জুমবাংলা ডেস্ক : ইসলামি ইতিহাসে জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. একজন অতি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রখ্যাত সাহাবি। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় সাহাবিদের একজন। তিনি হাদিসের বিশাল সংকলক। ১৫৪০ টি হাদিস সংকলন করেছেন। তিনি মহান যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এক সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। তার মৃত্যু সন ৭৮ হিজরি।
পিতা আব্দুল্লাহ রা.-এর সাথে তিনি উহুদ যুদ্ধে শামিল হলে পিতা এক পর্যায়ে শহীদ হন। তখন থেকে যেন তার ঘাড়ে পাহাড়ের মত পরিবারের বোঝা চেপে বসে।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি. বলেন, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন,হে জাবের, কী ব্যাপার, আমি তোমাকে ভগ্নহৃদয় দেখছি কেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমার আব্বা (উহুদের যুদ্ধে) শহিদ হয়েছেন এবং অসহায় পরিবার-পরিজন ও কর্জ রেখে গেছেন।
তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা কীভাবে তোমার আব্বার সাথে মিলিত হয়েছেন আমি কি তোমাকে সেই সুসংবাদ দিব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা কখনো কারো সাথে সরাসরি কথা বলেননি কিন্তু তিনি তোমার বাবাকে জীবন দান করে তাঁর সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। (তিরমিজি:৩০১০ ইবনে মাজাহ: ১৯০)
এভাবে পরিবারের গুরুদায়িত্ব তার ঘাড়ে চেপে বসলে, সবগুলো থেকে কাটিয়ে ওঠার কৌশল অবলম্বন করেন। বিবাহিত নারী পরিবারের সঠিকভাবে পরিবারের খোঁজখবর নিবে,তাদের দেখভাল করবে, সেজন্য বিধবা নারীকে বিয়ে করেন। কুমারী মেয়েকে বিয়ে করেননি। জীবনের একটি গুরত্বপূর্ণ অধ্যায় পরিবারের জন্য উৎসর্গ করেন।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত জাবের রা.-থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে জাবের, তুমি বিয়ে করেছ কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কেমন? কুমারী না অকুমারী? আমি বললাম, না (কুমারী নয়) বরং অকুমারী। তিনি বললেন, কুমারী মেয়েকে বিয়ে করলে না কেন? সে তো তোমার সাথে আমোদ-প্রমোদ করত। আমি বললাম,
হে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমার আব্বা উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছেন। রেখে গেছেন নয়টি মেয়ে। এখন আমার নয় বোন। একারণে আমি তাদের সাথে তাদেরই মত একজন অনভিজ্ঞ মেয়েকে এনে একত্রিত করা পছন্দ করলাম না। বরং এমন একটি মহিলাকে (বিয়ে করা পছন্দ করলাম) যে তাদের চুল আঁচড়িয়ে দিতে পারবে ও তাদের দেখাশোনা করতে পারবে। (এ কথা শুনে) তিনি বলেছেন, ঠিক করেছ। (সহিহ বোখারি, হাদিস:৪০৫২)
মূলত এটা ছিল তার এক গভীর অনুভূতি ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। হজরত জাবের রা.-এর এই সিদ্ধান্তের পেছনে যে মানবিক ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তা বর্তমান সমাজেও মূল্যবান অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। তার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র একজন সাহাবির ব্যক্তিগত জীবনসংক্রান্ত বিষয় ছিল না; বরং একটি বড় শিক্ষা ছিল আত্মত্যাগ, দায়িত্ব ও পরিবারের প্রতি ভালোবাসার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।