বিনোদন ডেস্ক : ঢাকাই ছবির মন্দা সময় যাচ্ছে এখন। হাতে গোনা দুয়েকটা ছবি ভাল যাচ্ছে। কিন্তু যে হারে ছবি নির্মিত হচ্ছে সে হারে দর্শক টানছে না মোটেও। ব্যবসায়িক সাফল্য পেতে ও দর্শককে প্রেক্ষাগৃহমুখী করতে নির্মাতারা কিংবা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো ছবির নায়ক-নায়িকা হিসেবে বিদেশি তারকাদের দিকে ঝুঁকছে, চমক রাখার প্রত্যাশায়।
দেশীয় অনেক তারকাই বেকার রয়েছেন সিনেমার অভাবে। কিন্তু নির্মাতা বা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সেদিকে কর্ণপাত করছে না।
নতুন নতুন ছবির ঘোষণা আসে বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে। কিন্তু সেই ঘোষণা মহরত পর্যন্তই থেকে যায়, শুটিং পর্যন্ত আর গড়ায় না। কিছু বা শুটিং শুরু করলেও সেগুলো মুক্তির মুখ দেখে না। এরকম নজির ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক রয়েছে।
আর এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে সিনেমার ঘোষণা দিয়েই নায়ক-নায়িকা হিসেবে বিদেশি তারকাদের নাম উল্লেখ করা। কিন্তু দিনশেষে সেইসব ছবির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। যদিও বা ছবির শুটিং শুরু করতে পারেন তাদের দেখা যায় শেষ পর্যন্ত দেশি তারকা নিয়েই মাঠে নেমেছেন।
মূলত মিডিয়ার মনোযোগ ও স্ট্যান্টবাজি করতেই বিদেশি তারকাদের নাম ঘোষণা করে আলোচনায় থাকতে চান নির্মাতা ও প্রযোজকরা।
অতীতে বিদেশি অনেক তারকাই ঢাকাই ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে রয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী, শতাব্দী রায়, রচনা ব্যানার্জি, মুনমুন সেন, ভিক্টর ব্যানার্জি, প্রসেনজিৎ, ঋতুপর্ণা, স্বস্তিকা মুখার্জি, রাইমা সেন, রিয়া সেন, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল, জিৎ, সোহম, অঙ্কুশ, ওম, শ্রাবন্তী, শুভশ্রী, প্রিয়াঙ্কা, বনি প্রমুখ।
কিন্তু সেইসব ছবিতে বিদেশি তারকাদের নিয়ে এত মাতামাতি ছিলো না। তাদের উপর ভর করে কোনো স্ট্যান্টবাজিও ছিলো না যেটা বর্তমানের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকাল যে কেউ এসে সিনেমার ঘোষণা দিয়ে দিচ্ছেন বিদেশি তারকাদের নাম বলে বলে। সেগুলো চলে আসছে গণমাধ্যমে খুব সহজেই বিদেশি তারকার খ্যাতির উপর ভর করে। কিন্তু অধিকাংশ সিনেমাই থেকে যাচ্ছে অসম্পূর্ণ।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন তবে বিদেশি তারকাদের নাম ভাঙ্গিয়ে পরিচালক হতে যাওয়া বা প্রযোজক হিসেবে আলোচনায় আসতে চাওয়া?
