আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তায় বড় বড় দেশগুলোর নেতারা বিভিন্ন বার্তা দিয়েছে। চলুন জেনে নেই কে কী বললেন-
কখনো পিছু হটবে না রাশিয়া
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়া কখনো পিছু হটবে না। রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, ক্রেমলিন থেকে রুশ নাগরিকদের উদ্দেশে নতুন বছরের ভাষণে এ কথা বলেছেন। রোববার মধ্যরাতের কিছু আগে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে আরও বলেছেন, আমরা বারবার প্রমাণ করেছি, আমরা সবচেয়ে কঠিন সমস্যার সমাধান করতে পারি। আমরা কখনই পিছপা হব না, কারণ এমন কোনো শক্তি নেই যা আমাদের আলাদা করতে পারে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, পুতিন তার ভাষণে জাতীয় ঐক্যের ওপরও জোর দিয়েছেন।
ভাষণে রুশ নাগরিকদের সংহতি, করুণা এবং দৃঢ়তার কথা ব্যক্ত করেছেন পুতিন। সামনের সারিতে যুদ্ধরত সেনাদের প্রশংসা করে বলেছেন, আমরা তোমাদের জন্য গর্বিত, তোমরা বীর, তোমরা সমগ্র জনগণের সমর্থন অনুভব কর। এএফপি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, পুতিন বক্তৃতার কোথাও ইউক্রেনের নাম উল্লেখ করেননি। যদিও দেশে প্রায় দুই বছরের দীর্ঘ যুদ্ধ তার মন্তব্যের কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল। গত বছরের তুলনায় মস্কোতে এই বছর উৎসবের আমেজ অনেকটা কম ছিল। থেমে নেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। বছরের শুরুর দিনেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। রোববার নতুন বছরের ভাষণে বলেছেন, পরের বছর ইউক্রেনের অস্ত্রাগারে কমপক্ষে ১০ লাখ অতিরিক্ত ড্রোন থাকবে। পাশাপাশি পশ্চিমা অংশীদারদের থেকে সরবরাহ করা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানও থাকবে। পাইলটরা ইতোমধ্যেই এফ-১৬ জেটগুলোকে আয়ত্ত করছে বলেও জানান তিনি। টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে ইউক্রেনীয় আর্টিলারি এবং ফাইটার জেটের ক্লিপ দেখানো হয়েছে।
অবশ্যই এক হবে চীন-তাইওয়ান
ভূখণ্ড নিয়ে চীন-তাইওয়ানের দ্বন্দ্ব বহু শতাব্দীর। তাইওয়ানকে বরবারই চীনের অংশ বলে মনে করে বেইজিং সরকার। অন্যদিকে তাওয়ান নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র বলে দাবি করে। দ্বীপরাষ্ট্রটিকে নিজের অন্তর্ভুক্ত করতে একাধিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে চীন। দিয়েছে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি। এমনকি তাইওয়ানের আকাশে সামরিক বিমান পাঠিয়ে ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ও দিয়েছে বেইজিং। বছরের শুরুতে মৌখিকভাবে আরও একবার এ কথাই স্মরণ করিয়ে দিলেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। রোববার বর্ষবরণ উৎসবে চীন তাইওয়ানের একীভূত হওয়া নিয়ে এ বার্তা দেন তিনি। তাইওয়ানের নির্বাচনের কিছুদিন আগেই এমন মন্তব্য করলেন শি। বিবিসি, এএফপি।
আগামী ১৩ জানুয়ারি তাইওয়ানের সংসদীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ঠিক এমন সময়ে চীন-তাওয়ানের একত্রীকরণের বিষয়টি সামনে এনেছে বেইজিং সরকার। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ওই বক্তৃতায় সামরিক হুমকির কোনো উল্লেখ করেননি শি। বলেছেন, ‘মাতৃভূমির পুনর্মিলন একটি ঐতিহাসিক অনিবার্যতা।’ আরও বলেন, ‘তাইওয়ান প্রণালির উভয় দিকের দেশপ্রেমিকদের একটি সাধারণ লক্ষ্যে আবদ্ধ হওয়া উচিত এবং তাদেরও চীনা জাতির পুনরুজ্জীবনের গৌরবে অংশীদার হওয়া উচিত।’ প্রেসিডেন্ট শি’র মন্তব্যের পর মুখ খুলেছেন তাইওয়ানের প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। তাইপেইতে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে নববর্ষের সংবাদ সম্মেলনে শি’র বক্তৃতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সাই বলেন, চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্ক গণতন্ত্রের নীতির ওপর ভিত্তি করে। তিনি বলেন, ‘এটি সিদ্ধান্তে তাইওয়ানের জনগণের যৌথ ইচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি, আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশ।’ এমনকি চীনকে আসন্ন নির্বাচনের ফলাফল এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কথাও বলেছে তাইওয়ান সরকার। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক জটিলতায় আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে তাইওয়ান সরকার। এমনকি দেশটির সমর্থকরা আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থাকে সর্বজনীন করতে সাহায্য করবে বলেও জানা গেছে।
