আওয়ামী লীগের সময় সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং প্রয়াত আলী যাকেরের প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক গ্রুপের দখলে ছিল ৪০০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপনের বাজারের ৮০ শতাংশ। তারা ১৭টি ভিন্ন নাম ব্যবহার করে কোম্পানি তৈরি করে বাজারকে কুক্ষিগত করে রাখে। এভাবে তারা গণমাধ্যমকে জোর করে নিয়ন্ত্রণ করত আওয়ামী লীগের সময়ে।
অনুসন্ধান থেকে দেখা যায় যে, তারা ব্যতীত অন্য কেউ যেন বিজ্ঞাপনের কাজ না পায় সেজন্য অনৈতিক উপায়ে অবলম্বন করতেন। বাংলালিংক এর বিজ্ঞাপনের কাজ জোর করে নিয়ে নেয় এশিয়াটিক গ্রুপ। তবে বাংলালিংক দাবি করছে তারা শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রেখে এবং নীতিমালা মেনে কাজ করেছে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের চাপে ইউনিলিভারের বিজ্ঞাপনের কাজ জোর করে আদায় করে এশিয়াটিক গ্রুপ। সকল ধরনের বিজ্ঞাপনের কাজ যেন এশিয়াটিক গ্রুপের হাতে থাকে সেজন্য তারানা হালিম, জুনাইদ পলক এবং আসাদুজ্জামান নূর অবৈধ উপায় অবলম্বন করেন।
বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করে এমন অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছে আমার দেশ। এশিয়াটিক গ্রুপের বিরুদ্ধে তাদের প্রত্যেকের অভিযোগ হলো গ্রুপটি বিজ্ঞাপনের বাজার নিজেদের দখলে রেখেছে নানা অনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে। এশিয়াটিক গ্রুপও ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে সব কাজই করছে। তবে অন্য বিশেষায়িত প্রতিদ্বন্দ্বী এজেন্সিগুলোকে নানা অনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে বাজার থেকে বের করে দিতে সক্ষম হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এশিয়াটিক এখন ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে এসব কাজই করছে।
এশিয়াটিক গ্রুপ গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনের কাজ করে। আবার রবি বা বাংলালিংকের কাজও করে। অথচ তিনটি টেলিকম কোম্পানিই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রচলিত বিজ্ঞাপন নীতির আওতায় এটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও, এশিয়াটিক গ্রুপ ভিন্ন তিনটি কোম্পানি তৈরি করে একাই এই বড় বড় তিনটি টেলিকম কোম্পানির বিজ্ঞাপনের কাজ বাগিয়ে নিয়েছে।
আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে যেমন খুনের অভিযোগ আছে, তেমনি এশিয়াটিক গ্রুপের মাধ্যমে দেশের গণমাধ্যম শাসনের অভিযোগও রয়েছে। তার ক্ষমতার দাপটে বিজ্ঞাপনের বাজার যেমন শুধু এশিয়াটিকনির্ভর হয়ে পড়ে, তেমনি কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বিল আটকে দিয়ে গণমাধ্যমগুলোকেও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতেন তিনি।
দেশের গণমাধ্যমগুলোর অনেকেরই অভিযোগ বিজ্ঞাপনের প্রকৃত মূল্য থেকে কয়েকগুণ কম মূল্যে বিজ্ঞাপন প্রচার বা প্রকাশ করতে বাধ্য করা হয় এশিয়াটিকের মাধ্যমে। ফলে বিজ্ঞাপন সংখ্যা বাড়লেও আয় কমেছে, আর্থিকভাবে রুগ্ন হয়ে পড়েছে অনেক মিডিয়া।
আসাদুজ্জামান নূরের গণমাধ্যমগুলোকে নিয়ন্ত্রণের নানা কৌশলের অন্যতম ছিল মাসের পর মাস কোনো কোনো পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলকে বয়কট করা। এশিয়াটিক গ্রুপের প্রস্তাবিত কোনো দর মেনে নিতে অস্বীকার করলে এমনটা করা হতো বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী কয়েকটি পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলের কর্তৃপক্ষ।
ভারতে পালিয়ে যাওয়া হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি দেশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আওয়ামী ‘গবেষণা’ প্রতিষ্ঠান সিআরআই। অভিযোগ আছে, প্রতিবেশী একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সরাসরি তত্ত্বাবধানে গবেষণার নামে মূলত বিরোধী মতাদর্শের নেতাকর্মীদের দমনের ছক কষা হতো এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
মুজিব শতবর্ষ উদযাপনে শুধু গণপূর্ত অধিদপ্তরের (পিডব্লিওডি) ইলেকট্রিক্যাল বিভাগ থেকেই ৯৮ কোটি ৫১ হাজার ৬৭ টাকা নিয়েছে এশিয়াটিক গ্রুপ। নির্বাচনের আগে শত শত কোটি টাকা খরচে দেশে এবং বিদেশে শেখ হাসিনা সরকারের ‘উন্নয়ন প্রচারণা’ চালানোর দায়িত্ব পালন করেছে এশিয়াটিক। বিদেশে হাসিনার ইতিবাচক প্রচারণার জন্য এশিয়াটিকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ফোরথট লবিস্ট নিয়োগ করত।
গত বছর ৫ জুলাই কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়াই পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানের জনসংযোগ কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার কাজ করেছে এশিয়াটিক গ্রুপ। এতে খরচ হয়েছিল ৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশের বেশিরভাগ বহুজাতিক কোম্পানির শীর্ষ কর্তারাই বিদেশি। তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগই আবার প্রতিবেশী একটি দেশের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।