জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের পঞ্চগড়ে সোমবার পাওয়া গেছে বিরল প্রজাতির একটি সাপ। সাপের এই প্রজাতিটি সাধারণভাবে ‘রেড কোরাল কুকরি’ নামে পরিচিত। সাপটি এখন রাজশাহী স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন আছে। তবে তার প্রাণ ঝুঁকিমুক্ত কিনা আগামী ৭২ ঘণ্টার আগে বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা।
প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মত সাপের এই প্রজাতিটি দেখা গেছে এবং পুরো পৃথিবীতেই মাত্র ২০-২২ বারের মত দেখা গেছে এই সাপ।
সাপের পরিচয় :
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খান জানান, সাপটি ধরা পড়ার পর সেখান থেকে তার কাছে ছবি ও ভিডিও পাঠানো হয়েছিল। ছবি ও ভিডিও দেখে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন পঞ্চগড়ে পাওয়া সাপটি রেড কোরাল কুকরি সাপ।
তিনি সাপটির মাথার গঠন ও মুখের আকার দেখে এবং এর নড়াচড়ার ভঙ্গি ও ধরণ দেখে সাপটির পরিচয় চিহ্নিত করেছেন। তবে তিনি বলেন, রেড কোরাল কুকরি সাপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য কমই পাওয়া যায়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশের খেরি জেলায় দেখা গিয়েছিল এই সাপ।
তিনি বলেন, “এটি খুবই বিরল প্রজাতির সাপ। বাংলাদেশে আগে কখনোই এ সাপ দেখা যায়নি। আর পুরো পৃথিবীতেই মাত্র ২০ থেকে ২২ বারের মত দেখা গেছে এই সাপ।”
মূলত ভারতের হিমালয় অঞ্চলের সাপ এটি, কিন্তু সাধারণত ভারতের উত্তরপ্রদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে এই সাপের দেখা মেলে।
সহযোগী অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খান বলেন, এই সাপ সাধারণত লালচে উজ্জ্বল কমলা রঙের হয়। সাপটি মৃদু বিষধর। এই প্রজাতির সাপ নিশাচর এবং বেশির ভাগ সময় মাটির নিচেই থাকে।
যে সাপটি পাওয়া গেছে, তার দৈর্ঘ্য দেখে বোঝা যায় সেটি একটি পূর্ণ বয়স্ক সাপ। সে কারণে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন পঞ্চগড়ের আশেপাশের এলাকায় এ জাতের আরো সাপ থাকতে পারে। সাধারণত এটি খুব বেশি লম্বা হয় না, মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে। সাপের প্রজাতিটির বৈজ্ঞানিক নাম ওলিগোডন খেরিনসিস (Oligodon Kheriensis)।
যেভাবে দেখা মিললো এই সাপের :
সোমবার সকালে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার এক বাজারের কাছে একটি নির্মাণাধীন ভবনে এক্সক্যাভাটর যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটছিলেন নির্মাণ শ্রমিকেরা। হঠাৎ এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসে কয়েকটি সাপ।
ভেতরে আরো সাপ থাকতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে তারা দ্রুত সেখানকার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মী ও সাপ উদ্ধারকারী মো. শহীদুল ইসলামকে খবর দেন।
তিনি এসে মোট আটটি সাপ উদ্ধার করেন, যার একটি ছিল রেড কোরাল কুকরি সাপ।
শহীদুল ইসলাম বলেন, এক্সক্যাভাটরের আঘাতে পেটের কাছে আঘাত লেগে সাপটির নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গিয়েছিল। সাপটি এখন চিকিৎসাধীন আছে। সুস্থ হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারে পাঠানো হবে।
যা বলছে চিকিৎসক :
এদিকে সাপটির প্রাণের শঙ্কা এখনো কাটেনি বলে জানিয়েছেন রাজশাহী ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক বোরহান বিশ্বাস রমন। তিনি বলেন, ‘সাপটির নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাওয়ায়, সেটি এখনো খুবই জটিল অবস্থায় আছে। চিকিৎসা শুরু হয়েছে তার, আমরা এটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ব্যান্ডেজ করলেই সাপটি নড়াচড়া করে সেটি খুলে ফেলছে, যে কারণে তার চিকিৎসায় দীর্ঘ সময় লাগছে।’
সূত্র : বিবিসি বাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।