যে রাতের অন্ধকারে গাব্বর সিংয়ের পিস্তলের আওয়াজে থরথর করে কাঁপত গোটা রামগড়, যে সিনেমায় আমজাদ খানের কণ্ঠে “কিতনে আদমি থে” ডায়লগ আজও মাথায় গেঁথে আছে, সেই শোলে শুধু একটা সিনেমা নয়, একটা কিংবদন্তি। কিন্তু এই কিংবদন্তির পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে এমন সব অবিশ্বাস্য, মজাদার, কখনো হৃদয়বিদারক অজানা তথ্য, যা জানার পর এই মাস্টারপিসটিকে দেখার অনুভূতিই বদলে যাবে। প্রস্তুত থাকুন, কারণ আজ আমরা ডুব দেবো সেইসব চমকপ্রদ গল্পে যেগুলো শোলের মহাকাব্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে!
শোলের জন্ম: সেলুলয়েডে লেখা এক অসম্ভব স্বপ্নের গল্প (H2)
শোলে শুধু একটি একশন-ড্রামা সিনেমা নয়, এটি ছিল এক দুরন্ত সাহসিকতার ফল। রমেশ সিপ্পি, যিনি এর আগে “জঞ্জীর”-এর মতো ব্লকবাস্টার দিয়েছেন, তিনিই এই যুগান্তকারী প্রজেক্টের হোতা। কিন্তু শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না।
বাজেটের বেড়াজাল ও প্রযোজকদের অনীহা (H3)
- অবিশ্বাস্য বাজেট: ১৯৭০-এর দশকে ৩ কোটি টাকার (আজকের হিসেবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা!) বাজেটের প্রস্তাব শুনে প্রযোজকরা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কেউ ভাবতেই পারেননি যে একটি সিনেমায় এত টাকা খরচ করা সম্ভব বা লাভজনক হবে। রমেশ সিপ্পি এবং তাঁর ভাই গোপীচাঁদ সিপ্পি শেষ পর্যন্ত নিজেরাই প্রযোজনা করার সিদ্ধান্ত নেন, জীবনবাজি রেখে।
- শ্যুটিংয়ে বিপত্তি: সিনেমার বিখ্যাত ট্রেনের দৃশ্যগুলো শ্যুট করা হয়েছিল আসল ট্রেনে চড়ে, আসল ট্র্যাকে! নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা প্রায় ছিলই না। ধনঞ্জয় (জয় বচ্চন) যে দৃশ্যে ট্রেনের বগি থেকে বেরিয়ে আসেন, সেটি শ্যুট করতে গিয়ে জয় বচ্চন নিজেই প্রায় গুরুতর আহত হন। কলাকুশলীদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর ঝুঁকি ছাড়া এই দৃশ্যগুলো সম্ভব হতো না। ভারতীয় রেলওয়ের আর্কাইভে সংরক্ষিত সেই সময়ের শ্যুটিং পারমিট এবং স্থানীয় সংবাদপত্রের রিপোর্ট (যেমন ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ এর ১৯৭৪ সালের এপ্রিল সংখ্যা) এই ঝুঁকির প্রমাণ দেয়।
চরিত্রাভিনয়ের পিছনের নাটক (H3)
- গাব্বরের জন্য প্রথম পছন্দ জয় বচ্চনই ছিলেন না! আশ্চর্য হলেও সত্যি, গাব্বর সিংয়ের ভূমিকায় প্রথমে কথা হয়েছিল প্রখ্যাত অভিনেতা ড্যানি ডেনজংপার সঙ্গে। কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। এরপরই রমেশ সিপ্পির নজর পড়ে অমজাদ খানের দিকে, যিনি তখন তেমন পরিচিত মুখ ছিলেন না। অমজাদ খানের ক্যারিয়ারই বদলে গেল এই সিনেমার মাধ্যমে।
- কালীনের আসল নাম: সঞ্জীব কুমার অভিনীত কালীনের চরিত্রটির নাম প্রথমে ‘ফাকিরু’ রাখার পরিকল্পনা ছিল! পরে সেটি বদলে ‘কালী’ রাখা হয় এবং সঞ্জীব কুমারের পরামর্শে ‘কালীন’ করা হয়।
