আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি ফোর্বস ম্যাগাজিন বিশ্বজুড়ে যে ধনী ব্যক্তিদের তালিকা দিয়েছে, সেখানে একটা বিষয় বেশ নজর কেড়েছে, তা হলো তালিকায় বেশ কিছু অপরিচিত তরুণ মুখ। তাদের অনেকেই এখনও কাজই করতে শুরু করেনি বা কোন ক্যারিয়ারে ঢোকেনি। কিন্তু যথেষ্ট সুবিধা তারা পেতে যাচ্ছে, কারণ ২০০৯ সালের পর প্রথমবার সমস্ত বিলিওনিয়ার যাদের বয়স ৩০ এর নিচে, তারা সবাই উত্তরাধিকার সূত্রে এই সৌভাগ্যের মালিক হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার
সবমিলে যে ২৫ জন বিলিওনিয়ার তালিকায় দেখা যাচ্ছে যাদের বয়স ৩৩ বছর বা তার কম, এদের মধ্যে মাত্র ৭ জন নিজ চেষ্টায় ও পরিশ্রমে সম্পদের মালিক হয়েছেন।
আসলে বহুদিন ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে বিষয়টা ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছিল: “দ্য গ্রেট ওয়েলথ ট্রান্সফার” অর্থাৎ একটা সময় বিশ্বের বেশিরভাগ ধনীর সম্পদের হস্তান্তর হবে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে, সেটারই ইঙ্গিত ফোর্বসের এই তালিকায় এত তরুণ উত্তরাধিকারের উপস্থিতি।
ধারণা করা হয় যে ২০২৯ সালের শেষ নাগাদ, ৮.৮ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি অর্থ বর্তমান বিলিওনিয়ার থেকে তাদের পরবর্তী উত্তরাধিকারের হাতে যাবে।
সুইস ব্যাংক ইউবিএসের এস্টেট প্ল্যানিং ম্যানেজার আইনজীবি ইউরি ফ্রেইতাস বলেন, “আর আমরা কিন্তু শুধু টাকা পয়সার কথা বলছি না, একইসাথে কোম্পানিরও হাতবদল ঘটবে।”
এই জগতে নিজের ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায়, ফ্রেইতাস একমত হন যে বৈশ্বিক সম্পদের ‘গ্রেট ট্রান্সফার’ এরইমধ্যে বেশ দ্রুতগতিতেই এগিয়ে চলছে, আর বিশ্বের বিলিওনিয়ার এখন যে কোন বয়সেই, একটু তাড়াতাড়িই, সম্পদ পরবর্তী প্রজন্মকে দিয়ে দিচ্ছে।
তরুণ উত্তরাধিকাররা কী মনে করে?
প্রজন্ম নিয়ে যে কোন বিতর্কের মতোই এখানেও সব ক্ষেত্রের পেশাদাররাই এসব তরুণ উত্তরাধিকারদের আচরণ অনুমানের চেষ্টা করছে, যে তারা বিশ্ব বাণিজ্যে কী ধরণের পরিবর্তন আনতে পারে।
বিশেষ করে ব্যাংকগুলো, যারা বছরের পর তাদের ক্রেতার সম্পদ, অর্থ ও শেয়ার তৈরিতে সাহায্য করার পর এখন তাদেরই হারানোর ঝুঁকিতে আছে।
এটা এরইমধ্যে জানা যাচ্ছে যে এই নতুন প্রজন্মের বিলিওনিয়াররা অনেক বেশি সামাজিকভাবে সংযুক্ত, অনেক বেশি ডিজিটাল।
তাদের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে অন্তত এটা বোঝা যায় যে তারা তাদের বিনিয়োগ এই পৃথিবীর জলবায়ু ও সমাজে কী প্রভাব ফেলছে সে ব্যাপারে তাদের বাবা-মার চেয়ে বেশি চিন্তা করে।
কনসাল্টিং ফার্ম ইওয়াই তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ধারণা করে যে মিলেনিয়াল বিনিয়োগকারীরা, যে সমস্ত কোম্পানি সমাজ ও পরিবেশের পরিবর্তনে কাজ করে তাদের ওখানে বিনিয়োগের ব্যাপারে দ্বিগুন আগ্রহী।
এছাড়াও ১৭% মিলেনিয়াল বিনিয়োগকারী বলছে যে তারা সে সমস্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে যারা পরিবেশ, সমাজ ও সুশাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করে, যেটা নন মিলেনিয়াল বিনিয়োগকারীদের বেলায় ছিল ৯%।
আমরা কি এখন এই নতুন বিলিয়নিয়ারদের থেকে আশা করতে পারি যে তারা পৃথিবীতে পরিবর্তন আনবেন? যেখানে আরও অনেক সমস্যার মধ্যে রয়েছে কিছু সংখ্যক পরিবারের হাতেই বিশ্বের সিংহভাগ সম্পদ থাকা।
ডোনেশনের ব্যাপারে একটু কম আগ্রহী
ইউবিএসের এক রিপোর্টে দেখা যায়, অনেক হাই-প্রোফাইল বিলিওনিয়ার ব্যবসায়ী যদিও তাদের সম্পদের একটা বিরাট অংশ দান করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাদের উত্তরাধিকাররাও একই পথে হাঁটবে কি-না সে বিষয়টি জানা যায় না।
এতে বলা হয়, “যেখানে দুই তৃতীয়াংশ (৬৮%) প্রথম প্রজন্মের বিলিওনিয়ার বলে যে তাদের সেবামূলক কাজের লক্ষ্য পূরণ এবং পৃথিবীতে একটা অবদান রেখে যাওয়াই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য, সেখানে এক তৃতীয়াংশেরও কম (৩২%) উত্তরাধিকার প্রজন্মকে একই উদ্দেশ্যের কথা বলতে শোনা যায়।”
ইউবিএসের অভিজ্ঞতা বলে যে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদ দান করার ব্যাপারে নতুন প্রজন্ম খুব একটা আগ্রহ দেখায় না এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তারা হয়তো পারিবারিক ফাউন্ডেশনে বিনিয়োগ করে থাকে।
“তবে যেসব কোম্পানি পরিবেশগত ও সামাজিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ ও চালনার আগ্রহ দেখা যায় বাণিজ্যিক এবং কল্যাণকর দুই উদ্দেশ্যেই,” রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। কয়েকজন উত্তরাধিকারের সাথে কথা বলে লা ইনভেস্টিগেশন ডি ব্যাঙ্কো।
দ্বিতীয় প্রজন্মের একজন বিলিওনিয়ার বলেন, “যেহেতু আমার বাবা তেল, গ্যাস ও খনি নিয়ে কাজ করেছে, আমি এখন এই পুরো ব্যবসাটাকে নতুনভাবে সাজানোর চেষ্টা করছি, প্রযুক্তির দিকে যাচ্ছি যাতে পরিবেশে প্রভাবটা কম পড়ে।”
তিনি আরো বলেন, “কিন্তু আমি এ সমস্ত ব্যবসা রাতারাতি বিক্রি করে দিতে পারবো না। এটা পারিবারিক ব্যবসার একটা যাত্রা, আমি যার হাল ধরি মাত্র কয়েক বছর আগে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।