আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‘পোল টু পোল ইভি’ নামের এক প্রকল্পে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির মাধ্যমে পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত সফলভাবে যাত্রা শেষ করেছেন স্কটিশ পরিব্রাজক জুটি ক্রিস ও জুলি রামজি।
১৮ ডিসেম্বর নিজেদের নয় মাস দীর্ঘ এ যাত্রা শেষ করার ঘোষণা দিয়েছেন ক্রিস ও জুলি, যেখানে ২৭ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দেন তারা।
কেবল বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নয়, বরং উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিশ্বের প্রথম গাড়ি ভ্রমণের ঘটনাও এটি।
এ দম্পতি তাদের গন্তব্যে পৌঁছান ১৫ ডিসেম্বরেই (শুক্রবার)। তবে, খবরটি শেয়ার করার জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে স্যাটেলাইট সংযোগ ফিরে আসা পর্যন্ত।
মাইলফলকটি অর্জনের জন্য তারা ব্যবহার করেছেন নিসানের বিদুচ্চালিত গাড়ি ‘আরিয়া ই-৪ওর্স’। গাড়িটিকে ‘মডিফাই’ করেছে আইসল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ কোম্পানি ‘আর্কটিক ট্রাক’, যেখানে ৩৯ ইঞ্চির ডানার মতো দেখতে চাকা যোগ করার পাশাপাশি কয়েকটি বরফ-বান্ধব যন্ত্রপাতিও ছিল।
গাড়িতে ‘পাওয়ারট্রেইন’ যোগ করার পাশাপাশি এর ‘সাসপেনশন’-এর উচ্চতাও কিছুটা বাড়ানো হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে গাড়িবিষয়ক সংবাদ সাইট ইলেক্ট্রেক।
তবে, বিদ্যুচ্চালিত গাড়িতে অতিরিক্ত ভর যুক্ত করার মানে দাঁড়ায়, এর গতিসীমা ২৪০ থেকে ৩২০ কিলোমিটারের মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে, যেখানে গাড়িটির সর্বোচ্চ গতিসীমা ছিল ৪৩৭ কিলোমিটার।
এদিকে, আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিক অঞ্চল দিয়ে ভ্রমণের সময় গাড়ির ব্যাটারি গরম রেখে এর কার্যকারিতা সমুন্নত রাখতে বিভিন্ন ধরনের পন্থা অবলম্বন করেছেন রামজি দম্পতি। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, গাড়িকে ঠাণ্ডা বাতাস থেকে রক্ষা করতে গাড়ির নীচের অংশ ও সামনের রেডিয়েটরে তুষারের দেয়াল ব্যবহার করেছেন তারা। এমনকি খুব বেশি বাতাস না থাকলে, পুরো গাড়িকে ঢেকে রাখার জন্য একটি তাবুও ব্যবহার করেছেন তারা।
গাড়িটিকে চার্জ দেওয়ার জন্য এ জুটি অঞ্চলের আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে পাঁচ কিলোওয়াটের একটি উইন্ড টার্বাইন বা একটি ‘সোলার হাইব্রিড চার্জিং সলিউশন’-এর প্রোটোটাইপ ব্যবহার করেছেন।
এ প্রচেষ্টাগুলো ব্যর্থ হলে, কিছু ক্ষেত্রে তারা পেট্রোল জেনারেটরও ব্যবহার করেছেন, বিশেষ করে আর্কটিক অঞ্চলগুলোয়, যেখানে এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করার একরকম বাধ্যতামূলকই বলা যায়। এ ছাড়া, ডিজেল সমর্থিত যানবাহনের বৈদ্যুতিক সংস্করণের অস্তিত্বও ছিল না তাদের এ যাত্রায়।
নিজেদের ইউটিউব চ্যানেল ‘এক্সপিডিশন পোর্টাল’-এ ক্রিস ব্যাখ্যা করেন, এ প্রকল্প নিয়ে কাজ করার কারণ ছিল, মেরু অঞ্চলগুলোতে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি যে ডিজেল চালিত গাড়ির নির্ভরযোগ্য বিকল্প হতে পারে, তার প্রমাণ দেখানো।
মেরুগুলোয় ভ্রমণের মাঝপথে দুই আমেরিকা মহাদেশের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করেছেন এ জুটি। এর মধ্যে চার্জারের সহজলভ্যতার কারণে উত্তরাংশের ভ্রমণ কিছুটা সহজ ছিল। কিন্তু দক্ষিণাংশের বেলায় পুরো বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। তাই, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্য দিয়ে ভ্রমণের সময় ইতালিভিত্তিক ইভি চার্জিং কোম্পানি ‘এনেল এক্স ওয়ে’র সঙ্গে কাজ করেছে এ জুটি। বিশেষ করে, পেরুর অংশে।
এর চেয়েও ভাল বিষয় হল, কোম্পানিটি এ প্রকল্পে ব্যবহার করা নতুন শ্রেণির চার্জার বাজারে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার মাধ্যমে তাদের বিস্তৃতি প্যান আমেরিকান অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়বে।
বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নিয়ে ক্রিস ও জুলি রামজি এবারই প্রথম শিরোনামে এলেন, বিষয়টি এমন নয়। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি চালিয়ে ‘মঙ্গল র্যালি’ অতিক্রমের কৃতিত্ব অর্জন করে এ স্কটিশ জুটি। আর ওই প্রকল্পে তারা ব্যবহার করেছিলেন নিসানের ‘লিফ অ্যাকসেন্টা’ গাড়ি।
আগের প্রকল্পে যুক্তরাজ্য ও তুরস্কে গাড়ি চার্জ দেওয়া তুলনামূলক সহজই ছিল। তবে, এ যাত্রার পরবর্তী অবস্থায় তাদেরকে নির্ভর করতে হয়েছে স্থানীয় প্লাগ সকেটের ওপর। এর মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে অনেক স্মরণীয় মূহুর্তও কাটানোর সুযোগ পান তারা। সে যাত্রায় তারা ৫৬ দিনে ১৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। আর গাড়ির গতিসীমা (১৪৪ কিলোমিটার) বিবেচনায় নিলে বিষয়টি খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল।
“তবে, আমরা আনন্দিত যে ২০১৭ সালে র্যালির প্রকল্প শেষ করার পর ওই রুটে বড় চার্জিং নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে।” –বলেন ক্রিস।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।