- মৌসম কি কাসাম: হেলেনের জ্বলজ্বলে আইটেম সংগীত “মেহবুবা মেহবুবা” শ্যুট করতে গিয়ে বিপত্তি আটকে। হেলেনের শাড়ির একটি অংশ ট্রেনের দরজায় আটকে যায় এবং তিনি প্রায় গুরুতরভাবে আহত হওয়ার উপক্রম হন। এই ঘটনার পর থেকেই সেটে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সিনেমাটোগ্রাফার জে. পি. সিপ্পি (রমেশ সিপ্পির ভাই) তাঁর স্মৃতিচারণমূলক লেখায় এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন।
পর্দার অন্তরালে: সেই লেজেন্ডারি শ্যুটিং অভিজ্ঞতা (H2)
শোলের শ্যুটিং ছিল এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা, যেখানে সৃজনশীলতা, বন্ধুত্ব এবং অকল্পনীয় পরিশ্রম মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল।
লোকেশন ও সেট ডিজাইনের কাহিনী (H3)
- রামগড়ের খোঁজে: পুরো সিনেমাটি শ্যুট করা হয়েছিল কর্ণাটকের রামনগরমে (কোল্লেগাল লেকের কাছে)। কিন্তু এই লোকেশন খুঁজে পাওয়া সহজ ছিল না। প্রোডাকশন ডিজাইনার রাম ইয়েদেকর বহু জায়গা ঘুরে অবশেষে এই আদর্শ লোকেশনটি খুঁজে পান। রামনগরমের পাহাড়, জলাশয় এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রামগড়ের কাল্পনিক জগৎকে বাস্তব রূপ দিতে সাহায্য করেছিল।
- গাব্বরের ডেন: গাব্বরের খ্যাতিমান ডেনটি (গুহা) কোনো প্রাকৃতিক গুহা ছিল না! এটি সম্পূর্ণরূপে স্টুডিওতে তৈরি একটি সেট ছিল। শিল্পীদের দল মাসখানেক ধরে কৃত্রিম পাথর আর কাঠ ব্যবহার করে এই গুহাটি তৈরি করেছিল, যার ভেতরে আলো-বাতাসের নিখুঁত ব্যবস্থা ছিল। এই সেট নির্মাণের খরচই ছিল তখনকার সময়ে অত্যন্ত চোখে পড়ার মতো।
- মাস্টারপিস মিউজিক: রাহুল দেব বর্মণের সংগীত পরিচালনা শোলেকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। কিন্তু জানেন কি? “হোলি কে দিন দিল খিল জাতে” গানটি রেকর্ড করা হয়েছিল সত্যিকারের হোলির দিনে! কলাকুশলীরা রঙে ভেজা অবস্থায় এই গানটি গেয়েছিলেন, যা গানের উচ্ছ্বাসে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছিল। গানটির শেষে শোনা যায় জয় বচ্চনের স্বতঃস্ফূর্ত হাসি, যা ছিল সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত এবং প্রকৃত আবেগের বহিঃপ্রকাশ।
অভিনেতাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব (H3)
- জয়-অমজাদ-ধর্মেন্দ্র: পর্দার বাইরেও জয় বচ্চন, অমজাদ খান এবং ধর্মেন্দ্রর বন্ধুত্ব ছিল প্রবাদপ্রতিম। তারা প্রায়ই একসাথে সময় কাটাতেন, স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনা করতেন এবং একে অপরকে শটের জন্য মোটিভেট করতেন। এই রসায়ন পর্দায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছিল, বিশেষ করে ঠাকুর, ভীরু ও জয়-এর মেলবন্ধনে।
- সঞ্জীব কুমারের ট্র্যাজেডি: সঞ্জীব কুমার, যিনি কালীনের ভূমিকায় অবিস্মরণীয় অভিনয় করেছিলেন, ব্যক্তিগত জীবনে গভীর দুঃখের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ চলাকালীন সময়ে এই সিনেমাটি শ্যুট করছিলেন তিনি। তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন যে তিনি প্রফেশনালিজমের এক অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন – ব্যক্তিগত যন্ত্রণা কখনোই তাঁর অভিনয়কে প্রভাবিত করতে পারেনি। তাঁর অভিনীত মৃত্যুর দৃশ্যটি বাংলা সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম শক্তিশালী মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।
