কোথায় যেন পড়েছিলেন একবার- শচীন টেন্ডুলকারের বাবা ছেলের খেলা দেখতে মাঠে যেতেন না। একটা কালো বিশ্বাস ছিল তার- মাঠে গেলে ছেলে ভালো করবে না। শচীনের বাবার ওই বিশ্বাসটিই মনে গেঁথে গিয়েছিল খন্দকার মাশরুর রেজার। মাগুরায় একবার লোকের মুখে শুনে একবারই সাকিবের খেলা দেখতে গিয়েছিলেন। এরপর বাবাকে আর কখনোই মাঠে আনতে পারেননি সাকিব। কিন্তু এবার অনেকটা জেদ করেই বাবা আর মাকে ইংল্যান্ড নিয়ে এসেছেন তার বিশ্বকাপের খেলা দেখাতে।
কালো বিশ্বাসটি ভেঙেছে মাশরুর রেজার। তিনি মাঠে বসেই দেখেছেন ছেলের সব অসামান্য কীর্তি। মাশরাফির বাবা স্বপন মুর্তজাও এসেছেন গ্যালারিতে বসে বাংলাদেশের জয়ের সাক্ষী হতে।
কিন্তু যে বাবাকে সব সময় গ্যালারিতে দেখা যায়, টাইগারদের জয়ের পর যিনি কিশোর বয়সে ফিরে যান-সেই মুশফিকুর রহিমের বাবা মাহবুব হামিদ তারা, তিনি কোথায়? হোয়াটসঅ্যাপে যখন তাকে পাওয়া গেল তিনি তখন ঢাকায় ভিসা অফিসের দিকে। কাগজপত্র জমা দিয়েছেন, ৩০ জুন নাগাদ বার্মিংহাম পৌঁছানোর কথা তার। অপেক্ষা এখন ভিসাটা সময়মতো পেলেই হয়। ‘কাজের চাপে আগের ম্যাচগুলোতে এবার আসতে পারিনি। মুশফিক বলেছে, ওর মাকেও সঙ্গে করে নিয়ে আসতে। আমার মন বলছে ভারতের সঙ্গে ম্যাচটি জিতবে বাংলাদেশ।’
এতক্ষণ বাবা-মায়েদের কথা বলার কারণ, তারাও টাইগারদের সুখী পরিবারের সদস্য। তাদের কেউই হয়তো ড্রেসিংরুমের ওসব ক্রিকেটীয় ব্যাপারে নেই। তবে টাইগারদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে, শুধুই ক্রিকেটে মনোযোগ ধরে রাখতে তাদের উপস্থিতি অনেক জোরালো ভূমিকা রাখে। ভালো করলে চারপাশে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীর ভিড় থাকে, কিন্তু কোনো দিন খারাপ করলে বাবা-মার কাছেই তারা আশ্রয় পান। যেটা পরের ম্যাচের জন্যও তাদের মানসিক প্রস্তুতিটা এগিয়ে রাখে। স্ত্রীর সেবা কিংবা সন্তানের এতটুকু আদর তাদেরকে মানসিকভাবে আরও দৃঢ় করে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কথাই যদি বলা যায়, ক্রাচে ভর করা এই ক্রিকেটারকে হয়তো ফিজিও ট্রিটমেন্ট দিচ্ছেন, কিন্তু তাকে যত্ন নিয়ে সেবা করছেন তার স্ত্রী।
বিশ্বকাপের মতো লম্বা সফরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়েছেন মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক আর মাহমুদুল্লাহ। মোহাম্মদ মিঠুনের স্ত্রী-সন্তানও এসে ফিরে গেছেন। দু’দিন আগে এসেছেন মিরাজের স্ত্রী। বার্মিংহামের টিম হোটেলে উঠেছেন লিটন দাসের স্ত্রীও। বার্মিংহামের হায়াত রিজেন্সিতে এখন টাইগারদের সুখের সংসার। শুরুতে ঈদ একসঙ্গে করার আনন্দ, তারপর এখন শুধুই এই শহর থেকে ওই শহরে ঘোরা। টিম হোটেলে সবাইকে নিয়েই একটা সুখী পরিবার। যেখানে ছোটদেরও একটা দল হয়ে গেছে।
মাশরাফির কন্যা হুমাইরা, ছেলে সাহিল, রিয়াদের ছেলে, সাকিবের কন্যা আলাইনা- এরা সবাই একটি দল হয়েই নিজেদের মধ্যে খেলাধুলা করে। তবে এই দলের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য মুশফিকপুত্র শাহরোজ রহিম মায়ান। দু’বছরের মায়ান এখন সবচেয়ে আদুরে। সারাক্ষণ সবার কোলে কোলে। মাশরাফির কোলে গেলেই খুনসুটি তার। মুশফিকের স্ত্রীর হাতের রান্নাও বেশ প্রশংসা পেয়েছে। ইংল্যান্ডে আসার পর কেএফসি কিংবা ম্যাকডোনাল্ডসে হালাল খাবার খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
সে কারণে মুশফিক-মাশরাফিদের কেউ কেউ বাজার করে আনছেন স্ত্রীদের দেওয়া ফর্দ মিলিয়ে মিলিয়ে। এতদিন বাইরে থাকলে স্টেক খাবারে অরুচি হয়ে যায়। তাই টিম হোটেলে টাইগারদের সংসারের হেঁসেলটা মাঝে মাঝে সামলাতে হচ্ছে ছয় বউকে।
‘এটাই আমার শেষ বিশ্বকাপ। তাই পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। এভাবে হয়তো আর কখনও আসা হবে না। তাছাড়া এত লম্বা সময় বাড়ির বাইরে থাকা, সন্তানদের জন্যও মন কেমন করে। তাই সবাইকেই বলা হয়েছে, যারা পরিবার আনতে চায় তারা নিয়ে আসতে পারে।’ টিম হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে মাশরাফি এ কথা বলতে বলতেই ছেলে সাহিল এসে হাজির। অভিযোগ তার- মা বকেছে…। ছেলেকে কোলে নিয়ে মাশরাফির সান্ত্বনা- মাকে বকে দেবো…।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।