ অন্যান্য এমএফএস সেবার তুলনায় অনেক কম। এর ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কেন তারা এত বেশি চার্জ করছে এবং সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে?
বিকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা প্রতিযোগীদের বিরুদ্ধে অপব্যবহারমূলক কৌশল গ্রহণ করছে। উদাহরণস্বরূপ, বিকাশ তাদের এজেন্টদের মাধ্যমে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এছাড়াও, বিকাশ তাদের গ্রাহকদের কম্পিটিটরদের সেবা ব্যবহার থেকে নিরুৎসাহিত করতে তাদের প্রচারণায় বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ব্যবহার করে থাকে।
বিকাশের অতিরিক্ত চার্জ নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ, ব্যাংকের তুলনায় ৩৬ গুণ বেশি খরচ!
বিকাশের এ ধরনের একচেটিয়া ব্যবসায়িক নীতি ও প্রতারণামূলক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে গ্রাহক ও বিশেষজ্ঞরা আওয়াজ তুলছেন। তাদের মতে, বিকাশের উচিত গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনা করে তাদের চার্জ কমানো এবং ন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবার বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সুযোগ দিতে হবে, যাতে গ্রাহকরা তাদের প্রয়োজন ও সুবিধামত সেবা ব্যবহার করতে পারেন।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষায় এমএফএস খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উচিত বিকাশের একচেটিয়া আচরণ ও ব্যবসায়িক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অন্যথায়, বিকাশের এই মনোপলি ব্যবসা দেশের অর্থনৈতিক খাত এবং সাধারণ মানুষের আর্থিক স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।