জুমবাংলা ডেস্ক : সরকার পতনের পর রাজনৈতিক সব দল মিলেই অন্তর্বর্তী নতুন সরকার গঠনে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে তুলে ধরেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
সেসময় এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “খুব সময় নিয়ে সুচিন্তিতভাবে করা হয়নি। আর সাংবিধানিক পথে যাত্রাটা যদি ভুল হয়ে থাকে, তা আমাদের সবার ভুল।”
ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সরকার পতনের সে সময়কার পরিস্থিতি তুলে ধরে কেন সাংবিধানিক পথেই নতুন সরকার দায়িত্ব নিল, কেন বিপ্লবী সরকার হল না? সেই ব্যাখ্যা সোয়া ২ মাসের বেশি সময় পর দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “এই প্রশ্নটা অনেকেরই, এটা নিয়ে এর আগে বলিনি। আজকে বলছি।”
আইন উপদেষ্টা এমন এক সময়ে এ বিষয়ে কথা বললেন যখন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভের পর এ নিয়ে সাংবিধানিক সংকট হবে কি না সেই বিষয় আলোচনায় এসেছে। ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের পর বিপ্লবী সরকার গঠন না করে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কবি ও রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মজহার।
‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা: আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে আসিফ নজরুল এ বিষয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, “সরকার পতনের পর প্রথম যে মিটিংটা হল, সেখানে আমি গেলাম। আমাকে সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে একজন ফোন করল। আমি তো হতবাক। আমি তো বুঝতেই পারছি না, আমাকে কি মারার জন্য ফোন করেছে? আমার স্ত্রী হু হু করে কান্না শুরু করল, বলল ‘তুমি যাইও না, তোমাকে মেরে ফেলবে’। তারপর আমি যখন গেলাম, গিয়ে দেখি বাংলাদেশের সকল পলিটিক্যাল পার্টি সেখানে আছে, আওয়ামী লীগ ছাড়া।”
বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, হেফাজত সবার প্রতিনিধিদের থাকার কথা তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, “সাংবিধানিক পথে যাত্রা উনারা সবাই মিলে শুরু করেছেন। তাহলে আমি কে? আমাকে উনারা বললেন, আপনি সামনে থাকেন, তাহলে ছাত্র-জনতা উত্তেজিত হবে না।”
উপদেষ্টা নির্বাচনের কিছু বিষয়ে ছাত্র নেতারা মতামত নিলেও পুরো প্রক্রিয়ায় তিনি ছিলেন না বলেও দাবি করেন।
তিনি বলেন, “পরে গণতন্ত্র মঞ্চও আসছে। যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, প্রত্যাকটা দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এত বড় টেবিল, এক কোণার মধ্যে বসেছিলাম আমি। সেখানে আমি একটা কথায় সবচেয়ে জোর দিয়ে বলেছিলাম, যে খালেদা জিয়াকে আজকেই মুক্তি দিতে হবে।”
সাংবিধানিক পথে যাত্রা যদি ভুল হয়ে থাকে, সে ভুল সবার মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পুরো প্রক্রিয়ায় কেউ তো বলে নাই, কেন সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় শপথ নেব? এত ছাত্রনেতা ছিল, এতগুলো পলিটিক্যাল দল, নো বডি, কেউ তো বলে নাই। এখন এটা কি দোষের ব্যাপার? না। তখন এমন একটা সিচ্যুয়াশন ছিল, খুব সময় নিয়ে সুচিন্তিতভাবে করা হয়নি। আর সাংবিধানিক পথে যাত্রাটা যদি ভুল হয়ে থাকে, তা আমাদের সবার ভুল।”
প্রকাশনা সংস্থা আদর্শ ও ব্রেইন আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ বলেন, “সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। গণতন্ত্র কেন চাই, তা নির্ধারণ করতে না পারলে আমরা গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে পারব না।”
