তাকী জোবায়ের: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফরিদুল হক এবং তার স্ত্রী যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপসহ পড়ার সুযোগ পেয়েছেন প্রায় ৫ মাস আগে। ফল সেশনের ক্লাস শুরু হয়েছে ২৪ এপ্রিল থেকে। এখন তাদের যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও ডলার সংকটের কারণে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন এখনও অধরাই রয়ে গেছে। তাদের দৌঁড়-ঝাপ এখন শ্রেণি কক্ষ কিংবা লাইব্রেরিতে নয়, এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে।
ফল সেশনের ক্লাস প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত তারা স্টুডেন্ট ফাইল খুলতে পারেননি। ডলার সংকটের কারণে স্টুডেন্ট ফাইল খোলা অঘোষিতভাবে বন্ধই রেখেছে ব্যাংকগুলো।
ডলার সংকটের কারণে শুধু বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা নন, বিদেশ যাত্রায় নানা ধরণের ভোগান্তির মুখে পড়েছেন অন্যান্যরাও। সাধারণ পর্যটক হিসেবে বিদেশে যেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের ডলার সংগ্রহ করতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে। ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে তাদের।
মূলতঃ দেশের জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে বাকি সব খাতে ডলারের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ প্রসঙ্গে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি অ্যান্ড সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জুমবাংলাকে বলেন, আমরা নতুন কোন স্টুডেন্ট ফাইল খোলার বিষয়টি ডিসকারেজ করছি।
এই অবস্থার মধ্যেই বিদেশে উচ্চশিক্ষা কিংবা ভ্রমণে আরও বড় দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক পদক্ষেপে। আইএমএফের ঋণ পেতে সংস্থাটির শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভ সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সামনে ডলার বিক্রির পরিমাণ আরও কমানো হতে পারে এমন ইঙ্গিত মিলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।
নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে দিনে ৬ কোটি ডলারের বেশি বিক্রি করবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে।
গত দুই মাসেই ডলার বিক্রিতে হ্রাস টেনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন সিদ্ধান্তে ডলার বিক্রির পরিমাণ আরো কমে যাবে। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ডলার বিক্রি হয়েছে ১১ বিলিয়ন ডলার।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিক্রি ছাড়িয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে বিক্রি হয় ১১ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে গড়ে ১ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। এপ্রিল থেকে ৫ জুন পর্যন্ত দুই মাস পাঁচ দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করেছে দুই বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দুই মাসেই প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলার বিক্রি কমানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ৫ জুন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব ম্যানুয়ালে তৈরি হিসাব। তবে শিগগিরই আইএমএফের বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাব করতে হবে। জানা গেছে, আইএমএফ-এর হিসাবে বর্তমানে নিট রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে রয়েছে। আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে আগামী সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়নে নেওয়ার শর্ত রয়েছে। ৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বারাতে গিয়ে উচ্চশিক্ষা, ভ্রমণ এমনকি অনেক প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলাও বন্ধ রয়েছে।
ডলারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আইএমএফ যখন শর্ত দিয়েছে তার আগে থেকেই পরিস্থিতি নাজুক ছিল। দেশের ডলার পরিস্থিতি গত বছরের জুলাই থেকেই খারাপ অবস্থা। সম্প্রতি পরিস্থিতি একটু ভালোর দিকে যাচ্ছিল। তবে ডলার ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমরা আগে থেকেই কেয়ারফুল ছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি ডলার বিক্রি কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমরা আরো বেশি সতর্ক হবো।’
সংকট সমাধানে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি, ‘সংকট সমাধানে এই মুহূর্তে যেকোন মূল্যে রেমিট্যান্স বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। যেহেতু জ্বালানি সংকটের কারণে শিল্পে উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। তাই চাইলেই রপ্তানি বাড়ানো যাচ্ছে না। তাই রেমিট্যান্সকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এর সাথে বড় কাজটি হবে ডলারের রেট ঠিক করে দেওয়া। তাহলে রফতানি আয় বাড়ানো সম্ভব হবে। রেট ঠিক করতে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিচ্ছে। দেখি কি হয়।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।