জুমবাংলা ডেস্ক : ব্যাংকগুলোর দেওয়া ঋণ ও নেওয়া আমানতের সুদহার বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোন সেবার মাশুল কত হবে, সেটিও নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু মোবাইল ফোনভিত্তিক আর্থিক সেবার (এমএফএস) ওপর দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নির্ভরশীল হয়ে পড়লেও এটির মাশুল নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিকে সব সময়ই নীরব দেখা গেছে। তবে সেবাটি চালুর ১০ বছর পরে এসে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই এখন গ্রাহকদের জন্য অর্থ উত্তোলনের খরচ কমাতে শুরু করেছে। ফলে প্রতি এক হাজার টাকা উত্তোলনের খরচ বা মাশুল ১৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ২-৪ টাকা পর্যন্ত কমবে।
নতুন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘ট্যাপ’ ও ‘উপায়’ এবং পুরোনো সেবাদাতা ‘নগদ’ তাদের কার্যক্রম শুরুর সময় থেকেই অন্যদের চেয়ে তুলনামূলক কম মাশুল নিয়ে আসছে। সবচেয়ে বড় সেবাদাতা ‘বিকাশ’ নির্দিষ্ট একটি এজেন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের খরচ কমিয়েছে। আর ‘রকেট’ খরচ কমিয়েছে সব এজেন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের মাশুল।
দেশে বর্তমানে মোট ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) দিচ্ছে। গত বছরের নভেম্বরে এসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৯৬ লাখ। তবে সক্রিয় গ্রাহক ছিল ৪ কোটি। ওই মাসে গ্রাহকেরা মোট লেনদেন করেন ৬৭ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গ্রাহকেরা গড়ে দৈনিক ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা লেনদেন করেন।
দেশে এমএফএস সেবা শুরু হয় ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের রকেটের হাত ধরে। শুরু থেকে এজেন্টের টাকা উত্তোলনে রকেট গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১৮ টাকা ৫০ পয়সা। তবে চলতি মাসের শুরুতে রকেট সব এজেন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের নতুন মাশুল নির্ধারণ করে ১৬ টাকা ৭০ পয়সা। এ ছাড়া ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা উত্তোলনে প্রতি হাজারে তারা নিচ্ছে ৯ টাকা। আর যাঁদের বেতন হচ্ছে রকেটের মাধ্যমে, তাঁদের কাছ থেকেও প্রতি হাজারে ৯ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা অবশ্য এটিএম থেকে বিনা খরচে টাকা উত্তোলন করতে পারছেন। রকেটের গ্রাহক এখন ২ কোটি ৭৫ লাখ। প্রতিদিন লেনদেন হয় প্রায় ৫০২ কোটি টাকা।
রকেট ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের একটি সেবা। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন এ নিয়ে বলেন, ‘সবাই খরচ কমাচ্ছে। এ জন্য আমরাও রকেটের সেবায় খরচ কমিয়ে দিয়েছি। এর ফলে সেবাটি থেকে আমাদের কোনো মুনাফা হচ্ছে না, বরং বিভিন্ন খরচের কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে। সব এমএফএস মিলে এজেন্ট ও পরিবেশকদের খরচ কমানো গেলে সবারই মুনাফা হতো।’ গ্রাহকদের জন্য খরচ ১০ টাকায় নামানো সম্ভব বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশও শুরু থেকে এক হাজার টাকা উত্তোলনে ১৮ টাকা ৫০ পয়সা খরচ নিয়ে আসছে। যাত্রার ১০ বছর উপলক্ষে গত বছরের অক্টোবরে বিকাশ নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ট থেকে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত উত্তোলনের বিপরীতে মাশুল হাজারে ১৪ টাকা ৯০ পয়সায় নির্ধারণ করে। এ ছাড়া ব্র্যাক, যমুনাসহ আট ব্যাংকের এটিএম থেকেও প্রতি হাজার টাকা উত্তোলনে একই খরচ নিচ্ছে বিকাশ।
বিকাশের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রাহকেরা ৯০ শতাংশ অর্থ উত্তোলন করেন বাসা অথবা কর্মক্ষেত্রের পাশের কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ট থেকে। আর তাদের সর্বোচ্চ অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ গড়ে ২০ হাজার টাকা। এ জন্য গ্রাহকদের এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিকাশের এখন ৫ কোটি ৮৫ লাখ গ্রাহক রয়েছে, আর গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার বলেন, ‘বিকাশের ১০ বছর উপলক্ষে গ্রাহকদের এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এতে বিকাশের আয়ে কিছুটা প্রভাব পড়লেও অন্য সেবা থেকে তা সমন্বয় হবে। বিকাশে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সেবা যুক্ত হচ্ছে। মানুষের জীবনের সব লেনদেনের মাধ্যম হয়ে উঠছে বিকাশ।’
রকেট ও বিকাশের কর্মকর্তারা বলছেন, খরচ কমানো হলেও এজেন্ট ও পরিবেশকদের কমিশন কমানো হয়নি। মাশুল কমানোর কারণে রকেট ও বিকাশের এজেন্ট ও পরিবেশকদের এ–সংক্রান্ত আয়-ব্যয় সমান হয়ে গেছে। বেতন, প্রচারণা, ভাড়া দিতে সেবাটি লোকসানে চলে যাচ্ছে। তবে এ সেবায় আয় কমে খরচ বাড়লেও অন্যান্য সেবা থেকে তা সমন্বয় করা হচ্ছে। সব প্রতিষ্ঠান মিলে এজেন্ট ও পরিবেশকদের খরচ কমালে সবারই ভালো হতো।
এদিকে ডাক বিভাগের সেবা নগদের যাত্রা শুরুর পর থেকেই সব এজেন্ট থেকে টাকা উত্তোলনে প্রতি হাজারে ১৪ টাকা ৯৪ পয়সা খরচ নেওয়া হচ্ছে। তবে অ্যাপসের মাধ্যমে তুললে খরচ ১১ টাকা ৪৯ পয়সা।
এদিকে নতুন করে আসা ট্যাপ শুরু থেকে অ্যাপসের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনে ১৪ টাকা ৭০ পয়সা নিচ্ছে। আর ইউসিবির সেবা উপায় এজেন্টে ১৪ টাকা ও ইউসিবি এটিএম থেকে অর্থ উত্তোলনে ৮ টাকা খরচ নিচ্ছে। ওয়ান ব্যাংকের সেবা ওকে ওয়ালেট এজেন্টে প্রতি হাজারে ১৮ টাকা ও নিজস্ব এটিএমে ৫ টাকা নিচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।