শোলের লেগাসি: বক্স অফিস থেকে কাল্ট স্ট্যাটাস (H2)
প্রথম মুক্তির সময় শোলে তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি পরিণত হয়েছে এক অমর কিংবদন্তিতে।
মুক্তির পরের হতাশা ও ধীর উত্থান (H3)
- প্রাথমিক ফ্লপ: হ্যাঁ, এটাই নির্মম সত্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শোলে মুক্তি পায় এবং প্রাথমিকভাবে বক্স অফিসে বিশেষ সফলতা পায়নি। এটি তার নির্মাণ বাজেট তুলতে ব্যর্থ হয় এবং প্রযোজকদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে। সমালোচকরাও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন।
- ডাবল শোয়ার ম্যাজিক: শোলের ভাগ্য বদলাতে শুরু করে যখন প্রেক্ষাগৃহে এটি “ডাবল শো” হিসেবে দেখানো শুরু করে (দুটি সিনেমা একসাথে দেখানোর প্রথা)। ধীরে ধীরে, মৌখিক প্রচার এবং দর্শকদের পুনঃপুন দেখা এই সিনেমাটিকে এক “স্লিপার হিট”-এ পরিণত করে। পরের কয়েক বছরে এটি অসংখ্যবার পুনঃমুক্তি পায় এবং প্রতি বারই দর্শক ভিড় জমায়।
- টেলিভিশন বিপ্লব: ১৯৮০ এবং ৯০-এর দশকে যখন টেলিভিশন ভারতের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে শুরু করে, তখন শোলের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়। দূরদর্শন এবং পরবর্তীতে স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে বারবার এই সিনেমাটি দেখানো হলে এটি সমস্ত বয়সের দর্শকের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে, নতুন প্রজন্মের কাছেও।
কালচারাল আইকনে পরিণত হওয়া (H3)
- ডায়লগ যা ইতিহাস: শোলের ডায়লগগুলো বাংলা (ও হিন্দি) চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। “কিতনে আদমি থে?”, “তুমহারে নাম কী বাসন্তী?”, “জো হোথে হ্যায় উসকা ভাই হ্যায় হাম”, “মেরা ক্যায়সা লাগতা হ্যায়?” – এই লাইনগুলো আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। এগুলো শুধু সংলাপ নয়, সাংস্কৃতিক রেফারেন্স পয়েন্ট।
- হোমেজ ও প্যারোডি: অসংখ্য চলচ্চিত্র, টিভি শো এবং ওয়েব সিরিজ শোলেকে হোমেজ (শ্রদ্ধাঞ্জলি) দিয়েছে বা এর বিভিন্ন দৃশ্য ও চরিত্রের প্যারোডি করেছে। এটি সিনেমাটির স্থায়ী প্রভাবের প্রমাণ। এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরেও, যেমন কুয়েন্টিন টারান্টিনোর মতো নির্মাতারা শোলের স্টাইল এবং ন্যারেটিভকে প্রশংসা করেছেন।
- শোলের প্রভাব শুধু বিনোদনেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে প্রবেশ করেছে, মার্চেন্ডাইজিং হয়েছে (টি-শার্ট, মগ ইত্যাদি), এবং একাডেমিক আলোচনার বিষয়বস্তু হয়েছে। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (JNU) সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাস ও সংস্কৃতির পাঠ্যক্রমে শোলেকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শোলের সেই বিখ্যাত অমীমাংসিত রহস্য! (H2)