গণতন্ত্র মানেই বহুমতের জায়গা মন্তব্য করে তিনি বলেন, “অনেক বিষয়ে আমরা একমত হব, আবার দ্বিমত পোষণ করব। দ্বিমত করার অধিকার তৈরি করতে হবে।” রাজনৈতিক দলের সংস্কারের বিষয়ে কথাও বলেন তিনি।
”জুলাইয়ে যা হয়েছে, এটা অভ্যুথান, বিপ্লব নয়। আমি তা মনে করি। এই অভ্যুথানের মধ্যদিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল কি তাদের বদলের চেষ্টা করছে? করেনি। রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই উপলব্ধি নাই কেন? যে তাকেও বদলাতে হবে। রাজনৈতিক দলকে একাউন্টেবল না করে রাষ্ট্রকে একাউন্টেবল করা যাবে না। সংস্কারের আলোচনা একদিনে হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে চাপ দিতে হবে, আপনারাও বদলান।”
নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের সদস্য জাহেদ উর রহমান বলেন, “আমরা যদি মনে করি, অল্প সময়ের মধ্যে বড় সংস্কার করে দেশকে পালটে ফেলব। সেটা হবে ভুল।”
নিজের অজান্তেও অনেকে স্বৈরাচারী হয়ে উঠেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।]
সূচনা বক্তব্যে আদর্শের প্রকাশক মাহাবুব রহমান বলেন, “মত প্রকাশের স্বাধীনতায় আদর্শ অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, সামনে আরও ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। জুলাই গণঅভ্যুথান নিয়ে আদর্শ সর্বাধিক মানসম্পন্ন বই প্রকাশ করতে চাই।”
আরেক আয়োজক প্রতিষ্ঠান ব্রেইনের নির্বাহী সদস্য সাদিক মাহবুব বলেন, “বাংলাদেশের দেয়ালে দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিগুলো সংগ্রহ করছি। এক সময় দেয়াল থেকে হয়ত গ্রাফিতি মুছে যাবে, কিন্তু আমাদের পরের প্রজন্ম যেন জানতে পারে। এজন্য আমরা ডিজিটালি গ্রাফিতিগুলো সংগ্রহ করছি।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা উমামা ফাতেমা বলেন, “যারা এখন সংবিধানের দোহায় দেন, তারা ভুলে যান একটা অভ্যুথান হয়েছে। হাজারো মানু্ষের লাশের উপর দাঁড়িয়ে একটা সরকার তৈরি হয়েছে।”
বর্তমান সরকার আন্দোলনে নিহত ও আহতদের ব্যাপারে দায়িত্ব নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাইয়েদ আবদুল্লাহ বলেন, “নতুন বাংলাদেশে এটা বড় পরিবর্তন যে মানুষ আর নিজেদেরকে প্রজা না, নাগরিক ভাবতে শুরু করেছে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আওয়ামী ফ্যাসিবাদে একটা ইন্টেলেকচুয়াল শ্রেণি ছিল, একটা ব্যবসায়ী শ্রেণি ছিল। একটা ওলামা শ্রেণি ছিল। কিছু হলেই তারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদিকে সুরক্ষা দিয়ে গেছে। সবকিছু যে গণভবনকেন্দ্রিক হয়েছে, যাদেরকে দিয়ে হয়েছে। তারা এই ফ্যাসিজমকে সুরক্ষা দিয়ে গেছে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক নেতা সারজিস আলম বলেন, “এখনও সারাদেশে মামলার ব্যবসা শুরু হয়েছে। এটা কারা করছে? দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ। বিগত ১৫ বছরে যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, সেটি না ভেঙে হাত বদল হয়েছে। আগের সিন্ডিকেটও এখন ভাগ পায়। আমরা সবাই সুবিধাবাজ, স্বার্থপর।”
আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক মনির হায়দার ও সাহেদ আলম।
অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘বিপ্লবী সরকার’ ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে রিট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।