মহাকাশ গবেষণায় ২০২৪ সাল ছিল বেশ ঘটনাবহুল। প্রযুক্তিগত সক্ষমতার কারণে মানুষ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও ভালো করে দেখতে পারছে মহাবিশ্ব। জানতে পারছে মহাকাশের অজানা ইতিহাস, মিলছে জটিল সব প্রশ্নের উত্তর। মহাকাশ নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে এ বছর।
সাইকির উদ্দেশ্যে সাইকি
গ্রহাণুটির নাম সাইকি। গ্রহাণুর উদ্দেশ্যে যে মিশন পরিচালনা করা হয়েছে, তার নামও সাইকি মিশন। ৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে নভোযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলেছে, এ অভিযানের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পাথুরে বা গ্যাসীয় নয়, ধাতব এক জগৎ অনুসন্ধানে করছে তারা। সাইকি গ্রহাণুর অবস্থান মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানের অংশে। ধাতবীয় গঠন একে অনন্য করে তুলেছে। নিকেল ও লোহায় তৈরি এ গ্রহাণুর বৈশিষ্ট্য সৌরজগতের প্রথম দিকে সৃষ্ট গ্রহগুলোর কোর বা কেন্দ্রের মতো।
একে তাই সৌরজগতের বিল্ডিং ব্লক বললেও ভুল হবে না। গ্রহাণুটির ব্যাস প্রায় ২২৬ কিলোমিটার। সাইকি মিশনে প্রথমবারের মতো নতুন এক লেজার যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বেতার তরঙ্গের বদলে নিয়ার-ইনফ্রারেড আলো কাজে লাগিয়ে যোগাযোগ করা হবে। ফলে আগের চেয়ে আরও দ্রুত সময়ে আরও বেশি পরিমাণ তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে পৃথিবীর সঙ্গে। নতুন এ প্রযুক্তির উদ্ভাবক নাসা।
নাম দেওয়া হয়েছে, ডিপ স্পেস অপটিক্যাল কমিউনিকেশন বা ডি-সক। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই গ্রহাণুতে যে পরিমাণে সম্পদ আছে, তার মূল্য প্রায় ১০ কুইন্টিলিয়ন ডলার। এমন গ্রহাণু পৃথিবীতে নিয়ে আসতে পারলে গোটা পৃথিবীর অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে যাবে। এই সম্পদ পৃথিবীর সবার মধ্যে ভাগ করে দিলে মোটামুটি সবাই হয়ে যাবেন কোটিপতি। তবে আসলেই তেমন মূল্যবান সম্পদ ওই গ্রহাণুতে আছে কি না, তা ভবিষ্যতে বোঝা যাবে। ২০২৯ সালে গ্রহাণুটিতে পৌঁছাবে এই নভোযান।
মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে যোগাযোগ হবে আরও দ্রুত
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া অঙ্গরাজ্যে একটি নতুন লেজার চালিত প্রকল্প শুরু হয়েছে চলতি বছর। এই প্রকল্পের সাহায্যে বিশ্ব যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে গবেষকদের আশা। তাঁরা জানিয়েছেন, এ প্রকল্পের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। জার্মানির একটি কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে মহাকাশে, সেটি থেকে পাওয়া লেজার সংকেত সফলভাবে গ্রহণ করতে পেরেছে গ্রাউন্ড স্টেশন।
ফলে স্পেস-টু-আর্থ, অর্থাৎ মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে যোগাযোগ সম্পন্ন হয়েছে আগের চেয়ে প্রায় এক হাজার গুণ দ্রুত। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘টেরানেট’। এই প্রকল্পের নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার (ডব্লিউএ) অ্যাস্ট্রোফোটোনিকস বিভাগের বিজ্ঞানী সাশা শেডিউই। আর প্রকল্পটি অর্থায়ন করেছে অস্ট্রেলিয়ান স্পেস এজেন্সির মুন টু মার্স ডেমোনস্ট্রেটর মিশন।
১৯৫৭ সালে স্পুটনিক-১ উৎক্ষেপণের পর থেকেই স্যাটেলাইটগুলো রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে পৃথিবীতে যোগাযোগ করে আসছে। কিন্তু এই রেডিও তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি কম হওয়ায় এগুলোর ডেটা বা তথ্য পাঠানোর ক্ষমতা ছিল সীমিত। প্রায় ৭০ বছর ধরে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বর্তমানে ডেটা স্থানান্তরের জন্য যে পরিমাণ দ্রুত গতি প্রয়োজন, এ পদ্ধতিতে তা সম্ভব নয়। অর্থাৎ পদ্ধতিটি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না।
আসলে, আগের তুলনায় এখন ডেটা পাঠানো হয় অনেক বেশি। প্রতি মুহূর্তে হাজার হাজার উপগ্রহ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। সেগুলো থেকে বিপুল তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই তথ্যগুলো পৃথিবীতে পাঠাতে উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি যুক্ত লেজার প্রযুক্তি হতে পারে বেশ সম্ভাবনাময় ব্যবস্থা।
নভোচারীদের জন্য নতুন স্পেসস্যুট
মহাকাশে মানববসতি স্থাপনের লক্ষ্যে বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন। তেমনই এক অভূতপূর্ব প্রযুক্তি মহাকাশচারীদের জন্য এই নতুন স্পেসস্যুট। এটি মূত্র থেকে পানি তৈরি করতে সক্ষম। নভোচারীরা দীর্ঘদিন ম্যাক্সিমাম অ্যাবজর্ভেন্সি গার্মেন্টস (ম্যাগ) স্যুট ব্যবহার করে অস্বস্তি এবং স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। তবে নতুন এই স্যুটে সে সমস্যার সমাধান করবে কিছুটা। মহাকাশে আগেও মানুষ প্রস্রাবকে পানিতে পরিণত করতে পারত।
তবে সে যন্ত্র থাকত নভোযানে। এখন প্রতিটা স্পেসস্যুটেই থাকবে এই যন্ত্র। এই স্যুটই তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েইল কর্নেল মেডিসিন ও কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। স্পেসস্যুটটা ৩৮ সেন্টিমিটার লম্বা, ২৩ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ২৩ সেন্টিমিটার উঁচু। ওজন প্রায় ৮ কেজি। নভোচারীদের পিঠে বহনের জন্য তুলনামূলক ছোট ও হালকা। নাসা ২০২৭ সালে আর্টেমিস ৩ মিশনে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মানুষ পাঠানোর চেষ্টা করছে। তাই ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে প্রতিনিয়ত উন্নত করা হচ্ছে স্পেসস্যুট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।