শোলের গল্পের কিছু দিক আজও দর্শকদের মাথা চুলকায়, তর্ক বাধায়।
সবচেয়ে বড় ধাঁধা: গাব্বরের আসল নাম কী? (H3)
সিনেমায় কখনোই গাব্বর সিংয়ের আসল নাম উল্লেখ করা হয়নি! এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছিল চরিত্রটিকে আরও রহস্যময় এবং ভীতিকর করে তোলার জন্য। অনেকে অনুমান করেন যে তিনি হয়তো সর্দার জয় সিং বা অন্য কোনও নামের ছিলেন, কিন্তু এর কোনও ক্যানোনিকাল (আধিকারিক) উত্তর নেই। এই রহস্য গাব্বরকে আরও মরমী করে তুলেছে।
“দেবীদাস” কানেকশন (H3)
খেয়াল করেছেন কি যে ঠাকুর (ধর্মেন্দ্র) এবং গাব্বরের (অমজাদ খান) মধ্যে কথোপকথনে শার্প্লেসের “দেবীদাস” উপন্যাসের উল্লেখ বারবার এসেছে? গাব্বর যখন ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করে, “দেবীদাস পড়েছেন?” – এটি শুধু কথার কথা নয়। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই উল্লেখটি গাব্বরের ভেতরের ক্ষয়ে যাওয়া মানবিকতা, ভালোবাসায় ব্যর্থ হওয়ার যন্ত্রণা এবং ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নেওয়ার পটভূমি বোঝানোর ইঙ্গিত দেয়। এটি চরিত্রের গভীরতা বাড়ায়। বাংলা সাহিত্যের এই মাস্টারপিসের সাথে সংযোগ স্থাপন করে সিনেমাটিকে একটি সাহিত্যিক প্রেক্ষাপটও দেয়।
জয় ও রাধার ভবিষ্যৎ? (H3)
সিনেমার শেষ দৃশ্যে জয় (জয় বচ্চন) এবং রাধা (জায়া ভাদুড়ী) একসাথে হাসতে হাসতে চলে যায়। কিন্তু তাদের ভবিষ্যৎ কী? সিনেমা তা বলে না। তারা কি সুখে ছিল? নাকি গাব্বরের অপরাধের ছায়া তাদের জীবনকে গ্রাস করেছিল? এই খোলা সমাপ্তি দর্শকদের নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয় এবং সিনেমাটিকে আরও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রাখতে সাহায্য করে। এটি দর্শকদের কল্পনাশক্তিকে উসকে দেয়।
জেনে রাখুন (H2)
১. শোলের স্ক্রিপ্ট কতদিনে লেখা হয়েছিল?
শোলের কাহিনী এবং চিত্রনাট্য লিখতে জোড়াদার লেখক জোড় – সেলিম-জাভেদের (সেলিম খান ও জাভেদ আখতার) সময় লেগেছিল প্রায় দেড় বছর। তারা গাব্বরের চরিত্রটি তৈরি করতে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন শেক্সপিয়ারের “ম্যাকবেথ” এবং “হ্যামলেট”-এর খলনায়কদের দ্বারা। তাদের লক্ষ্য ছিল এমন এক খলনায়ক সৃষ্টি করা যে ভয়ানক তো বটেই, কিন্তু যার মধ্যে এক ধরনের ট্র্যাজিক মহিমাও আছে। এটি ছিল সেই সময়ের জন্য এক যুগান্তকারী চিন্তাভাবনা।
২. শোলের কোন দৃশ্যটি সবচেয়ে বেশি বার শ্যুট করতে হয়েছিল?
সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল ধর্মেন্দ্রর (ঠাকুর) সেই আইকনিক ডায়লগ – “হাম অংগুর দেবতা, ঠাকুর বালাজী ভগত” – সংবলিত দৃশ্যটি। এই একটি দৃশ্য শ্যুট করতে প্রায় ২৫ টেক (বার) নেওয়া হয়েছিল! ধর্মেন্দ্র সম্পূর্ণরূপে চরিত্রে ডুবে যেতে চাইছিলেন এবং নিজের অভিনয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তিনি শ্যুটিং চালিয়ে যান। এটি তাঁর ডেডিকেশনের পরিচয় দেয়।
৩. শোলের কোন গানটি প্রথমে সিনেমার জন্য লেখা হয়নি?
