আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জেনারেশন এক্স বা জেন-এক্স। সংজ্ঞায়নের দিক দিয়ে – মূলত ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে জন্মেছেন, এমন ব্যক্তিদের জেনারেশন-এক্স এর অংশ মনে করা হয়। প্রজন্মটি সময়ের সঙ্গে নানা কারণেই বিরক্ত হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বেশি বেশি একক ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা এবং কিছু সময় ‘পালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা’ তারা অনুভব করেন।
২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ২০০ মার্কিন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মাসিক জরিপ সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে গত মে মাসে মর্নিং কনসাল্ট এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে উঠে এসেছে, ছুটিতে যাওয়ার প্রাথমিক কারণ হিসাবে তারা ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন, যা অন্য যে কোনো প্রজন্মের তুলনায় উচ্চতর শতাংশ। তাদের ভ্রমণের কারণ ও ধরণ উভয় ক্ষেত্রেই পরিবর্তন এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেন-এক্সরা পরিবার ছাড়া ভ্রমণে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। পারিবারিক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। পারিবারিক ভ্রমণে তারা কম যাচ্ছেন। তারা বুকিং দিচ্ছেন বন্ধুদের সঙ্গে বেশি ছুটি কাটাতে বা একক ভ্রমণের জন্য।
৬০ শতাংশের বেশি জেনারেশন-এক্স ছুটিতে বুকিংয়ের প্রাথমিক কারণ হিসাবে ‘পালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা’র কথা উল্লেখ করেছেন, অন্য যে কোনো প্রজন্মের তুলনায় বেশি। ভ্রমণ ও আতিথেয়তা বিশ্লেষক লিন্ডসে রোশকে মর্নিং কনসাল্টের প্রতিবেদনে লিখেছেন, ১০ জনের মধ্যে ৬ জনেরও বেশি জেন-এক্স বলেছেন, ‘পালানোর আকাঙ্ক্ষা’ তাদের ভ্রমণের পরিকল্পনাকে উত্সাহিত করেছে। এটি সম্ভবত তাদের বর্তমান জীবনের চাপকে প্রতিফলিত করে।
১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়ে ভ্রমণের পরিকল্পনা করা জেন-এক্স ২০২১ সালের অক্টোবরে ২৮ শতাংশ ছিল, যা এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। মর্নিং কনসাল্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সম্ভবত জীবনের নানা পরিবর্তনে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। যেমন – কাজ থেকে অবসর গ্রহণ করা কিংবা সন্তানেরা বাড়ির বাইরে চলে যাওয়ার কারণে।
মার্কিন আদমশুমারি ব্যুরোর সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্তানরা বড় হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে- এমন বাড়ির সংখ্যা ২০১৪ সালে ২২.৫ মিলিয়ন ছিল। ২০২১ সালে আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫৫ বছরের বেশি বয়সী ৬০.২ শতাংশ বাবা-মায়ের বাড়িতে কোনো সন্তানই ছিল না। সেই বাবা-মা হয় একা বা কোনো সঙ্গীর সাথে থাকতেন।
সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, পারিবারিক ছুটির দিনে বন্ধুদের সাথে একক ভ্রমণগুলো বৃদ্ধি পেয়েছে। যা আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, আরও ব্যক্তিগত এবং স্ব-কেন্দ্রিক ভ্রমণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।
ভ্রমণ ও আতিথেয়তা বিশ্লেষক লিন্ডসে রোশকে প্রতিবেদনে লিখেছেন, জেন-এক্সরা একটি নতুন জীবনের পর্যায়ে প্রবেশের সাথে সাথে তাদের ভ্রমণের অভ্যাসগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। তা দেখে আমি সত্যিই আগ্রহী।
পরিবার ছাড়া ভ্রমণে প্রভাবিত হওয়ার আরেকটি কারণ বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে। মর্নিং কনসাল্টের তথ্য অনুযায়ী, সঙ্গীর সঙ্গে ছুটি কাটাতে যাওয়া জেন-এক্সের সংখ্যা ২০২১ সালের অক্টোবরের তুলনায় কমে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৪৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা তিন বছরের ব্যবধানে সর্বনিম্ন।
বোলিং গ্রিন স্টেট ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এবং ২০২৩ সালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের বিবাহবিচ্ছেদের হার ১৯৯০ সালে প্রতি ১০০০ জনে ১৩.১ শতাংশ থেকে বেড়ে, ২০২১ সালে ১৫.৮ শতাংশ হয়েছে। ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এই হার দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে প্রতি হাজারে ৫.১ শতাংশ থেকে ১০.৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
আর্থিক চাপও জেন-এক্সের ভ্রমণের অভ্যাস বদলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিজনেস ইনসাইডার এবং ইউগভের এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজার ৮০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেক প্রজন্ম তাদের সর্বোচ্চ উপার্জনের বছরগুলোতে থাকা সত্ত্বেও আর্থিকভাবে অনিনিরাপদ বোধ করেন। এই আর্থিক চাপ ভ্রমণের সিদ্ধান্তগুলোকে প্রভাবিত করে। যদিও এই প্রবণতা সমস্ত প্রজন্মের মধ্যেই দেখা গেছে।
![](https://inews.zoombangla.com/wp-content/uploads/2024/03/34-5.jpg)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।