জুমবাংলা ডেস্ক: সমুদ্রবিজ্ঞানে জাপানে পিএইচডি করে দেশে ফিরে কৃষিতে মনোনিবেশ করা ড. নজরুল ইসলাম তার খামারে ফলিয়েছেন বিস্ময়কর এক পেঁপে। যার নাম জায়ান্ট পার্ল, যেটির একটিই ওজনে সাত থেকে আট কেজি হয়ে থাকে। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ড. নজরুলের খামারে ফলন হওয়া পেঁপেটি কোনো হাইব্রিড বা বিদেশি জাতের পেঁপে নয় বরং পুরোদস্তুর দেশি জাতের। ছোট আকৃতির এই পেঁপেগাছে ধরছে ৩/৪ কেজি থেকে শুরু করে ৭/৮ কেজি ওজনের পেঁপে। এলাকার কৃষকদের অনেকেই এখন ড. নজরুলের কাছ থেকে তার ফলানো বিস্ময়কর এই পেঁপেগাছের চারা ও বীজ সংগ্রহ করছেন। দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদক এম রবিউল ইসলাম রবি-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারাও ইতিমধ্যে ড. নজরুলের খামার পরিদর্শন করে পেঁপেগুলো দেখেছেন। তারা বলেছেন, জায়ান্ট পার্ল পেঁপে আকৃতিতে যেমন অনেক বড়, তেমনি খেতেও সুস্বাদু। কৃষকরা এটি আবাদ করলে বেশ লাভবান হবেন। কারণ সাধারণ পেঁপের তুলনায় ফলন অনেক বেশি হয়। এই পেঁপে বাজারে থাকা অন্য পেঁপের মতো সবজি হিসেবেও যেমন খাওয়া যায়, আবার পাকা ফল হিসেবেও বিক্রি করা যাবে। আকারের মতোই স্বাদের হওয়ায় এই পেঁপেটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
ড. নজরুল ইসলাম জানান, তিনি পড়ালেখা করেছেন ফিশারিজ বিষয়ে। কিন্তু পরে জাপানে পিএইচডি করেন সমুদ্রবিজ্ঞানে। পরে দেশে ফিরে এসে যোগ দেন জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) একটি প্রকল্পে। করোনাকালে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেলে গ্রামে ফিরে কৃষিকাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। এরপর কোটচাঁদপুরে গড়ে তোলেন কৃষি খামার। ১০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা এই খামারে রয়েছে দুটি পুকুরও। যার একটিতে মাছ, আরেকটিতে হয় মুক্তা চাষ। এই দুটি পুকুর খনন করতে গিয়ে তোলা মাটিতে জায়ান্ট পার্ল পেঁপের আবাদ করছেন ড. নজরুল।
বিস্ময়কর এই পেঁপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলাকারই একজন কৃষকের কাছ থেকে বীজটি পেয়েছিলাম আমি। তিনি যথাযথভাবে আবাদ করতে পারেননি বলে ফলন পাননি। আমি খামারের পুকুরের পাড়ের উর্বর মাটিতে আবাদ করলাম। পরে বিশেষ কিছু কৌশল অবলম্বন করে সাফল্য পেলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারের হাইব্রিড পেঁপেও দেড় কেজি ওজনের বেশি সাধারণত হয় না। কিন্তু আমার এই পেঁপে একটি ৭/৮ কেজি পর্যন্ত ওজনের হয়।’
ড. নজরুল জানান, জায়ান্ট পার্ল পেঁপের ভালো ফলন পেতে হলে প্রথমত মাটির মান খুব ভালো হতে হবে আর জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। পুকুরের তোলা মাটি সাধারণত অনেক বেশি উর্বর হয় বলে তিনি পেঁপেটি আবাদের জন্য সেই মাটি বেছে নিয়েছেন।
নজরুল বলেন, ‘পেঁপে চাষ সহজ মনে হলেও আসলে কিন্তু ততটা সহজ ব্যাপার না। আমি কখনো রাসায়নিক স্যার ব্যবহার করিনি। বরং জৈব সার ব্যবহার করেছি।’
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, হাইব্রিড পেঁপে অনেক ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও জায়ান্ট পার্ল পেঁপে খুব একটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় না। আর যেকোনো পরিবেশের জন্য সহনশীল। যে কারণে এটি অনেক সম্ভাবনাময়।
ড. নজরুল জানান, তার উদ্ভাবিত জায়ান্ট পার্ল পেঁপের এক একটি গাছে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ চার মণ পর্যন্ত পেঁপে হতে পারে। এর মধ্যে প্রথম দিকের পেঁপেগুলো ৭/৮ কেজি ওজনের হয়। কখনো কখনো দশ কেজি পর্যন্ত হতে পারে একেকটি পেঁপের ওজন। আর দ্বিতীয় ধাপে যে পেঁপে পাওয়া যায় ওই একই গাছ থেকে সেগুলো ৪/৫ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। তবে এক বছরে ফল সংগ্রহের পর দ্বিতীয় বছরের পর নতুন করে গাছ রোপণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাহলে আবার প্রথম দফার মতো বড় সাইজের পেঁপে পাওয়া যাবে। চারা বোনার পর ছয় মাসের মধ্যে ফল বাজারে নেওয়ার উপযোগী হয়।
নিজের উদ্ভাবিত জায়ান্ট পার্ল পেঁপের এই জাত কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে চান ড. নজরুল। তিনি বলেন, ‘আমার কাছ থেকে অনেকে এখন চারা ও বীজ নিচ্ছে। সবার কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। যারা খামারে এই পেঁপে দেখতে আসছেন তাদের খাওয়ানোর পর বীজগুলো সংরক্ষণ করছি। পরে এগুলো থেকে চারা তৈরি করব।’ মাছ ও মুক্তা চাষ এবং জায়ান্ট পার্ল পেঁপেসহ অন্যান্য ফসল চাষের কৌশল সম্পর্কে এলাকার বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বলেও জানান নজরুল।
চাকরিতে যোগ দিলেই ৫৭ হাজার টাকা বোনাস, তবুও পাওয়া যাচ্ছে না কর্মী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।