আশ্চর্য হলেও সত্যি, শোলের সবচেয়ে বিখ্যাত গানগুলোর একটি “মেহবুবা মেহবুবা” প্রথমে এই সিনেমার জন্য লেখাই হয়নি! এটি রাহুল দেব বর্মণ আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছিলেন। রমেশ সিপ্পি গানটি শুনে মুগ্ধ হন এবং সেটিকে শোলেতে জায়গা করে দেন। গানটি শুধু হিটই হয়নি, এটি হেলেনের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স হিসেবে স্বীকৃত।
৪. শোলের কোন অভিনেতা নিজের ডায়লগ নিজে ডাব করেননি?
হেলেন, যিনি মৌসমের ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন, তিনি তাঁর চরিত্রের ডায়লগ নিজে ডাব করেননি। তাঁর জন্য অন্য একজন শিল্পী (প্রায়ই বলা হয় নাজনীন বা অন্য কেউ) কণ্ঠ দিয়েছিলেন। সেই সময়ে এটি একটি প্রচলিত প্রথা ছিল, বিশেষ করে যেসব অভিনেত্রীর উচ্চারণে সামান্য ভিন্নতা থাকত।
৫. শোলের শ্যুটিংয়ে কোন অভিনেতা সবচেয়ে বেশি কৌতুক করতেন?
শ্যুটিং সেটে সবচেয়ে প্রাণবন্ত এবং মজাদার মানুষটি ছিলেন ধর্মেন্দ্র। তিনি প্রায়ই সবার সঙ্গে কৌতুক করতেন, বিশেষ করে জয় বচ্চন ও অমজাদ খানকে টিটকারি দিতেন। এই হালকা-পাল্লা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সেটের চাপ কমাতে এবং দলের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
৬. শোলের কোন জিনিসটি এখনও সংরক্ষিত আছে?
শোলের স্মৃতি হিসেবে অমজাদ খানের পরা গাব্বর সিংয়ের সেই বিখ্যাত কালো চশমাটি সংরক্ষিত আছে! এটি বর্তমানে একজন ব্যক্তিগত সংগ্রাহকের সংগ্রহে রয়েছে। এছাড়াও, সিনেমায় ব্যবহৃত মূল স্ক্রিপ্টের কিছু পৃষ্ঠা এবং ফটোগ্রাফও চলচ্চিত্র আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে।
শোলে শুধু একটি সিনেমাই নয়, এটি আমাদের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক জীবন্ত কিংবদন্তি, যার প্রতিটি ফ্রেমে মিশে আছে অসামান্য প্রতিভা, দুঃসাহসিকতা এবং অগাধ ভালোবাসার গল্প। রমেশ সিপ্পির দূরদর্শিতা, সেলিম-জাভেদের কালজয়ী লেখনী, রাহুল দেব বর্মণের ম্যাজিক্যাল সুর, আর জয়, ধর্মেন্দ্র, অমজাদ, হেমা, জায়া, সঞ্জীব কুমারদের অনির্বচনীয় অভিনয় একত্রিত হয়ে যে ম্যাজিক তৈরি করেছিল, তা বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমাকে চিরদিনের জন্য সমৃদ্ধ করেছে। বিখ্যাত সিনেমার এই অজানা তথ্যগুলো জানার পর এই মাস্টারপিসটিকে আবারও দেখুন – প্রতিটি দৃশ্য, প্রতিটি সংলাপ নতুন অর্থে ভরপুর হয়ে উঠবে। আপনার প্রিয় শোলের মুহূর্ত বা কোন অজানা তথ্য আমাদের সাথে কমেন্টে শেয়ার করুন! চলুন, এই কিংবদন্তিকে আবারও স্যালুট জানাই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।