বর্ষবরণ মঞ্চেও যুদ্ধ প্রস্তুতির আহ্বান কিমের
উত্তর কোরিয়ার পিয়ংইয়ংয়ের বিশাল স্টেডিয়াম ‘১ মে’তে নতুন বছর উদ্যাপন করেছেন দেশটির নেতা কিম জং উন। সোমবার আনন্দঘন এ অনুষ্ঠানে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানালেন তিনি। পাশাপাশি বর্ষবরণের এ মঞ্চে এদিন সেনাদের যুদ্ধ প্রস্তুতির নির্দেশও দেন তিনি। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন সংঘাতমূলক পদক্ষেপের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য তিনি তার দেশকে অপ্রতিরোধ্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান।
গত সপ্তাহে শাসক দলের পাঁচ দিনের বৈঠকের শেষদিন শনিবার কিম বলেছিলেন, আরও তিনটি গোয়েন্দা কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করবে তার দেশ। পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার বাড়াবেন এবং এ বছরই আক্রমণাত্মক ড্রোন তৈরি করবেন। নতুন বছরের ভাষণেও সে মন্তব্যেরই পুনরাবৃত্তি করেন তিনি। সোমবার এএফপির খবরে বলা হয়েছে, কিম চলতি বছরের নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে অস্ত্র পরীক্ষা বাড়াবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ন্যাম সুং-উক বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি পুনরায় নির্বাচিত হন তাহলে উত্তর কোরিয়া যা চায় তা পাবে না। তবে ট্রাম্পের জয় কূটনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে বলে তিনি মনে করেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সির (কেসিএনএ) প্রতিবেদনে শনিবার কিমকে উদ্বৃত করে বলা হয়- ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। যদি কেউ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে উসকানিমূলক আচরণের পথ বেছে নেয় তাহলে তারা (উ. কোরিয়ার সেনাবাহিনী) কোনো দ্বিধা ছাড়াই সব কঠিন উপায় দিয়ে শত্রুদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে পারে।’
যে কোনো দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রোববার নতুন বছরের বার্তা দিয়ে বাইডেন বলেছেন, প্রত্যেকের একটি স্বাস্থ্যকর, সুখী এবং নিরাপদ নববর্ষ কাটুক। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের সেন্ট ক্রোইক্স দ্বীপ থেকে মার্কিন রিপোর্টার রায়ান সিক্রেস্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় এ শুভেচ্ছা বার্তা দেন।
বাইডেন বলেছেন, আমি ভালো অনুভব করছি। কারণ আমেরিকান জনগণ জেগে উঠেছে। মহামারির সঙ্গে একটি কঠিন সময় পার করে আবার আমরা উঠে দাঁড়িয়েছি। বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমরা যে কোনো দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছি। ২০২৩ সালের কথা উল্লেখ করে বাইডেন বলেছেন, মানুষ এখন সহজেই জীবিকা নির্বাহের পথ বেছে নিতে পারে। জিল বিাইডেনও উৎসাহী বার্তা দিয়ে বলেছেন, আমি সবসময় আমার শিক্ষার্থীদের বলব, আপনারা ইতিবাচক, আশাবাদী এবং একে অপরের প্রতি সদয় হন। বাইডেন গত বছরও সেন্ট ক্রোয়েক্সে পরিবারের সঙ্গে নতুন বছরও কাটিয়েছিলেন। তবে এই বছরে ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাইডেন। সীমান্ত সংকটের মধ্যে তার ভ্রমণবিলাস মেনে নিতে পারছেন না বিরোধীরা। মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্ত পরিস্থিতি পরিচালনা করার জন্য বাইডেন ডানদিক থেকে বারবার সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। হোয়াইট হাউজ এ সমালোচনার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।