জুমবাংলা ডেস্ক: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় এবারও লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। তবে তীব্র গরমের কারণে লিচু লাল হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাগান মালিকরা। একই সঙ্গে তারা অভিযোগ করেছেন, কৃষি কর্মকর্তারা কখনোই বাগানে এসে তাদের সহযোগীতা করেননি। উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, তীব্র গরমের কারণে এমনটি হচ্ছে। তবে বৃষ্টি হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার জানিয়েছেন, উপজেলায় এবছর ৪৩০ হেক্টর জায়গায় লিচুর আবাদ হয়েছে। লিচু বাগান আছে ৯০০টি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার লিচু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভারত সীমান্ত ঘেঁষা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা। এই উপজেলায় সব ধরনের সবজি ও ফলের ভালো উৎপাদন হয়। বিশেষ করে এখানকার সুস্বাদু লিচুর সুনাম রয়েছে পুরো বাংলাদেশ জুড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৫০ বছর আগে এই উপজেলায় লিচুর উৎপন্ন শুরু হয়। জায়গা ও শ্রম কম হওয়াই লিচুর ব্যবসা শুরু করেন স্থানীয় কৃষকরা।
বিজয়নগর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, আদমপুর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমুড়া, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, বক্তারমুড়া, রূপা, শান্তামুড়া, কামালপুর, কচুয়ামুড়া, গোয়ালনগর, ভিটিদাউপুর, পত্তন, এলাকায় লিচুর বাগান রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই একটি করে লিচুর গাছ আছে। যাদের বাড়িতেই একটু জায়গা আছে, তারা প্রত্যেক বাড়িতে লিচুর গাছ লাগান। এসব গাছে পাটনাই, বম্বে, চায়না থ্রি, চায়না-২ ও এলাচি জাতীয় লিচুর ফলন হয়।
উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে পরিচিত আউলিয়া বাজার। এছাড়াও সিংগারবিল, হরষপুর, চম্পকনগর বাজারে বিক্রি হয় অধিকাংশ লিচু। এসব বাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা পায়কারি দরে লিচু কিনে নিয়ে যান।
সরেজমিনে গত রোববার ও গতকাল সোমবার উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটিদাউদপুর, সেজামুড়া ও কামালমুড়ার বিভিন্ন বাগানে ঘুরে দেখা যায়, বাগান পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগান মালিকরা। এসময় কথা হলে মুকুন্দপুর কামালমুড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহাবুদ্দীন বলেন, ‘আমার ৭০টি লিচু গাছ রয়েছে। এবছর আমার গাছে লিচু কম এসেছে। অনেক বছর পরপর গাছে কম বেশি লিচু হয়ে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লিচু গাছে যতটুকু ফলন এসেছে তা যথেষ্ট ভালো। এবছর ৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’
কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ বা সাহায্য সহযোগীতা পেয়েছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে শাহাবুদ্দীন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা ১৫-২০ বছর ধরে লিচু বাগান করছি। কিন্তু কোনদিন কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তাকে বাগানে এসে একবারও খবর নিতে দেখিনি।’
ভিটিদাউদপুর গ্রামের বাগান মালিক আবুল কাসেম মোল্লা বলেন, ‘বাগানে লিচু এসেছে। কিন্তু সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এবং তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় লিচু লাল হয়ে যাচ্ছে আর ফেটে যাচ্ছে।’ কৃষি অফিসাররা যোগাযোগ করেন না আমাদের সঙ্গে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সেজামুড়া গ্রামের বাগান মালিক কাউছার ভূইয়া বলেন, আমার ৪টি বাগানে ১৭০টি গাছ আছে। গাছে এবছর প্রচুর লিচুর ফলন হয়েছে। কিন্তু গত দুইদিন ধরে গরমের তাপে হটাৎ লিচু লাল হয়ে যাচ্ছে। আমি আশাবাদী এবছর ১২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবো।
উপজেলার সবচেয়ে বেশি পাহাড়পুর ইউনিয়নে লিচুর বাগান রয়েছে। সেখানে দায়িত্বরত কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলমকে তাপমাত্রার কারণে লিচু লাল হয়ে যাওয়া ও কৃষকদের বাগানে তদারকি না করার করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, লিচু বেশি তাপমাত্রার কারণে লাল হয়ে যাচ্ছে তবে বৃষ্টি হলে ঠিক হয়ে যাবে। পাহাড়পুর ইউনিয়নে ৩ জন কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও আমি একাই কাজ করছি। যারা যোগাযোগ করেন তাদের বাগানেই আমি যাই।
বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাব্বির আহমেদ বলেন, উপজেলায় এবছর ৪৩০ হেক্টর জায়গায় লিচুর আবাদ হয়েছে। লিচু বাগান আছে ৯০০টি। আবহাওয়া অনুকলে থাকলে ১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার লিচু বিক্রির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলার সব বাগান কৃষি কর্মকর্তারা তদারকিতে যান না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপজেলায় আমাদের ৩০ কর্মকর্তার প্রয়োজন। আছেন ১৮জন। জনবল কম হওয়ার কারণে সব বাগানে তদারকি করা যাচ্ছে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।