জুমবাংলা ডেস্ক: বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের টানা দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এর পরও দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কোরবানির ঈদ এগিয়ে এলেও এখনো আগের বর্ধিত দামেই ভোজ্যতেল কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানিকারকরা দাম কমালেও সরকারের বেঁধে দেয়া দামের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে তার কোনো সুফল মিলছে না। বণিক বার্তার প্রতিবেদক সুজিত সাহা-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
টনপ্রতি কয়েকশ ডলার কমার পর ১৭ জুন বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত পাম অয়েলের মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৩১৯ ডলারে। সর্বশেষ গতকাল তা আরো কমে ১ হাজার ২৭১ ডলারে নেমে আসে। সে হিসেবে পাঁচদিনে পণ্যটির দাম কমেছে টনপ্রতি ৪৮ ডলার। অন্যদিকে ১৭ জুন সয়াবিনের দাম ছিল টনপ্রতি ১ হাজার ৬৩০ ডলার। গতকাল তা নেমে আসে ১ হাজার ৬১৭ ডলারে। পাঁচদিনে পণ্যটির দাম কমেছে টনপ্রতি ১৩ ডলার। বিশ্বের প্রধান ফিউচার মার্কেটগুলোর বাজার বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সামনের দিনগুলোয়ও এ দরপতন অব্যাহত থাকবে।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারি দর নির্ধারণের পর পাম অয়েলের মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) দাম প্রায় এক সপ্তাহে ৬ হাজার ২০০ থেকে ৬ হাজার ৩০০ টাকায় লেনদেন হয়েছিল। তবে বিশ্ববাজারে টানা দরপতনের ফলে গত এক সপ্তাহে দাম কমে পাম অয়েলের সরবরাহ আদেশ (এসও) লেনদেন হয়েছে মণপ্রতি ৫ হাজার ৭৬০ টাকায়। যদিও মিলগেট থেকে সরাসরি উত্তোলনযোগ্য অবস্থায় তা কেনাবেচা হচ্ছে মণপ্রতি ৬ হাজার ২০০ থেকে ৬ হাজার ২৫০ টাকায়। পাইকারি ও মিলপর্যায়ে সয়াবিন তেলের দামেও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সরকারি দাম নির্ধারণের আগে খাতুনগঞ্জে এসওর ভিত্তিতে সয়াবিন তেল বিক্রি হতো মণপ্রতি সাড়ে ৭ হাজার টাকায়। মিলগেট থেকে তা সংগ্রহ করা যেত মণপ্রতি ৭ হাজার ৭০০ টাকায়। বর্তমানে দাম কমে এসওর ভিত্তিতে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৭ হাজার ১০০ থেকে ৭ হাজার ২০০ টাকায়। মিলগেট পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার ৫০০ টাকায়। যদিও খুচরায় বোতলজাত পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের দামে কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।
জানা গিয়েছে, ৯ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সুপার পাম অয়েলের দাম মিলগেটে ১৫৩ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৫৫ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৫৮ টাকা করা হয়। কিন্তু বর্তমানে তা পাইকারি পর্যায়েই বিক্রি হচ্ছে ১৬৮-১৭০ টাকায়। তবে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০-১৫ টাকা বেশিতে। এতে সরকারিভাবে দাম নির্ধারণের পরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ ভোক্তারা। একইভাবে খোলা সয়াবিনের ক্ষেত্রেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দাম গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক প্রদীপ কারন বণিক বার্তাকে বলেন, দেশে মোড়কজাত ভোজ্যতেলের ব্যবহার মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশেরও কম। বর্তমানে বিশ্ববাজারে দাম কমে যাওয়ায় ও দেশের বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় মিলগেট পর্যায়ে দাম অস্বাভাবিক কমেছে। আগের বেশি দামে কেনা পাম অয়েল ও সয়াবিন খোলা পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও কম দামে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। বিশ্ববাজারে দাম কমতে থাকায় নির্ধারিত মূল্যে ভোজ্যতেলের ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।
দেশীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার পাম অয়েল ও সয়াবিনের সর্বোচ্চ খুচরা ও পাইকারি দর নির্ধারণ করে দেয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে সাম্প্রতিক মূল্য সংশোধনের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। মধ্যস্বত্বভোগী ট্রেডিং ব্যবসায়ী ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা লাভ করলেও মিল মালিক ও খুচরা ক্রেতাদের বাড়তি দামে ভোজ্যতেল সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
শিকাগো বোর্ড অব ট্রেড (সিবিওটি), ইনডেক্স মুন্ডি ও ইনভেস্টিং ডটকম সূত্রে জানা গিয়েছে, ২২ জুন একদিনে পাম অয়েলের টনপ্রতি দাম কমেছে ৪৬ দশমিক ২৫ ডলার। লেনদেন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৭১ ডলারে। এছাড়া একই দিন সয়াবিনের দাম ৯ দশমিক ২৬ ডলার কমে ১ হাজার ৬১৭ দশমিক ৫৩ ডলারে স্থির হয়। এছাড়া মালয়েশিয়ান পাম অয়েলের টনপ্রতি বুকিং দর জুলাইয়ের জন্য ৪ হাজার ৭৮৪ রিঙ্গিত, আগস্টে ৪ হাজার ৬৭৪ রিঙ্গিত এবং সেপ্টেম্বরে সরবরাহযোগ্য পাম অয়েলের দাম ৪ হাজার ৬১৮ রিঙ্গিতে নেমে আসে। ফিউচার মার্কেটে দাম আরো কমার ইঙ্গিত থাকায় বিনিয়োগকারীরা এখন ভোজ্যতেলের কেনাবেচায় মাথা ঘামাচ্ছেন কম।
বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন দ্য চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ভোজ্যতেলসহ যেকোনো পণ্যের দাম টানা উত্থানের পর কমে স্থিতিশীলতায় ফিরবে। এটাই বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা অর্থাৎ সরকারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৮-১০ সালের দিকে বিশ্ববাজারের অস্থিরতায় ভোজ্যতেল আমদানি ও বিপণন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত দেশের জায়ান্ট বেশ কয়েকটি ভোজ্যতেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছিল। বিশ্ববাজারে বর্তমান দরপতনও আমদানিকারকদের বড় ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এতে পাইকারি ও মাঝারি শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও ভোক্তারা ঠকছেন।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঊর্ধ্বমুখী বাজারে সরকার নিয়মিত দাম সংশোধন করলেও পড়তি বাজারে দাম কমানোর ক্ষেত্রে অনীহা দেখাচ্ছে। তাছাড়া দীর্ঘ সময়ের জন্য দাম নির্ধারণ করে দেয়ার প্রবণতায় নিত্যপণ্যটির বাজারের স্বাভাবিক গতিশীলতা নষ্ট হয়ে পড়ছে। এছাড়া দেশে ভোজ্যতেল আমদানি ও বিপণন ব্যবস্থাকে ভোক্তাদের জন্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর দিকেও মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।