বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : এই পৃথিবীতেই আমাদের এতো এতো ঝামেলা আছে যে, কেউ নিশ্চয়ই চাইবে না সূর্য থেকে নতুন কোনো বিপদ ধেয়ে আসুক। সমস্যা হচ্ছে সূর্যকে ধ্বংস করার ক্ষমতা আমাদের নেই, বরং এর দয়াতেই চলতে হয় আমাদের।
তবে, শীঘ্রই নাসা নতুন এক ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে। এর ফলে জানা সম্ভব হবে বিধ্বংসী কোনো শিখা কখন তার থাবা বসাতে পারে পৃথিবীতে।
মহাকাশের আবহাওয়া সম্পর্কে বোঝা ও ভবিষ্যদ্বাণী দেওয়া নাসার কার্যক্রমের বড় এক অংশ। মহাবিশ্বে কোনো বাতাস নেই। সেখানে আপনার “হায়, কী ভয়াবহ বিকিরণ!” বলে চিৎকারও কেউ শুনতে পাবে না।
ফলে, সেখানকার এই গুরুত্বপূর্ণ ডেটা শনাক্ত ও পৃথিবীতে পাঠানোর জন্য নির্ভর করতে হয় বিশেষ শ্রেণির স্যাটেলাইটের ওপর।
এমনই এক বিষয় হচ্ছে সৌর বায়ু। একে ‘সূর্য থেকে আসা সূক্ষ্ণ উপাদানের অবিরাম ধারা’ হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। এমনকি স্বয়ং নাসাই এর সম্পর্কে বলার মতো ভালো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকক্রাঞ্চ।
সাধারণত এই প্রবাহকে শুষে নেয় পৃথিবী ঘিরে থাকা বায়ুমণ্ডলের চৌম্বক স্তর। তবে, যখন সৌর ঝড়ের মতো ঘটনা ঘটে, তখন এটি এতোটাই তীব্র হতে পারে যা পৃথিবীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও ওলটপালট করে দিতে পারে।
কতটা তীব্র বা বিস্তৃত হতে পারে এই প্রভাব? এটি বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নষ্ট করে দিতে পারে, এর চার্জযুক্ত কণা কম্পিউটারের র্যাম ও এসএসডি’র (সলিড স্টেট মেমরি) ডেটা নষ্ট করে দিতে পারে।
স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সৌর ঝড় ঘটেছিল ১৮৫৯ সালে। ক্যারিংটন ইভেন্ট নামে ওই ঘটনায় বিভিন্ন টেলিগ্রাফ স্টেশনও নিরাপদ ছিল না বলে জানিয়েছে নাসা।
নক্ষত্রসংশ্লিষ্ট এইসব ঘটনা থামানো সম্ভব না হলেও এগুলোর পূর্বাভাষ পাওয়া গেলেও তুলনামূলক ভালো উপায়ে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়। সাধারণত পৃথিবীবাসী জানার আগেই এগুলো পৃুথবীতে আছড়ে পড়ে। তবে, এমন বিরল ও বিশৃঙ্খল ঘটনা থামানোর উপায় কী?
নাসা, ‘ইউএস জিওলজিকাল সার্ভে’ ও ‘ফ্রন্টিয়ার ডেভেলপম্যান্ট ল্যাব’-এর ‘ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জি’র যৌথ এক প্রকল্প বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে দেখছে। এর জবাবও তুলনামূলক প্রচলিত, তা হলো ‘মেশিন লার্নিং’ ব্যবস্থা।
দলটি সূর্যের পর্যবেক্ষণকারী একাধিক স্যাটেলাইট থেকে সৌর অগ্নিফুল্কির তথ্য সংগ্রহ করেছে। সেইসঙ্গে প্রযুক্তিকে প্রভাবিত করে এমন ভূ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের মতো ঘটনাগুলো ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্টেশন থেকেও নজর রাখছে।
তারা এই ‘ডিপ লার্নিং মডেল’ এমনভাবে নকশা করেছেন যাতে বিভিন্ন ‘প্যাটার্ন’ কীভাবে একটিকে পরেরটির দিকে নিয়ে যায়। তারা এই ব্যবস্থার নাম দিয়েছেন ‘ড্যাগার’– যার মানে দাঁড়ায়, ‘ডিপ লার্নিং জিওম্যাগনেটিক পারটুরবেশন’।
এর নাম কিছুটা জটিল হলেও এটি ঠিকমতোই কাজ করে।
২০১১ ও ২০১৫ সালে পৃথিবীতে আঘাত করা ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়গুলোকে পরীক্ষামূলক ডেটা হিসাবে ব্যবহার করে দলটি খুঁজে পেয়েছে, ‘ড্যাগার’ দ্রুত ও সঠিকভাবে বিশ্বব্যাপী এগুলোর প্রভাব সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে পেরেছে। এতে আগের ব্যবস্থায় থাকা বিভিন্ন ত্রুটি এড়ানোর পাশাপাশি এর বিভিন্ন শক্তিও সমন্বিত করার কথা বলেছে নাসা।
পৃথিবীতে নির্দিষ্ট অবস্থানের স্থানীয় ভূ-চৌম্বকীয় পূর্বাভাস তৈরির উদ্দেশ্যে আগের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক মডেলগুলো এআই’র সহায়তা নিয়েছে। আর যেসব মডেল এআই ব্যবহার করেনি, সেগুলো বৈশ্বিক অনুমান দেখাতো, যা তেমন সময়োপযোগী ছিল না।
ড্যাগারই প্রথম এআই’র দ্রুত বিশ্লেষণকে মহাকাশ ও বৈশ্বিক বাস্তব পরিমাপ ব্যবস্থাকে সমন্বিত করেছে। আর এর প্রায়শই ভবিষ্যদ্বাণী আপডেটের সুবিধা বিশ্বব্যাপী সাইটগুলোকে দ্রুত ও সুনির্দিষ্ট পরিমাপ দেখাতে সহায়তা দেবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে টেকক্রাঞ্চ।
ওপেন সোর্স হিসেবে থাকা ড্যাগার মডেল সম্পর্কে বিস্তারিত পাওয়া যাবে ‘স্পেস ওয়েদার’ জার্নালে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।