শুধু নায়ক-নায়িকাই নয়, পার্শ্ব, মন্দ কিংবা কমেডি চরিত্রের জন্যও বিদেশি শিল্পীদের দিকে ঢুঁ মারছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিচালক-প্রযোজকদের মধ্যে ইদানীং দেশের শিল্পীদের নিয়ে ছবি বানানোর চিন্তাই যেন কমে গেছে। কথায় কথায় শিল্পীর খোঁজে তারা ছুটছেন ওপারে। শুধু প্রথম প্রতিষ্ঠিত সিনেমার তারকা নয়, কলকাতার ধারাবাহিক নাটকের নায়িকাদের প্রতিও নির্মাতাদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
এতো গেলো পর্দার খবর। পর্দার আড়ালে থাকা কলাকুশলীদেরকেও গুরুত্বের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে দেশের ছবিগুলোতে। পরিচালক, গীতিকার, সংগীত পরিচালক, কস্টিউম ডিজাইনার, নৃত্য পরিচালক প্রভৃতি বিভাগেও ভিনদেশিদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে বাড়াবাড়ি রকমের। এ নিয়ে দেশীয় শিল্পী-কলাকুশলীদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলোতে চুক্তিতে থাকা দুটি দেশের শিল্পী-কুশলীদের নিয়েই কাজ করতে হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই এককভাবে দেশীয় প্রযোজনার ছবিতেও বিদেশি শিল্পী-কুশলীদের নাম বেড়েছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এসব করেও কিন্তু কোনো ছবি সাফল্য পাচ্ছে না। বিদেশ থেকে ভাড়া করে আনা মেধায় যদি লাভই না হয় তাহলে নিজ দেশের মেধাকে এড়িয়ে যাওয়ার যুক্তিটা কী? শুধুমাত্র প্রচার আর নিজেকে বিদেশি তারকা নিয়ে কাজ করা নির্মাতা-প্রযোজক হিসেবে পরিচয় দেয়ার আনন্দই কী মূল! যদি তা হয় তবে সেটা শিল্পের মুখোশে আমাদের সিনেমার দৈন্যতারই পরিচয় বহন করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষণীয় নায়ক-নায়িকা বা কিংবা অন্যান্য কুশলীদের নাম ঘোষণায় কলকাতার পাশাপাশি এখন বলিউডও যোগ হয়েছে। আসছেন সানি লিওনরা। গাইছেন সুনিধি-অরিজিৎরা। ক্যামেরার পেছনে কাজ করছেন স্যাভি, ববিরা। কিন্তু সেসব কাজ মানের বিবেচনায় মোটেও উৎরে যেতে পারছে না ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রির শিল্পী-কুশলীদের।
বিভিন্ন সময় বলিউডের অনেক তারকাই বাংলাদেশের সিনেমায় কাজ করেছেন। ২০০১ সালে নার্গিস আক্তার পরিচালিত ও ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ‘মেঘলা আকাশ’-এ অভিনয় করেন বলিউড অভিনেত্রী শাবানা আজমী এবং আয়ূব খান। এরপর ২০০২ সালে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘শত্রু ধ্বংস’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’ খ্যাত অভিনেত্রী ভাগ্যশ্রী।
বলিউডের শরদ কাপুরকে দেখা গিয়েছে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘স্বামী ছিনতাই’ সিনেমায়। মনোয়ার খোকন পরিচালিত ‘স্বামী কেন আসামি’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন চাঙ্কি পাণ্ডে।
২০১০ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘গোলাপি এখন বিলেতে’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। ২০১১ সালে রুবাইয়াত হোসেনের ‘মেহেরজান’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন বলিউড স্টার অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রী জয়া বচ্চন। এছাড়াও ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত গুণী নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘ডুব’ সিনেমায় মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলিউডের গুণী অভিনেতা ইরফান খান।
তবে এখন অনেকে ফাঁকা আওয়াজ তৈরি করে আলোচনায় থাকতে বলিউডের তারকাদের নাম ব্যবহার করছেন। বেশ কয়েকবার শোনা গেছে এই দেশের সিনেমায় কাজ করবেন ইমরান হাশমি, শ্রদ্ধা কাপুর। কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন ঘটেনি। সম্প্রতি জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত ‘মাসুদ রানা’ সিরিজ চলচ্চিত্রে বলিউডের শ্রদ্ধা কাপুর অভিনয় করবেন বলে জানা যায়। পরে নিশ্চিত হওয়া গেল খবরটি ভুয়া।
এছাড়াও অনেকদিন আগে শোনা গিয়েছিল বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন বলিউড তারকা রানি মুখার্জি। ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় ‘ক্র্যাক প্লাটুন’ নামের সিনেমায় রানির অভিনয়ের গুঞ্জন অনেকটাই বিস্তৃত হয়েছিল গণমাধ্যম এবং সিনেপাড়ায়। তবে এটা যে নিছকই গুঞ্জন ছিল, সে ভুল খোদ রানিই ভাঙিয়েছেন।
একইভাবে অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন বলিউডের অভিনেত্রী সানি লিওন। অনেক জোরে শোরে সে গুঞ্জন শোনা গেলেও তা গুঞ্জনই রয়ে গেল। তবে সম্প্রতি ‘বিক্ষোভ’ নামে ছবির একটি গানে তাকে পারফর্ম করতে দেখা যাবে নিশ্চিত করেছেন পরিচালক শামীম আহমেদ রনি।
বিদেশি তারকাদের নাম ব্যবহার করে ছবির প্রচারণা চালিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির মাধ্যমে সিনেমার প্রতি দর্শকের আগ্রহ-উৎসাহ কমানো হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।